বৃহস্পতি গ্রহে প্রাণের সম্ভাবনা

বর্তমানে বৃহস্পতি উত্তর আকাশে খুবই উজ্জ্বল অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। টেলিগ্রাফ পত্রিকার সূত্রে বিজ্ঞানীরা তাই জানিয়েছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে এর সাথে শনি, শুক্র ও বুধ- এ মাসজুড়ে একই রেখায় সজ্জিত হবে। অর্থাৎ সূর্যোদয়ের ঠিক আগ মুহূর্তে এবং সূর্যাস্তের পরে দিগন্তের দিকে তাকালে সবার ওপরে শনি, শুক্র, বুধ ও বৃহস্পতি গ্রহ দেখতে পাব। অনেকেই পৃথিবী ধ্বংসের আলামত হিসেবে চিন্তা করেছেন, পিরামিডের সাথে সম্পর্কযুক্ত করছেন। এ মাসের ৩ ও ৪ তারিখে সবচেয়ে সুন্দর অবস্থানে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এর সাথে বিজ্ঞানের কোনো সম্পর্ক নেই। 

সম্প্রতি কেপলার ষোলো বি নামে এমন একটি গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে। ২০০ আলোকবর্ষ দূরে এ গ্রহটির দুটো সূর্য আছে। কেপলার মহাকাশযান ৬০০ আলোকবর্ষ দূরে লিরা নক্ষত্রপুঞ্জে যাওয়ার সময় ১০ লাখ গ্রহের সন্ধান করবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে আমাদের সৌরজগতের মধ্যে বৃহস্পতি হচ্ছে এমন একটি গ্রহ। সামান্য একটু ভরের অভাবে সূর্যে পরিণত হতে পারেনি, পারলে আমাদের সৌরজগতে আরো একটি সূর্য থাকতো। তাহলে আমরা পৃথিবীবাসীরাও দুই সূর্যের আলোয় বাস করতাম। যেখানে কখনো রাত নামতো না। রাতের সাথে আমরা এত প্রবলভাবে পরিচিত হতাম না। এই নিয়ে আইজ্যাক অসিমভের নাইটফল নামে একটি বিখ্যাত গ্রন্থ আছে। যা পৃথিবীব্যাপি সাড়া জাগিয়েছিল।

বৃহস্পতি গ্রহটা এক ধরনের গ্যাসীয় গ্রহই বলা যায়। তার কোনো শক্ত ভূমি নেই। কিন্তু এই গ্রহে প্রাণের সম্ভাবনার ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা রীতিমতো প্রকল্প দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন। এদের মধ্যে আছেন ফ্রাঙ্ক ড্রেক, প্রয়াত জ্যোতিবিজ্ঞানী কার্ল সাগান, আর্থার সি ক্লার্ক। সমকালীন বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ থেকে এ মতের পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন। বৃহস্পতিতে গ্যালিলির মহাকাশযানে অভিযানও সে মতের পক্ষে কথা বলে। বর্তমান বিজ্ঞানীরা বলেছেন, অন্যগ্রহে যদি কার্বন জৈব অণুর ভিত্তিতেও গড়ে ওঠে তাহলেও সেই প্রাণ পৃথিবীর প্রাণের মতো দেখাবে না। কারণ প্রাণের বিকাশে প্রত্যেক উপযোগী গ্রহে তার নিজস্ব পরিবেশ প্রকৃতি আমাদের পৃথিবী থেকে ভিন্নভাবে কাজ করবে।

বৃহস্পতি হলো সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গ্রহ। এটা এমন একটা বিশাল গ্যাসীয় গ্রহ যার আবহম-ল হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, মিথেন, পানি ও অ্যামোনিয়া সমৃদ্ধ। এই গ্রহে কোনো উপযুক্ত শক্ত পৃষ্ঠ নেই বরং ঘন মেঘময় আবহম-ল আছে। এর আকাশে জৈব-অণুগুলো বিরাজমান আমাদের পরীক্ষাগারে উৎপন্ন জৈব অণুগুলোর মতোই। এই আবহম লটি খুবই ঝঞ্ঝাপূর্ণ এবং গভীরে প্রচণ্ড উত্তাপ। এই ধরনের খুবই অন্যরকম একটি গ্রহে প্রাণের বিকাশ যে প্রশ্নের বাইরে নয় এটা দেখানোর জন্য কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ল সাগান ও সহকর্মী ই. ই. স্লাপটার একটা হিসেব কষেছিলেন। এখানে বিকশিত প্রাণিকে নিচে পড়া ও ঝলসানো থেকে আত্মরক্ষার জন্য সবসময় সতর্ক হতে হবে। তারা দেখাতে চেয়েছিলেন আমাদের বর্তমানে রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানের যে নিয়মকানুন বিরাজমান তাতে এই ধরনের একটি গ্রহ প্রাণি অধ্যুষিত হওয়া সম্ভব।

এখানে একটি জীবসত্ত্বাকে টিকে থাকতে গেলে ঝলসে যাওয়ার আগে তাকে বংশবৃদ্ধির কাজটি করতে হবে। আশা করা যায় যে, পরিচলন প্রক্রিয়া তাদের কিছু বংশধরকে আবহম-লের অপেক্ষাকৃত উঁচু ও শীতলস্তরের দিকে নিয়ে যাবে। ওই ধরনের প্রাণিগুলো খুব ছোট হতে পারে। আমরা তাদের ডাকবো সিনকার বলে। কিছু কিছু হতে পারে ফ্লোটার, এরা হবে সম্ভাবত বিশাল হাইড্রোজেন বেলুনের মতো, এই বেলুনগুলো তাদের অভ্যন্তর থেকে হিলিয়াম ও অধিকতর ভারী গ্যাসগুলোকে বের করে দিয়ে হাইড্রোজেন ও হালকা গ্যাসগুলোকে ধরে রাখবে। অথবা তারা একটা উত্তপ্ত বায়ুভরা বেলুনের মতো হতে পারে, যা তাদের অভ্যন্তরীণ উষ্ণতা ব্যবহার করে ভেসে থাকাকে স্থির রাখবে। যে খাদ্য এরা গ্রহণ করে তা থেকে অর্জিত তাপশক্তি ব্যবহার করেই এরা কাজটি করতে পারে। পরিচিত পার্থিব বেলুনের মতই, একটা ফ্লোটারকে যতই গভীরে নিয়ে যাওয়া হয় তার উপর প্রযুক্ত বায়ুমণ্ডলের প্লাবতা ততই বেড়ে যায় যা ফ্লোটারকে ঠেলে দেবে আবহম-লের আরো উঁচু, শীতলতর ও নিরাপদ অঞ্চলের দিকে। স্লাপটার ও সাগান কল্পনা করেছিলেন ফ্লোটাররা কিলোমিটার থেকে কিলোমিটার চওড়া হবে- এতো বড় যে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় তিমির থেকেও বড়, শহরের আকার আকৃতির মতো। 

বিবর্তনের প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রক্রিয়া এখানেও কাজ করবে। যেমন পৃথিবীতে ঘটেছিল। পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন মেনে নেয় এই ধরনের প্রাণকাঠামো। অন্যক্ষেত্রগুলো বোঝার মাধ্যমেই আমরা আমাদের প্রাণের সম্পর্কে ধারণা প্রসারিত করতে পারি। বহির্জাগতিক প্রাণেরা কি পর্যায়ের প্রাণ সেটা বিষয় না। এটা আমাদের জীববিজ্ঞানের দেখার সীমানা বৃদ্ধি করবে। প্রথমবারের মত জীববিজ্ঞানীরা বুঝতে পারবে আর কী কী ধরনের প্রাণকাঠামো সম্ভব। মঙ্গলে কিউরিসিটির অভিযানও সেই কারণে গুরুত্বপূর্ণ। বিখ্যাত জ্যোতিপদার্থবিজ্ঞানী সাগান বলেছিলেন- ‘যখন আমরা বলি বহির্জাগতিক প্রাণের অনুসন্ধান খুবই গুরুত্বপূর্ণ তখন একথা বোঝাই না যে আমরা নিশ্চয়তা দিচ্ছি বহির্জাগতিক প্রাণের অস্তিত্বের ব্যাপারে। আমরা শুধু বলতে চাচ্ছি এটা খুব গুরুত্বপূর্র্ণ। পৃথিবীতে প্রাণের প্রকৃতি ও অন্য কোনো গ্রহে প্রাণের অনুসন্ধান আসলে একই প্রশ্নের দুটো দিক- তাহলো আমরা কারা? যে প্রশ্ন প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ করে আসছে।’

নক্ষত্রগুলোর মধ্যেকার স্থানগুলো অন্ধকারময়, সেখানে গ্যাসীয় মেঘ ও জৈব-বস্তু আছে। বেতার টেলিস্কোপের মাধ্যমে সেখানে কয়েক ডজন বিভিন্ন ধরনের জৈব অণুর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এ-ধরনের জৈব অণুর প্রাচুর্য ইঙ্গিত দেয় যে প্রাণের উপাদান সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হলে সম্ভবত প্রাণের উৎপত্তি ও বিবর্তন হলো- মহাজাগতিক অবশ্যম্ভাবিতা। মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির শত শত কোটি গ্রহের কতগুলোতে কখনোই প্রাণের উদ্ভব ঘটেনি। অন্যগুলোতে এটা ঘটে থাকতে পারে, কিন্তু তা ধ্বংস হয়ে গেছে অথবা প্রাণের সরল গঠন হতে খুব দূরে কখনো যেতে পারেনি। গ্রহজগতের অল্পকিছু অংশেই বুদ্ধিমত্তা ও সভ্যতার বিকাশ ঘটে থাকতে পারে যারা হয়তো আমাদের থেকে এগিয়ে আছে। 

বৃহস্পতিতে প্রাণের বিকাশ কেমন হতে পারে

অসংখ্য অন্যান্য গ্রহ যেগুলো অন্যান্য সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে, সেখানে কি প্রাণ আছে? বহির্জাগতিক প্রাণ, অস্তিত্ব যদি থাকে তবে তা কি পৃথিবীর মত একই ধরনের জৈব অণুর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে? অন্য জগতের প্রাণ কি দেখতে খুব বেশি পৃথিবীর মত? অথবা তারা হতবুদ্ধিকরভাবে ভিন্ন-অন্য পরিবেশের কাছে অন্য ধরনের অভিযোজন। আর কী কী সম্ভব? কার্ল সাগান বলেছেন- ‘পৃথিবীতে প্রাণের প্রকৃতি এবং আর কোনো জায়গায় প্রাণ আছে কিনা তার অনুসন্ধান হলো একই প্রশ্নের দুটো দিক- তাহলো আমরা কে তার অনুসন্ধান।’

প্রায়শ অনেকে মন্তব্য করে থাকেন যে, অদ্ভুত যোগাযোগ ও সৌভাগ্য সুবাদে এই পৃথিবী জীবনের জন্য পরিপূর্ণভাবে উপযোগী- মাঝারি তাপমাত্রা, তরল পানি, অক্সিজেন আবহম-ল ইত্যাদি। কিন্তু এটা আংশিকভাবে হলেও কার্যকারণের একটি বিভ্রান্তি। আমরা পৃথিবীবাসিরা সর্বোত্তমভাবে পৃথিবীর পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজিত। কারণ এখানে আমরা জন্মেছিলাম, বড় হয়েছিলাম। ওই প্রাচীনতর প্রাণ কাঠামোগুলো যারা ভালোভাবে অভিযোজিত ছিল না তারা টিকে থাকতে পারেনি। ওই সমস্ত প্রাণিদের বংশধররূপে আমরা উদ্ভুত যারা ভালোভাবে টিকেছিল। এই প্রাণ যদি সম্পূর্ণ ভিন্ন জগতে উদ্ভুত হতো তাহলে সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় তা ওই জগত বা গ্রহের প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকতো। 

পৃথিবীর সকল প্রাণিই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত। আমাদের আছে একটি সাধারণ জীবরসায়ন ও একটি সাধারণ বিবর্তনীয় বংশগতি। ফলাফল হিসেবে বলা যায় আমাদের জীববিজ্ঞানীদের মারাত্‌নক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারা কাজ করেন জীববিজ্ঞানের শুধুমাত্র একটি প্রকার নিয়ে, প্রাণ সঙ্গীতের একটি নিঃসঙ্গ সুর (one lonely theme in music of life) নিয়ে। হাজার হাজার আলোকবর্ষ বিস্তৃত এই ক্ষীণ রেশটি কি একমাত্র পরিপূর্ণ সুর? কিংবা এমন কি হতে পারে না যে শতকোটি কন্ঠ অজস্র রাগ-রাগিনী ও সুরময় গুঞ্জনে মূখরিত হয়ে কখনো সূরে কখনো বেসুর ঐকতানে জীবন সংগীত গেয়ে যাচ্ছে গ্যালাক্সি থেকে গ্যালাক্সিতে?

আদিম পৃথিবীতে সহজলভ্য গ্যাসগুলো ও রাসায়নিক বন্ধনকে ভেঙ্গে ফেলতে পারে এমন যে কোনো শক্তি উৎসকে ব্যবহার করে, আমরা উৎপন্ন করতে পারি প্রাণের মুল কাঠামোর উপাদানগুলো। কিন্তু আমাদের পাত্রে তৈরি হয় শুধুই প্রাণ সুরের স্বরগুলো প্রাণ সুর নয়। প্রাণ মানেই অ্যামিনো অ্যাসিড অপেক্ষা অধিক কিছু যা প্রোটিন তৈরি করতে পারে এবং নিউক্লিটাইড যা নিউক্লিক অ্যাসিড তৈরি করতে পারে। তবে প্রথম দিককার গ্যাস ও শক্তি উৎসগুলো মহাবিশ্বের প্রায় সর্বত্র বিরাজমান। আমাদের পরীক্ষাগারের পাত্রে ঘটা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উৎপন্ন দ্রব্যগুলোর মতোই আন্তঃনাক্ষত্রিক মহাশুন্যে জৈববস্তুগুলো উৎপাদন হওয়াটা একটা সাধারণ ব্যাপার এবং ইতোমধ্যে অ্যামিনো এসিড পাওয়া গেছে উল্কাপি গুলোতে। মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির অন্য শতকোটি জগতে প্রায় একই ধরনের রসায়নের উদ্ভব ঘটে থাকবে। তাহলে বলা যায় প্রাণের অণুতে পরিপূর্ণ শৃঙ্খলিত মহাবিশ্ব। 

কিন্তু এমন কি যদি অন্যান্য গ্রহের প্রাণও যদি এখানকার প্রাণের মতো একই অণু রসায়নের উপর গড়ে উঠে তাহলে এটা আশা করার কোনো কারণ নেই এগুলো আমাদের পরিচিত প্রাণের সাদৃশ্য হবে। বিবেচনা করি পৃথিবীতে বিশাল বৈচিত্র্যময় প্রাণিজগতের কথা, যারা প্রত্যেকে একই গ্রহে অবস্থান করে এবং অভিন্ন তাদের অণু জীববিজ্ঞান। যে সকল প্রাণিদের কথা আমরা এখানে জানি সেগুলো থেকে ওই অন্য গ্রহের পশু-পাখী এবং শাক-শব্জিগুলো মুলগতভাবে ভিন্ন। হতে পারে সেখানেও একই ধরনের বিবর্তন কারণ সেখানেও নির্দিষ্ট একটি পরিবেশের প্রেক্ষিতে শুধুমাত্র একটিই গ্রহণযোগ্য সমাধান থাকতে পারে-উদাহরণস্বরূপ, দৃশ্যমান আলোকতরঙ্গে বাইনোকুলার ভিশনের জন্য অনেকটা দুই চোখের কথা বলা যায়।

এগুলো থেকে আমরা বলতে পারি না একটা বহির্জাগতিক প্রাণিকে কেমন দেখাবে। আমরা ভীষণভাবে সীমাবদ্ধ এই সত্য দ্বারা তাহলো আমি জানি এক ধরনের প্রাণের কথা, পৃথিবীর প্রাণ। কেউ কেউ বিশেষত বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর লেখক এবং চিত্র শিল্পীরা— অনেক সময় অনুমানের সাহায্যে বর্ণনা দেন অথবা ছবি আঁকেন অন্য জগতের প্রাণিরা কেমন দেখাতে পারে তার উপর। কিন্তু বহির্জাগতিক প্রাণসংক্রান্ত বিশেষজ্ঞরা বলেন, “ওই ধরনের বহির্জাগতিক দৃষ্টিভঙ্গির বেশিরভাগগুলোই মনে হয় ইতোমধ্যে যে সমস্ত প্রাণকাঠামোর কথা জানি তার উপর খুব বেশি আস্থা রেখে তারা এই ধরনের প্রাণের কাঠামো তৈরি করেন। যে কোনো প্রাণের বিকাশ ঘটার জন্য একটা দীর্ঘ ধারার স্বতন্ত্র প্রায় অসম্ভব কিছু পদক্ষেপের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এটা মনে করা ঠিক না যে, অন্য গ্রহের বা অন্য কোনো স্থানের প্রাণ দেখতে হবে অনেকটা সরিসৃপ, অথবা একটা কীট-পতঙ্গের অথবা মানুষের- এমন কি সাথে থাকবে ক্ষুদ্র cosmetic adjustment হিসেবে সবুজ চামড়া, বিন্দুবৎ কান, এবং এন্টিনা।’ কিন্তু তারপরও যদি অনুমানের চেষ্টা করা হয় তাহলে কল্পনা করা দরকার বেশ ভিন্ন একটা ধরনকে। ফ্লোটারগুলো নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে গ্যাসীয় পদার্থের দমকা আঘাতের সাথে- অনেকটা রামজেট অথবা রকেটের মত।

বিজ্ঞানীরা কল্পনা করেছিলেন তাদেরকে অলসভাবে বিচরণশীল প্রাণি হিসেবে, অন্তত চোখে দেখে তাই মনে হবে। তবে তাদের চামড়ায় থাকবে কিছু অভিযোজনক্ষম পরিবর্তনশীল বিন্যাস যা আসলে এক ধরনের ছদ্মবেশ, যা থেকে বোঝা যায় ফ্লোটারদেরও আত্নরক্ষার প্রয়োজন হয়। এই পরিবেশগত অবস্থায় পারস্পরিক পরিবেশগত উপযুক্ত বাস্তুস্থিতিস্থানের কারণে আরেক ধরনের প্রাণির কথা চিন্তা করা যায়। যেমন, হান্টার, এরা হলো দ্রুতগামীসম্পন্ন ও কৌশলী। হান্টাররা ফ্লোটারদের শরীরের জৈব অণুগুলো এবং তাদের জমা করে রাখা বিশুদ্ধ হাইড্রোজেন তাদেরকে ধরে খাবে। স্বচালিত ফ্লোটারদের থেকেই প্রথম দিকের হান্টারদের বিকাশ ঘটে থাকতে পারে। সেখানে খুব বেশি হান্টাররা থাকতে পারে না, কারণ তারা যদি সমস্ত ফ্লোটারদের খেয়ে ফুরিয়ে ফেলে তাহলে খাদ্যের অভাবে তারাই ধ্বংস হয়ে যাবে।

পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নশাস্ত্র মেনে নেয় এই ধরনের প্রাণকাঠামো। শিল্পকলা তাদেরকে বিভিন্ন গুণাদি ও সৌন্দর্য দ্বারা মনোমুগ্ধকর করে তোলে। প্রকৃতি বাধ্য না, এই ধরনের অনুমান অনুসরণ করতে। কিন্তু যদি শতকোটি প্রাণি অধ্যুষিত জগত থাকে এই মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে তাহলে সেখানে অন্তত কিছু সংখ্যক জগতে সিঙ্কার, ফ্লোটার, হান্টারদের মতো প্রাণিরা অধ্যুষিত হবে যা আমাদের কল্পনায় তৈরি হয়েছে পদার্থ ও রসায়নের নিয়ম মেনে। জীববিজ্ঞান হলো এমন একটা বিজ্ঞান তা যত না পদার্থবিজ্ঞানের মত তার চেয়ে বেশি ইতিহাসের মত। বর্তমানকে বোঝার জন্য আমাদেরকে জানতে হবে অতীতকে এবং জানতে হবে সূক্ষাতিসূক্ষ্‌ন বিস্তৃতির মধ্য দিয়ে। জীববিজ্ঞানে ভবিষ্যদ্বানীমূলক তত্ত্ব নেই, যেমন নেই ইতিহাসে। কারণগুলো একই; উভয় বিষয় এখনও খুবই জটিল আমাদের কাছে। আমরা আমাদের সম্পর্কে ভালোভাবে জানি অন্যক্ষেত্রগুলো বোঝার দ্বারা।

কার্ল সাগান বলেন, “বহির্জাগতিক প্রাণের একটি ঘটনা-কোনো বিষয় না তারা কি পর্যায়ের প্রাণ-জীববিজ্ঞানের দেখার দৃষ্টিভঙ্গির সীমানা বাড়বে। প্রথমবারের মত জীববিজ্ঞানীরা বুঝতে পারবে আর কি কি ধরনের প্রাণকাঠামো সম্ভব। যখন আমরা বলি- বহির্জাগতিক প্রাণের অনুসন্ধান খুবই গুরুত্বপূর্ণ তখন একথা বোঝাই না যে, আমরা নিশ্চয়তা দিচ্ছি বহির্জাগতিক প্রাণের ব্যাপারে আমরা শুধু একথা বলতে চাচ্ছি যে, এই অনুসন্ধান মহামূল্যবান। পৃথিবীতে প্রাণের প্রকৃতি এবং আর কোনো জায়গায় প্রাণ আছে কিনা তার অনুসন্ধান হলো একই প্রশ্নের দুটো দিক- তাহলো ‘আমরা কে’ তার অনুসন্ধান, যা প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ করে আসছে। আমরা এ-পর্যন্ত প্রাণের একটি সুর শুনেছি শুধুমাত্র একটি ছোট্ট জগতে। কিন্তু অবশেষে আমরা শুনতে আরম্ভ করেছি মহাজাগতিক ঐকতানের অন্যান্য সুর।

 লেখক : বিজ্ঞান বক্তা 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //