তথ্য সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ‘বড় ধাক্কা’ খেল এক্স

নিজস্ব কনটেন্ট মডারেশন ব্যবস্থা নিয়ে একের পর এক অভিযোগ আসছে ইলন মাস্কের সামাজিক মাধ্যম এক্সের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণ সংশ্লিষ্ট ভুল তথ্য ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে এক্স-এর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে ইইউ।

এসব কারণে বিজ্ঞাপনদাতাদের ধরে রাখতে ব্যাপক কাঠখড় পোহাতে হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমটিকে। 

এবার বড় ধরনের জরিমানার মুখে পড়েছে এক্স। শিশু নিপীড়ন বিরোধী তদন্তে সহযোগিতায় ব্যর্থ হওয়ায় এক্স’কে তিন লাখ ৮৬ হাজার ডলার জরিমানা করেছে অস্ট্রেলিয়ার এক নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

এই খবরকে কোম্পানিটির জন্য ‘বড় ধাক্কা’ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।

এক্স’কে এই জরিমানা করেছে অস্ট্রেলিয়ার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ই-সেইফটি কমিশন। তাদের দাবি, প্ল্যাটফর্মে শিশু নিপীড়ন সংশ্লিষ্ট কনটেন্ট ঠেকাতে কোম্পানি কত সময় নেয় বা কোন পদ্ধতিতে এগুলো শনাক্ত করা হয়, এমন প্রশ্নগুলোর জবাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে এর আগে টুইটার নামে পরিচিতি পাওয়া সামাজিক মাধ্যমটি।

২০২২ সালের অক্টোবরে চার হাজার চারশ কোটি ডলারে মাস্কের টুইটার অধিগ্রহণের তুলনায় এ সংখ্যা নেহাতই কম হলেও বিজ্ঞাপনদাতারা প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগ কমিয়ে দেওয়ায় আয় কমতে থাকা কোম্পানিটির সুনামে বড় আঘাত এই জরিমানা। 

অন্যদিকে, কনটেন্ট মডারেশন নিয়ে কাজ করা দল ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি হাজার হাজার নিষিদ্ধঘোষিত অ্যাকাউন্টকেও ফেরার সুযোগ দিয়েছে সামাজিক মাধ্যমটি।

অস্ট্রেলিয়ার ই-সেইফটি কমিশনার জুলি ইনম্যান গ্রান্ট বলেন, আপনার কাছে যদি এইসব প্রশ্নের জবাব থাকে বা আপনি বিশ্বব্যাপী অবৈধ কনটেন্ট ঠেকানোর মতো যথেষ্ট জনবল বা প্রযুক্তি রাখাকে অগ্রাধিকার হিসেবে গণ্য করেন, তবে বিষয়টি সহজ।

ইনম্যান গ্রান্ট ২০১৬ সাল পর্যন্ত টুইটারের জননীতি বিভাগের পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন।

তিনি বলেন, অবৈধ কনটেন্ট ও প্ল্যাটফর্মের কার্যবিধি নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারার একমাত্র কারণ হতে পারে, আপনাদের কাছে এর জবাব নেই।

মাস্কের অধিগ্রহণের পর এক্স-এর অস্ট্রেলীয় দপ্তরটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে, এ প্রসঙ্গে মন্তব্য জানতে কোম্পানির স্থানীয় মুখপাত্রের খোঁজ পায়নি রয়টার্স। এ ছাড়া, কোম্পানির স্যান ফ্রান্সিসকোর দপ্তর থেকেও তাৎক্ষণিক জবাব মেলেনি।

২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ায় কার্যকর হওয়া আইন অনুসারে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে অনলাইন সুরক্ষাবিষয়ক তথ্য দেওয়ার বাধ্যবাধ্যকতা আছে বিভিন্ন কোম্পানির। আর এ নির্দেশ না মানলে জরিমানার মুখে পড়ার ঝুঁকিও রয়েছে।

গ্রান্ট বলেন, এক্স জরিমানা দিতে অস্বীকৃতি জানালে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোম্পানির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করতে পারে।

টুইটারকে প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে পরিচালনা শুরুর পর এক পোস্টে মাস্ক বলেন, কোম্পানির প্রথম অগ্রাধিকার থাকবে শিশু নিপীড়ন বিষয়ক কনটেন্ট সরানোর দিকে। তবে, অস্ট্রেলীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা যখন জিজ্ঞেস করে যে, এক্স কীভাবে শিশু নিপীড়নের কনটেন্ট ঠেকাচ্ছে, তখন এর জবাবে এক্স বলেছে, বেশিরভাগ তরুণ ব্যবহারকারীই তাদের পরিষেবা ব্যবহার করেন না।

নিয়ন্ত্রক সংস্থাটিকে এক্স আরও বলেছে, তাদের কাছে থাকা ‘অ্যান্টি-গ্রুমিং’ প্রযুক্তিটি ‘ পুরোপুরি নির্ভুল নয়’।

এ ছাড়া, কমিশন গুগলকেও একই ধরনের নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন গ্র্যান্ট। তবে, গুগলের কিছু জবাবকে ‘সুনির্দিষ্ট নয়’ বলে আখ্যা দিয়েছে সংস্থাটি। এদিকে, গুগল বলেছে, তারা সংস্থাটিকে সব সময় সহযোগিতা করলেও তাদের দেওয়া সতর্কবার্তার কারণে কোম্পানি হতাশ।

নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলেছে, এক্স-এর বেলায় প্রশ্নগুলো কিছুটা গুরুতর। এর মধ্যে রয়েছে শিশু নিপীড়ন বিষয়ক কনটেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তারা কত সময় নেয়, লাইভস্ট্রিমে শিশু নিপীড়ন শনাক্তে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয় ও তাদের কনটেন্ট মডারেশন, সুরক্ষা ও জননীতি বিভাগে কতজন কর্মী রয়েছেন।

মাস্ক কোম্পানিকে প্রাইভেট করে ফেলার পর প্ল্যাটফর্মের শিশু নিপীড়ন সংশ্লিষ্ট কনটেন্ট শনাক্ত করার ব্যবস্থাও বন্ধ হয়ে যায়।

সুত্র- রয়টার্স

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //