আদর্শের বাতিঘর ভাষাসৈনিক মো. জাহিদ হোসেন মুসা

গোড়ার কথা
উনিশ শতকের গোড়ার দিকে বাংলা অঞ্চল ছিল ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের একটি প্রধান কেন্দ্র। তখন ছাত্র রাজনীতি বাংলার রাজনীতিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করে। এ সময়ের প্রথম দিকে বিপ্লবী আন্দোলন, স্বদেশি আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ছাত্র রাজনীতি একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পরিগ্রহ করে; কিন্তু এর আগে যে ছাত্র রাজনীতি একেবারেই ছিল না তা বলা যাবে না। পাশ্চাত্য শিক্ষার একটি বৌদ্ধিক প্রতিক্রিয়া হলেও তৎকালীন ইয়ং বেঙ্গল ছিল ছাত্রদেরই একটি আন্দোলন। এ দলের তরুণরা প্রচলিত নিয়ম-আচারবিরোধী ছিল, এখন এ ধরনের বিষয়কে সংস্কারপন্থিও বলে অভিহিত করা হয়। বাস্তবতা হলো এ সময় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ ছিল একেবারে অন্যায়। এরপর নানা চড়াই-উতরাই শেষে এসে দাঁড়াই বিংশ শতকের প্রথমভাগে।

১৯১৮ সালের নভেম্বর মাসে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সদ্য সমাপ্ত হয়েছে। ঠিক তার পরের মাস ডিসেম্বরে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের সম্পাদনায় কলকাতা থেকে সওগাত প্রথম প্রকাশ হয়। ১৯২১ সালের মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত পত্রিকা চালু ছিল। এ সময়ে নজরুল ইসলামের কবিতার সুনাম চারদিকে। এরপর পুরনো কাব্য বলয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ত্রিশের দশকের আন্দোলন জারি হয়েছে। বাংলা কবিতার এক নবদিগন্ত উন্মোচন হয়েছে এ সময়ে। চারদিকে আন্দোলন এবং দেশভাগের দামামা। পূর্ববঙ্গে তখন আন্দোলন হচ্ছে নানারকম। নেতাজী সুভাষ বসু আসার ফলে আন্দোলন যেন আরও চাঙ্গা হয়। 

তখন ১৯৩২ সাল
তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি। ব্রিটিশ শাসনাধীন বাংলার যশোহর জেলার ঝিনাইদহ মহকুমার (বর্তমানে জেলা) কালীগঞ্জের পাইকপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিল এক শিশু। সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া এ শিশুটির নাম মো. জাহিদ হোসেন মুসা মিয়া। তার মায়ের নাম জবেদা খাতুন এবং পিতার নাম লতিফ মিয়া। পিতা ছিলেন তখনকার দিনের একজন অভিজাত মুসলিম জমিদার। জমিদার পরিবারে কঠোর নিয়ম-কানুন না হলেও নিয়মের একটি বেড়াজাল ছিল চারদিকে। আর পারিবারিক আবহ ছিল বনেদি। তৎকালীন সময়ে এ পরিবারের মানুষদের ঝিনাইদহসহ অত্র অঞ্চলে বিশেষ সামাজিক প্রভাব ও প্রতিপত্তি ছিল। জানা যায়, সে সময়ে এ পরিবারের লোকজন ঘোড়ায় চরে যাতায়াত করতেন। 

ছেলেবেলার দিনগুলো
ছোট্ট বালক মুসা, তিনি ছিলেন ছেলেবেলা থেকেই অত্যন্ত নম্র-ভদ্র আর মিশুক। সবকিছু শেখার প্রতি ছিল তার অধিক আগ্রহ। প্রকৃতিকে ভালোবাসতে শেখেন তিনি ছেলেবেলা থেকেই। মা-বাবার আদরে কাটে তার ছেলেবেলা। বনেদি অভিজাত মুসলিম পরিবারের সন্তান হওয়ায় ছেলেবেলা থেকেই পারিবারিক নিয়ম, নীতি আর আদর্শ তাকে তৈরি করেছিল চমৎকার এক মানস গঠনে। মানুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, দেশের প্রতি দায়িত্বশীল এবং মানুষকে ভালোবাসার এক প্রগাঢ় অভ্যাস আত্মস্থ করেছিলেন তিনি সেই ছেলেবেলাতে। আর এই ছেলেবেলাতেই তিনি সমাজ-চিন্তার প্রতি আকৃষ্ট হন। তখন থেকেই তিনি দেখতেন বামধারার আদর্শের রাজনীতিবিদদের। বলা চলে তিনি বড় হচ্ছেন এই ধারার রাজনীতিকদের দেখে দেখে। ফলে সেই ছেলেবেলাতেই এদের প্রতি একটা টান অনুভব করেন। 

সংস্কৃতিপ্রেমী
সেই আদর্শ মানস গঠনের বালক পরবর্তীকালে হয়ে ওঠেন বৃহত্তর যশোরের ৫২’র ভাষা আন্দোলনের সংগঠক এবং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রাজনীতিক ও সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। ভাষাসৈনিক মো. জাহিদ হোসেন মুসা মিয়া এ অঞ্চলের সকলের কাছে পরিচিত ছিলেন মুসা মিয়া নামে।

ব্রিটিশ ভারতে জন্ম নেওয়া এই মানুষটি ছাত্রজীবন থেকে রাজনৈতিক আবহের মধ্যেই বড় হয়ে ওঠেন এবং এক সময় নিজেও রাজনীতিতে সক্রিয় হন। তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল ঝিনাইদহের ওয়াজির আলী জুনিয়র মাদ্রাসায়। এরপর ভর্তি হন বাড়ির পাশের ইংলিশ হাই স্কুলে, সেখান থেকে তিনি ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। স্কুলপড়ুয়া মুসা মিয়া যোগ দিয়েছিলেন স্কাউটিংয়ের মতো সামাজিক দায়িত্বশীল সংগঠনে। স্কাউটিংয়ের মধ্য দিয়ে তিনি নিজেকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নেন সমাজসেবা এবং আর্তের প্রতি, দুস্থদের প্রতি একজন খাঁটি মানুষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করার জন্য। এ ছাড়া এ সময় তিনি যুক্ত হয়েছিলেন স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও। তখন তিনি সিরাজ-উদ-দৌলা নাটকে নামচরিত্রে অভিনয় করেন। বালক জাহিদ হোসেন মুসা ছোটদের জন্য মঞ্চস্থ হওয়া নাটকগুলোয় ওই সময়ে নিয়মিত অভিনয় করতে থাকেন। তিনি গান করতে ভালোবাসতেন। বিশেষত দেশপ্রেমের গান ছিল তার বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্র।

সংগঠন ও সাহিত্য
ম্যাট্রিক পাস করার পর তিনি তৎকালীন ঢাকার জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন; কিন্তু তরুণ জাহিদ হোসেন মুসার ঢাকার জীবন ভালো লাগেনি। ফলে তিনি ঢাকা ছেড়ে চলে আসেন নিজের অঞ্চলে। পরে ভর্তি হন যশোর এমএম কলেজে; কিন্তু দেখা যায় তার প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ায় মন নেই। সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং রাজনীতির প্রতি প্রবল ঝোঁক লক্ষ্য করা যায় তার কর্মকাণ্ডে। তার কবিতা ভালো লাগত, গান ভালো লাগত। তিনি এবার মনোযোগী হন কবিতা ও গান রচনায়। ভালো আবৃত্তি করতে পারতেন। গানের কণ্ঠও ছিল সুললিত। এই সময়ে তিনি যোগ দেন ‘যশোর সাহিত্য সংগঠন’ আর ‘দিশারী’ নামক একটি সাহিত্য পত্রিকার সংগঠক হিসেবে। কবিতার প্রতি নিবেদিতপ্রাণ এই মানুষটির একটি মাত্র কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে। গ্রন্থটির নাম ‘অনেক দেরীতে’।

৪৭ সালের পর
শৈশবে পাঠশালা পর্বেই নিভৃত পল্লীর নৈসর্গিক সৌন্দর্য তাকে বিমোহিত করত। কৈশোর থেকেই তাই ভক্ত হয়েছিলেন কবিগান, পালাগান এবং যাত্রাপালার। লোকজ সাংস্কৃতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠার কারণে শিশুর সারল্যে ভরা ছিল তার প্রাণ। তবুও সেই ছোট্ট মুসা মিয়া হয়ে ওঠেন দেশমাতৃকার নবউত্থান বার্তার প্রেরক।

৪৭-পরবর্তী সময়ে ঝিনাইদহের রাজনীতিতে প্রগতিশীল ধারার তিনিই পথদ্রষ্টা। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও তৎকালীন বাম রাজনীতির প্রবল জোয়ারের ঢেউ সে সময়ের মফস্বল শহর ঝিনাইদহেও আছড়ে পড়েছিল। ভাষাসৈনিক জাহিদ হোসেন মুসার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ব্রত সেখান থেকেই। রাজনৈতিক কারণে এ সময় থেকেই তিনি উপমহাদেশের বরেণ্য রাজনীতিবিদদের সাহচর্য লাভ করতে শুরু করেন। 

যুবক বয়সে ভাষা আন্দোলনের প্রবল জোয়ারে তিনি হাল ধরেছিলেন যশোরের সংগঠক হিসেবে। হয়ে ওঠেন ভাষাসংগ্রামী। ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি তার একটি রচনায় বর্ণনা করেন, ‘ঢাকাকেন্দ্রিক ভাষার লড়াইয়ের কিছু ছাপ এই অঞ্চলেও পড়েছিল তখন। সব সংগঠনের কর্মীরা মিলেই তখন এ নিয়ে মিছিল মিটিং করত। আলমগীর সিদ্দিকী, আফছার সিদ্দিকী প্রমুখ তখন খুব সক্রিয় ছিলেন। আলমগীর সিদ্দিকী খুবই ভালো একজন সংগঠক ছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টির বিশেষ উৎসাহ ছিল এসব কাজে। আবদুল হক সাহেবদের অতিরিক্ত প্রভাবে কিছুদিন পরই তাদের সব কার্যক্রম গোপনে চলে যায়। তবে আমরা যে সব ছেড়ে দিয়েছিলাম, তা নয়। গোপনেই যোগাযোগ থাকত। কাজও করেছি ওভাবেই।’

ঝিনাইদহে ভাষা আন্দোলন
এরপর তরুণ মুসা মিয়ার ওপর দায়িত্ব আসে ঝিনাইদহে ভাষা আন্দোলনের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড এগিয়ে নেওয়ার জন্য। তিনি তখন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের যশোর জেলা শাখার প্রচার সম্পাদক ও কলেজছাত্র। এদিকে আন্দোলনমুখী ছাত্ররা তখন মুসা মিয়ার ঝিনাইদহে আগমনের প্রত্যাশায় দিন গুনতে থাকেন। মুসা মিয়া না আসায় কোনো কাজই ঠিকমতো এগোচ্ছিল না। না মিছিল মিটিং, না গণস্বাক্ষর আদায় ও পোস্টারিংয়ের কাজ। ফলে তিনি চলে আসেন নিজ শহর ঝিনাইদহে। মুসা মিয়া ঝিনাইদহে আসার পর তার নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়। ভাষা আন্দোলনের উত্তাপ লাগে ঝিনাইদহে। ওই সময় ঝিনাইদহ উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুরারী মোহন ঘোষাল ও সিনিয়র সহকারী শিক্ষক গোলাম মোস্তফার মাধ্যমে স্থানীয় ছাত্রনেতাদের গোপনে খবর দেন যে বাংলা ভাষার দাবিতে ২১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে হরতাল ডাকা হয়েছে। কলেজছাত্র মুসা মিয়া এর আগেই সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নামে একটি কমিটি গঠন করে দেন। সেই কমিটির সভাপতি হন গোলজার হোসেন আর সাধারণ সম্পাদক হন দশম শ্রেণির ছাত্র আনোয়ার জাহিদ (পরবর্তীকালে মন্ত্রী হয়েছিলেন)। কমিটিতে ডা. আব্দুল লতিফ ও আমির হোসেন মালিথাও ছিলেন। মালিথাকে প্রচার সম্পাদক করা হয়। কমিটি গঠন ও ২১ ফেব্রুয়ারির হরতাল সামনে উত্তাল হয় ঝিনাইদহ। এই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে সাহস জোগান ঝিনাইদহ উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুরারী মোহন ঘোষাল, সহকারী গোলাম মোস্তফা, শ্রী পন্নগভূষণ মজুমদার, মকবুল হোসেন দেবেন্দ্রনাথ পণ্ডিত, অরাজনৈতিক ব্যক্তি আলাউদ্দীন ওরফে আলা মিয়া, নঈম উদ্দীন আহম্মেদ, কবিরাজ নৃপেন্দ্র নাথ সেন, দ্বারক নাথ পণ্ডিত, বাবু দেবেনগুপ্তসহ অনেকেই।

ভাষা আন্দোলনের সংগঠকরূপে মুসা মিয়া তখন নিজ শহর ঝিনাইদহ এবং যশোর শহরে কেমন করে কাজ করতেন তা পাওয়া যায় তার নিজ রচনায়, ‘ঝিনাইদহে ছাত্র রাজনীতি তখনো খুব একটা গোছালো ছিল না। যশোরেই তা শক্তিশালী ছিল। যশোরে ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় ও ঝিনাইদহে বাড়ি হওয়ায় মহকুমা শহরে ছাত্রদের সংগঠিত করার মূল দায়িত্ব আমার ওপরই অর্পিত হয়। সে সময় সংগঠনের কাজে যশোর থেকে ঝিনাইদহে আসার লাল সুরকির রাস্তার ক্লান্তিকর ভ্রমণ মোটেও কষ্টের মনে হতো না; বরং এ ভ্রমণটিকে আদর্শের জন্য লড়াইয়ের অংশ ধরে রোমাঞ্চিত হতাম। তবে আমরা সে সময়ে ঝিনাইদহের কিছু উৎসাহী তরুণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতাম। তাদের মধ্যে টিপু (আনোয়ার জাহিদ), হায়দার, দীপু (নূরে আলম সিদ্দিকী), মঞ্জু, আমীর, টুলু, তোফাজ্জেল, আব্দুল হক-তাদের কথা বিশেষভাবে মনে পড়ছে। আরও অনেকেই এগিয়ে এসেছিলেন। ভাষা আন্দোলনে তাদের সঙ্গে নিয়েই সব কাজকর্ম করতাম। সে সময়ে স্কুলপড়ুয়া এক ঝাঁক তরুণের উদ্যোগেই ঝিনাইদহের মতো একটি মফস্বল শহরে ভাষা আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।

আমরা হাতে লেখা পোস্টার লাগাতাম। সাড়ে পাঁচ আনা দিয়ে এক শিশি আলতা কিনতাম। কাঠিতে তুলা লগিয়ে সেই আলতা দিয়ে পোস্টার লিখতাম। এমএম কলেজের হোস্টেলে বসেই এসব কাজ করতাম, কারণ অনেক শিক্ষকেরই নীরব সমর্থন ছিল ভাষাকেন্দ্রিক সংগ্রামে। আর এ ধরনের কাজে অল্প যা অর্থকড়ি লাগত, আমরা নিজেরাই তা খরচ করতাম। ছাত্ররা যে যার আগ্রহে আসত মিছিল-মিটিংয়ে। কাউকে জোর করে আনার ব্যাপার ছিল না। আর কোনো ভয়াবহ পুলিশি নিপীড়নও ছিল না। অনেক কাজ আমরা অবাধেই করেছি। হরতালও হয়েছিল, মনে পড়ছে।’

সমাজসেবা, দেশপ্রেম ও আদর্শবাদী রাজনীতি
ছেলেবেলা থেকে রাজনীতি সচেতন মুসা মিয়া দেশমাতৃকার আদর্শে ছিলেন অনুপ্রাণিত। এ কারণেই দেশের সকল প্রয়োজনে ছিলেন অগ্রসর, সাহসী ও সিদ্ধান্তে অটুট। তিনি যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে সরাসরি জড়িত থেকে কাজ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি স্বৈরাচারী আইয়ুববিরোধী আন্দোলন যেমন-বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন, ৬ দফা এবং ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানেও সক্রিয় ছিলেন। পাকিস্তানপর্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনাকাল থেকেই ঝিনাইদহ ও নারিকেলবাড়িয়ায় তাঁর পৈতৃক বাড়িতে জাতীয় রাজনীতিবিদদের অনেকেরই যাতায়াত ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গেও ছিল তার সুসম্পর্ক। মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী একাধিকবার ঝিনাইদহে সফরে গিয়ে তার বাড়িতেই অবস্থান করতেন। তিনি ছিলেন মওলানা ভাসানীর অত্যন্ত কাছের মানুষ। 

রাজনৈতিক জীবনে মো. জাহিদ হোসেন মুসা ১৯৫২-৫৭ সাল পর্যন্ত সাবেক ঝিনাইদহ মহকুমা (বর্তমানে জেলা) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন। মওলানা ভাসানীর নির্দেশে ১৯৭৩ সালে ঝিনাইদহ মহকুমা ন্যাপের সভাপতি থাকাকালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হন।  

এরপর তিনি সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। ২০০৯ সালে ভাষাসৈনিক মো. জাহিদ হোসেন মুসার নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করে জাহেদী ফাউন্ডেশন নামে একটি সমাজসেবামূলক সংস্থা। যার মাধ্যমে নারী-শিশু ও দুস্থদের জন্য খাদ্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। এ ছাড়া তিনি ‘সাম্প্রতিক দেশকাল’ পত্রিকার উপদেষ্টা ছিলেন। তারই চিন্তার নানা শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত এ পত্রিকার নিয়মিত প্রকাশনা। 

২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর বর্ষীয়ান এই ভাষাসংগ্রামী ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ভাষাসৈনিক মুসা মিয়ার বর্ণাঢ্য জীবনে নানা সামাজিক এবং সেবামূলক অবদান ও ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকার প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনস্বরূপ ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে তার নামে শোক প্রস্তাব উত্থাপনপূর্বক এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ ছাড়া তার কর্মময় জীবন ও অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ঝিনাইদহ পৌরসভার একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের নামকরণ করা হয় ‘ভাষাসৈনিক মুসা মিয়া সড়ক’। বরেণ্য এই ভাষাসৈনিক মো. জাহিদ হোসেন মুসা মিয়ার আত্মার প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।  

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //