সেন্ট মার্টিনে সুখের দুপুর!

এই মুহূর্তে যেখানে বসে দোলনায় দুলছি, সেখানে বাতাস কখনো থেমে যায় না, সফেদ ঢেউ সারাক্ষণ দু’পায়ে আচড়ে পরে, নীল সমুদ্র প্রতি মুহূর্তে অবাক করে তাকিয়ে থাকতে বাধ্য করে, নারিকেল, বাদাম, কেয়াগাছ সারাদুপুর-বিকেল ছায়া বিলিয়ে দেয়, এখানে অলস দুপুরে সমুদ্রের গর্জন, নির্মল ছায়া, নরম রোদ আর আদুরে জলরাশি সারাক্ষণ মাখামাখি করে থাকে, কচকচে কচি ডাবের নোনতা জলের অমৃতের স্বাদ আবেশে জড়িয়ে রাখে, সমুদ্র থেকে সদ্য নামানো নোনা জলের ভাজা মাছের মজায় মেতে থাকতে মন চায়, এখানে বালুকা বেলায় খালি পায়ে বহুদূর হেঁটে যেতে বাধা নেই। 

বসে থাকলে আর উঠতে ইচ্ছে করে না, তাকালে আর চোখের পলক পড়ে না, দোলনায় দোল খেলে আর কিছু পেতে ইচ্ছে জাগে না। 

বলছিলাম সেন্ট মার্টিনের একদম দক্ষিণের শেষ বিন্দুতে অবস্থিত নাম না জানা এক অপার্থিব রিসোর্টে আঙিনা থেকে। যেখানে নারিকেল, কেয়া, বাদাম গাছে ঘেরা ছোট রিসোর্টের দোলনায় বসে আবেগি হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে, মনকে শান্ত থেকে আরও প্রশান্ত করে দিয়েছে। ইচ্ছে হচ্ছে ঠায় বসে থাকি গাছে হেলান দিয়ে, নীল জলরাশিতে ভেসে ভেসে দূরে চলে যাই। 

আমাদের সেন্ট মার্টিন আমি পুরোটুকু একাধিকবার ঘুরেছি। চারপাশ দিয়ে, গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে, পূর্ব বা পশ্চিম দুইদিক দিয়ে, এমনকি সমুদ্র পথেও চারদিক দিয়ে। সেন্ট মার্টিনের প্রতিটি ইঞ্চিই আমার কাছে সোনার মতো দামি মনে হয়; কিন্তু এখানে, আজকের দুপুর আর বিকেলের সেই একদম দক্ষিণ বিন্দুতে এই রিসোর্ট বা কটেজকে আমার কাছে সবচেয়ে দামি, দুর্লভ, আর অপার্থিব মনে হয়েছে।

সেই সকাল ৯টায় এখানে এসে সমুদ্রে জোয়ার চলে আসায় থেমে যেতে বাধ্য হয়েছি। ছেঁড়াদ্বীপে হেঁটে যাওয়ার পথ সমুদ্রের জোয়ারে বিলীন হয়ে যাওয়াতে। তাই অল্প একটু মন খারাপ নিয়ে এখানে সাময়িক বসেছিলাম, কিছু সময় কাটাতে। আমাদের এখানে অপেক্ষা করাটা যে বিধাতার অনন্ত এক উপহার ছিল, সেটা আমরা একটু পরে বুঝতে পারলাম সময় গড়ানোর সাথে সাথে। প্রতিটি মুহূর্ত আমরা অপার, অসীম আর অপরূপ প্রকৃতির রূপে মুগ্ধ হতে থাকলাম। 

নীল সমুদ্রের উত্তাল জলরাশির মধ্যে ডুবে, ভেসে ডাবের পানিতে চুমুক দেয়া ছিল জীবনের অন্যতম এক বিলাসিতা। ভেসে ভেসে, কুলে এসে দেখি সমুদ্রের তাজা মাছ, শুঁটকি ভর্তা, আলু ভর্তা, ডাল, আর গরম গরম ভাত আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। কারণ এখানে অপেক্ষা করতে হবে জেনেই আমরা এই রিসোর্টে দুপুরের খাবারের জন্য বলে দিয়েছিলাম। যে যার ইচ্ছেমতো ভরপেট খেয়ে দেয়ে আবারো দোলনায় বিশ্রাম।

আরো প্রায় এক ঘণ্টা অলসতা করে কাটিয়ে দু’চোখ ভরে সমুদ্র আর ঢেউ ও মাতাল হাওয়া উপভোগ করে ভাটার টানে সমুদ্রের মাঝ থেকে ছেঁড়াদ্বীপ যাওয়ার পথ ভেসে ওঠায় অল্প কিছু সময়ের জন্য বিদায় নিয়েছিলাম।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //