কৃষি: নানা দুর্যোগে ম্লান সাফল্য

কৃষিপ্রধান বাংলাদেশ। এ দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে মিশে আছে কৃষি খাত। বিদায়ী বছরে চারটি ঘূর্ণিঝড়, খরা, অতিবৃষ্টিসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বছরজুড়েই দেশের সম্ভাবনাময় কৃষি ছিল বিপদে। এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার সংকটে সারসহ নানা কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি কৃষককে বেশ ভুগিয়েছে। বছরের শেষ সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতায় ন্যায্যমূল্য না পেয়ে ক্ষতির শিকার হয়েছেন কৃষক।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় মোট জমি কম হলেও সম্প্রতি কৃষিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব পর্যায়ে ধান, পাট, কাঁঠাল, আম, পেয়ারা, আলু, সবজি ও মাছ উৎপাদনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বে ধান উৎপাদনে ৩য়, পাট উৎপাদনে ২য় ও রপ্তানিতে ১ম, সবজি উৎপাদনে ৩য়, আলু ও আম উৎপাদনে ৭ম, পেয়ারা উৎপাদনে ৮ম এবং মোট ফল উৎপাদনে ২৮তম স্থান অর্জন করেছে।

কৃষিতে সাফল্য বিবেচনায় প্রধান প্রধান কয়েকটি ফসলের ২০০৯ সালের সঙ্গে তুলনায় ২০২০ সাল পর্যন্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চালের উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৩ শতাংশ, গমের ৪৫ শতাংশ, ভুট্টার ৭৭৫ শতাংশ, আলুতে ১০১ শতাংশ, ডালে ৩৭৫ শতাংশ, তেলবীজে ৮১ শতাংশ, সবজির ক্ষেত্রে ৫৭৮ শতাংশ যা বিশ্বে অভাবনীয়।

এত সাফল্যের পরও কৃষি বার বার হোঁচট খাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের কৃষির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে বাড়ছে তাপমাত্রা। এ তাপমাত্রা বৃদ্ধি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চল থেকে বাংলাদেশে বেশি। যার বড় প্রভাব পড়ছে দেশের কৃষি খাতে। তাপমাত্রা বাড়ায় কৃষি খাতে ১৫ হাজার ৯৭০ মিলিয়ন ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। সে সঙ্গে বছরে প্রায় দুই মাস খরা যাচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্যাহত হচ্ছে খাদ্য উৎপাদন। তাপমাত্রা বাড়ার কারণে বাংলাদেশের কৃষি খাত ১৫ হাজার ৯৭০ মিলিয়ন সম্ভাব্য ঘণ্টা হারিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে আসে।

ইউরিয়া সারের দাম বাড়ানোয় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। এতে কৃষি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এরপর রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট। সবকিছু মিলে কৃষি খাতে উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। বেশি সমস্যায় আছেন বর্গাচাষিরা। সারের দাম বৃদ্ধি এবং অনাবৃষ্টিসহ শ্রমিক ব্যয় ও আনুষঙ্গিক যে ব্যয় হবে, তাতে বোরো চাষে লোকসান হবে। এর সঙ্গে তাদের নিজেদের শ্রমের মূল্য যুক্ত করলে লোকসানের পাল্লা আরও ভারী হবে। কিন্তু সারের দাম বাড়ানোয় দুশ্চিন্তার পড়েন কৃষকরা।

দুর্বল কৃষি বিপণন ব্যবস্থাপনা, ফসল কর্তন-উত্তর অধিক ক্ষতি, কৃষি কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য কৃষকের নিজস্ব মূলধনের অপ্রতুলতা, সীমিত প্রাতিষ্ঠানিক কৃষিঋণ, কৃষক সংগঠনের সক্রিয়তার অভাব, উপকরণ ব্যবহারের সীমিত দক্ষতা, রপ্তানি বাজারের চাহিদা পূরণের জন্য মানসম্মত পণ্য উৎপাদনের অপ্রতুল প্রযুক্তি, প্রতিকূল পরিবেশ উপযোগী প্রযুক্তির অপর্যাপ্ততা, বেসরকারি পর্যায়ে গবেষণা এবং উন্নয়নে অপর্যাপ্ত বিনিয়োগ। এ ছাড়া অবকাঠামোমূলক অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধা, কৃষিতে বহুমুখীকরণের অভাব, কৃষি উপকরণের মান নিয়ন্ত্রণে দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, কৃষি ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির অপর্যাপ্ত ব্যবহার, কৃষক ও উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণের অপ্রতুলতা, মানসম্পন্ন কৃষি উপকরণ উৎপাদন ও সরবরাহের অপর্যাপ্ততা, কৃষিজাত পণ্যের সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণের অপর্যাপ্ততা ও কৃষিপণ্যের পরিবহন ব্যবস্থার অপর্যাপ্ততা।

কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে খাদ্য চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশে মাটির অতিরিক্ত ব্যবহার, অবক্ষয়, দূষণ, লবণাক্ততা, জলবায়ু পরিবর্তন, মাটির পুষ্টি উপাদানের অবক্ষয়, মাটি ক্ষয় প্রভৃতি সমস্যা আছে। তা ছাড়া নগরায়ণ, শিল্পায়নসহ নানা কারণে দেশে বছরে কৃষি জমি কমছে শূন্য দশমিক ৪৩ শতাংশ। সরকার মাটির টেকসই ব্যবহারের জন্য স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে ও বাস্তবায়ন করছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //