ট্রেনে ঢাকা টু দার্জিলিং

বাংলাদেশের চিলাহাটি থেকে ভারতের সীমান্ত মাত্র সাড়ে ৭ কিলোমিটার। ভারত বিভাজনের আগে এ করিডোর দিয়ে ভারতের শিলিগুড়ি হয়ে দার্জিলিং পর্যন্ত সরাসরি রেল যোগাযোগ চালু ছিল। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের পর এই রুটে সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। 

আশার খবর হলো- ঢাকা টু দার্জিলিং আবারো যোগাযোগ শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তে রেল লাইনের সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। নীলফামারীর চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ি সীমান্তে রেলপথ সংযোগের কাজ সম্পন্ন করা হয়।

ভারত হলদিবাড়ি রেল স্টেশন থেকে সীমান্ত পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণকাজ সমাপ্ত করলেও তাদের অংশে জিরো পয়েন্টে দেড়শ’ মিটার অবশিষ্ট ছিল। মঙ্গলবার বিকেলে অবশিষ্ট অংশের কাজ সমাপ্ত করে বাংলাদেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে দিয়েছে ভারতীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এই রেলপথ দিয়ে ট্রেনে চড়ে ভারতের শিলিগুঁড়ি বা দার্জিলিং পর্যন্ত যাওয়া যাবে। 

রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, আগামী বছরের ২৬ মার্চ থেকে এ রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই দিন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ওই রেলপথ যোগাযোগের উদ্বোধন করবেন।

এই রেলপথ আবার চালু হলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভূমি দার্জিলিংসহ ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ, নেপাল ও ভূটান যাওয়া অনেক সহজ ও আরামদায়ক হবে। ঢাকা থেকে ১০ ঘণ্টায় যাওয়া যাবে নিউ জলপাইগুড়ি অথবা শিলিগুড়ি। সেখান থেকে দার্জিলিংয়ের দূরত্ব মাত্র ৪০ কিলোমিটার। আর শিলিগুড়ি থেকে নেপাল সীমান্তের দূরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার এবং ভূটানের দূরত্ব ১৭০ কিলোমিটার।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ঢাকা-দার্জিলিং রেল যোগাযোগ চালুর লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সীমান্তবর্তী চিলাহাটি স্টেশনকে উন্নত করা হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে বেশ কয়েকটি রেল লাইন। ঢাকা-চিলাহাটি রেলপথে সরাসরি আন্ত:নগর ট্রেন চলাচল করছে। দক্ষিণাঞ্চলের ট্রেনগুলোও এখন চিলাহাটি পর্যন্ত যায়।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, চিলাহাটি থেকে ভারতের সীমান্ত পর্যন্ত ব্রডগেজ কানেক্টিভিটি স্থাপনের মাধ্যমে উপ-আঞ্চলিক রেল সংযোগ স্থাপিত হবে। এতে করে মংলা বন্দরের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃদ্ধিসহ নেপাল ও ভুটানের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে বলে মনে করছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। রেলওয়ের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ি ইন্টারচেঞ্জ পয়েন্ট বহু পুরাতন। এ রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হলে যাত্রী চলাচলের পাশাপাশি মংলা বন্দরের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃদ্ধি পাবে। এর পাশাপাশি নেপাল-ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্যিক কার্যক্রমও বৃদ্ধি পাবে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভূমি দার্জিলিং বিশ্বের অন্যতম সেরা পর্যটন কেন্দ্র দার্জিলিং। যেখানে মেঘ আর পাহাড় এক সাথে খেলা করে। দার্জিলিং শহরে হিমালয়ের পাহাড়ী অঞ্চলের নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া বিরাজ করে। এখানকার বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ১৫ দশমিক ৯৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস ও গড় নি¤œ তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস। দার্জিলিংয়ে বছরে গড়ে ১২৬ দিন বৃষ্টিপাত হয়। পাহাড় আর গাছপালায় ঘেরা দার্জিলিংয়ে বহু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর একেকটি একেক রকম। যা নিজে চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না।

দার্জিলিংয়ের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে জাপানিজ টেম্পল এবং পেস প্যাগোডা, টাইগার হিল, বাতাসিয়া লুপ, কাঞ্চনজঙ্ঘা, দার্জিলিং মল, শহর থেকে প্রায় তিন হাজার ফুট নিচে অবস্থিত রক গার্ডেন, প্রকৃতির অপরুপ শোভাময় গঙ্গামায়া পার্ক, তেনজিন রক, দৃষ্টিনন্দন চা বাগান, আভা আর্ট গ্যালারী ইত্যাদি। দার্জিলিংয়ে পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য আছে ক্যাবল কার, টয় ট্রেন, হিমালয় মাউন্টেন ইন্সটিটিউট, মিউজিয়াম ও চিড়িয়াখানা ইত্যাদি।


সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

বিষয় : ঢাকা

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //