মাধবী ভিলা

আচ্ছা, আমি কিসের জন্য এই লড়াইটা করছি? আমি কি তাদের বিরুদ্ধে জিততে চাই নাকি আমার পরিবারকে রক্ষা করতে চাই? এত সবকিছুর বিনিময়ে আমি কি আমার পতন ডেকে আনছি না? কোনো কিছুতেই আর মনঃসংযোগ করতে পারি না। নিজের সংসার, সন্তান, পেশাজীবন, সামাজিকতা, দাম্পত্য সব তলানিতে ঠেকছে। সংসারটা অনেক বছরের আর সন্তানরা বড় হয়ে গেছে তাই অনেকটাই রক্ষা। তারপরও মেয়েটা বেশ বিষণ্ণতায় ভুগল- মনে হয় সেটি আমার তাকে অবহেলার কারণ। আর দাম্পত্য-কলহ তো লেগেই আছে যার বিষয়বস্তু সেই মনসুর মিয়া। মনে হচ্ছে শেষ পর্যন্ত সেই মনসুর মিয়াই জিতে যাচ্ছে। শয়তানটা আমাদের পরিবারকে পুরো ধ্বংস করতে চেয়েছিল। রানীরও সেটিই চাওয়া। এখন ভাবতে খুব অবাক লাগে যে রানীকে একসময় আমি মেজদি বলে ডাকতাম। অবশ্য সম্পর্কটা আমাদের কখনোই ভালো ছিল না। আব্বা ছোট ভাই-বোন সবার জন্য জামাকাপড় বানানোর জন্য মেজদির হাতে টাকা দিতেন, আর মেজদি সবার কথা ভুলে শুধু নিজের জন্য সাজ-পোশাক কিনতেন। 

আব্বা বলতেন আমার সন্তানদের তিনটা পাকিস্তানি আর তিনটা বাংলাদেশি। আপুনি, মেজদি আর ভাইয়া- পাকিস্তান আমলে জন্ম নেওয়া এই তিনজন এত স্বার্থপর কেন হলো, তা আমি আজও বুঝে উঠতে পারলাম না। বদ বাতাস। সেই তুলনায় স্বাধীন বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া আমরা ছোট তিন ভাই-বোন অনেক স্বচ্ছ এবং সৎ। অনেকে হয়তো বলবে আমরা কিছুটা রুক্ষ। তা বাবাহীন পরিবেশের প্রতিকূলতায় শক্তপোক্ত না হলে টিকে থাকা অত সহজ নয়। আপুনি আর মেজদির বিশ-বাইশ বছরের মধ্যে বিয়ে হয়ে যায় আর ভাইয়া একই বয়সে আমেরিকাতে চলে যায় পড়াশোনার জন্য। আমি তখন সংসারের হাল ধরি। আব্বা তো অনেক আগেই চলে গেছে আর জন্ম থেকেই শুনে আসছি আম্মার অসুস্থতার কথা। এজন্য আম্মার অবস্থান সংসারে ছিল প্রায় পাপোশের মতো। পরে অবশ্য বুঝেছিলাম, যে আকাশে উড়তে পারে তার ডানা যদি কেটে দেওয়া হয় তাহলে সে অথর্ব হয়ে পড়ে। অথর্ব বলি আর পাপোশই বলি, সেই আম্মাকেই দেখলাম জেগে উঠে নিজের সংসারটার হাল ধরতে। প্রতিদিন তিনবেলা টেবিলে সবার জন্য খাবার সাজিয়ে রাখা যে কত বড় কাজ, তা বুঝেছিলাম নিজের সংসার শুরু করার পর। 

সংসারটা চালাত আম্মা’ই তার গৃহকর্মী সুকিকে নিয়ে, আমি মূলত বহিঃশত্রুর হাত থেকে আমাদের চারজনকে রক্ষা করে গেছি। বহিঃশত্রু হচ্ছে আত্মীয়-স্বজনের উটকো ঝামেলা। এদের সাংকেতিক নাম দিয়েছিলাম ব্রজেশ্বর। রবীন্দ্রনাথের ‘আমার ছেলেবেলা’র ব্রজেশ্বরের কথা মনে আছে? দুনম্বর লুচি মুখের সামনে ঝুলিয়ে দিয়ে বলতেন, ‘আর লাগবে কি?’ আব্বা বেঁচে থাকতেই গ্রাম আর মফস্বল শহর থেকে দুই আত্মীয় ভাই আমাদের বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। আর অস্থায়ী আত্মীয়দের আনাগোনা তো সব সময়ই ছিল। বাড়ির পরিবেশ সব সময়ই জমজমাট। স্থায়ী আশ্রিতরা হচ্ছেন ফুপাতো ভাই বুলবুল আর খালাতো ভাই মন্টু। এরা দুজনই আলাদা আলাদাভাবে চার বোনের এক ভাই। এদের আরও একটি মিল ছিল। দুজনই পাল্লা দিয়ে পরীক্ষায় অকৃতকার্য হতেন। মা-বোনদের সঙ্গে সংঘাত ছিল তাদের নিত্যদিনকার রুটিন। বাবাদের ভূমিকা শূন্যপ্রায়। দুই বাবাই দুনিয়াদারির কথা ভুলে গিয়ে পরলোকের চিন্তায় এবং চেষ্টায় উৎসর্গিত। অগত্যা দুনিয়াদারিকেন্দ্রিক আব্বাকেই সেই দুই ছেলের দায়িত্ব নিতে হয়। আব্বা সব সময় বলতেন একা একা ওঠা যায় না, পরিবারের সবাইকে নিয়ে উঠতে হয়। 

আব্বা মারা যাওয়ার পর গুলশানের বাড়ি ভাড়া দিয়ে মিরপুরে নিজেদের আরেকটা বাড়িতে উঠি। সময়কাল আশির দশকের শেষের দিকে। গুলশানের বাড়িভাড়া থেকে তখন পেতাম মাসে ৩০ হাজার টাকা। আমার যুগ্ম সচিব মামার বেতন তখন ১০ হাজার টাকা আর বাজারে সোনার ভরি ছয় হাজার টাকা। আশুগঞ্জের সার কারখানায় চাকুরে খালুর বেতন সাত হাজার টাকা। গ্রামে থাকা ফুপার চলত জমিজমা বর্গা দিয়ে আর দাদার বাড়িঘর ভাড়ার টাকায়। অতএব আব্বা মারা যাওয়ার পরও আমাদের পরিবারের অবস্থা দাঁড়াল ‘হাতি মারা গেলেও লাখ টাকা’। আব্বা বেঁচে থাকতে ভাইয়া কঠোর শাসনের মধ্যে ছিল। বাবাহীন পৃথিবীতে অল্পবয়সে ভাইয়ার হাতে অর্থভা-ারের দায়িত্ব চলে আসে। বটবৃক্ষের সন্তান হওয়াতে সব আত্মীয়-স্বজন এমনিতেই আমাদের তোষামোদ করে চলত। মেজদি আর ভাইয়া ছিল এই তোষামোদির কাঙাল। আশ্রিত মন্টু মিয়া আর বুলবুল ভাই তখন তাদের সূক্ষ্ম মফস্বলী আর গ্রাম্য কুটনামির চাল চালতে শুরু করে। তাদের নিজেদের লেখাপড়ার অবস্থা সঙ্গিন, বাবাদের নেই তেমন কোনো সহায়-সম্পত্তি। তোষামোদি করে ভাইয়াকে তারা এমন বশে নিয়ে গেল যে ভাইয়া তখন প্রতিদিনই এই দুজনকে নিয়ে দামি রেস্টুরেন্টে খেতে যাচ্ছে। লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে ভাইয়ার প্রায় বখে যাওয়া অবস্থা। এ অবস্থায় ভাইয়াকে উদ্ধার করলেন আমাদের আমেরিকায় থাকা আত্মীয়-স্বজন। ভাইয়াকে তারা আমেরিকায় নিয়ে গেলেন। 

এ ঘটনায় আমার উপলব্ধি হলো মানুষের একান্ত চাওয়া হচ্ছে তাদের দল ভারী করা। যেমন আমরা উচ্চবিত্ত পাড়া থেকে মধ্যবিত্ত পাড়ায় নেমে আসার পর আগের এলাকার মানুষজন আমাদের সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন যাতে আমরা আবার আগের এলাকায় ফিরে আসতে পারি। অন্যদিকে গ্রাম বা মধ্যবিত্ত পাড়ার আত্মীয়-স্বজন তাদের পরামর্শ বা কূটচাল দিয়ে আমাদেরকে মধ্যবিত্ত পাড়ার মধ্যে আটকে রাখতে চেয়েছেন। তবে তাদের থেকে উপকারও কিছু পেয়েছিলাম। নিত্যদিনকার সামাজিকতা তো তাদের সঙ্গেই ছিল, পরিবারের কেউ বিপদে পড়লে তারাই প্রথম ছুটে আসতেন। পরে অবশ্য বুঝেছি সামাজিকতার কেন এই পার্থক্য। কিছু ব্যতিক্রম উদাহরণ বাদ দিলে পিছিয়ে থাকা মানুষজন তার সামনের মানুষজনের সঙ্গে দুরকম আচরণ প্রদর্শন করে- তোষামোদি নয়তো ঈর্ষাপরাণয়তা। মধ্যবিত্ত পাড়ার আত্মীয়-স্বজনের হিংসার বিষবাষ্প তখন আমাদের মধ্য ক্রমশ বিভেদ তৈরি করছে। আব্বা থাকলে বলতাম, ‘সবাইকে নিয়ে উঠতে হয় বটে, তবে কাউকেই পরিবারের মধ্যে এরকম ফ্রি পাস দিতে হয় না।’ 

যাক বাবা, পরিশেষে ভাইয়ার আমেরিকা-গমন পুরো পরিবারকে রক্ষা করে। কারণ পরিবারে তোষামোদিদের আর কোনো স্থান থাকে না। পরিবারের নিয়ন্ত্রণ চলে এলো আমার হাতে। অর্থাৎ পরিবারে পাকিস্তানির শাসন শেষ- বাংলাদেশির শাসন শুরু।

দুই
আমার শাসনামলের শুরুতে প্রথমেই সংঘাত হয় মন্টু মিয়া আর বুলবুল ভাইয়ের সঙ্গে। প্রায় চাকরি-বাকরিহীন এ দুজনের প্রথম সম্বল বলতে গেলে আমাদের পরিবার। পরিবারের অর্থভাণ্ডার উনাদের নিয়ন্ত্রণে। গুলশানের বাড়ি থেকে এত টাকা বাড়িভাড়া পাচ্ছি, অথচ সেই অর্থ কোথায় যায় তা আমরা জানি না। আমাদের প্রয়োজনের সময় অর্থকড়ির টানাটানি। তাই এ দুজনের নাম দিয়েছি ব্রজেশ্বর। গুলশানের বাড়ির সব দামি এবং বনেদি আসবাবপত্র মিরপুরের বাড়ির গ্যারেজে জমা করে রাখা ছিল। কয়েক দিন বাইরে থেকে এসে দেখি সব উধাও। দুজন দোষ দিল বাড়ির দারোয়ান ইমরানকে। ড্রাগের টাকা জোগাড় করতে সে নাকি সব বিক্রি করে দিয়েছে। তবে ভেতরের খবর জানলাম যে দালালের মাধ্যমে এসব বিক্রি করা হয়েছিল তার কাছ থেকে। কাজটা ছিল দুই ব্রজেশ্বরের। তবে অর্থকড়ির থেকেও ক্ষতিকর ছিল আমাদের পরিবার সম্পর্কে গুজব-গুঞ্জন ছড়িয়ে দেওয়া, সবার কাছে নিজেদেরকে আমাদের কা-ারি হিসেবে পরিচয় দিতেন। তারা না থাকলে নাকি অসুস্থ মা আর আমরা ছোট ছোট তিন ভাইবোন পানিতে ভেসে যেতাম। নানান রকম অপমানজনক কথাবার্তায় আমাদের আত্মবিশ্বাসের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করতেন। তাই একদিন সুযোগ বুঝে এ দুজনকে পরিবার থেকে বহিষ্কার করলাম। এরপর আমরা আবিষ্কার করলাম মাস শেষে আসলে আমাদের অনেক টাকা বাড়িভাড়া আসে। 

১৯ বছরের পিচ্চি একটা মেয়ে হয়ে তাদের অহমবোধে প্রচণ্ডভাবে আঘাত হানি যা অর্থকড়ি হারাবার থেকেও বেশি অপমানজনক। ফলে যা হবার তাই হলো। তারা সর্বান্তকরণে আমাকে নিশ্চিহ্ন করতে চাইলেন। তবে তাদের ক্ষমতা সীমিত ছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে আমার চরিত্র সম্পর্কে কুৎসা রটনা ছাড়া তাদের আর তেমন কিছুই করার ছিল না। সেটিকে আমি তেমন আমলে নিতাম না। এতে তারা আরও ক্ষত-বিক্ষত হয় এবং হুঙ্কার ছাড়ে, ‘একদিন এই পরিবার ধ্বংস হবে।’ পরবর্তী সময়ে আবার যখন পাকিস্তানি শাসন অর্থাৎ পরিবারে ভাইয়ার আগমন ঘটে তখন তারা আসলেই ভাইয়াকে সঙ্গে নিয়ে পরিবারটিকে প্রায় ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে যায়; কিন্তু আমার বোকা ভাইটা এই ফাঁদে পা দিয়ে প্রথমেই নিজের ধ্বংস ডেকে আনে। আর যত রকম ব্রজেশ্বর আছে তারাও সব ছিটকে পড়ে। এরপর আর তারা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। আসলে বোকারাই যে গাছ বেয়ে উপরে ওঠে সে গাছের গোড়া কাটে। তখন দ্বিতীয়বারের মতো পরিবারে আবার আমার গৃহপ্রবেশ ঘটে- শুরু হয় নতুন করে আরেক লড়াই। এখন বরং প্রথম লড়াইয়ের গল্পটাই শেষ করি। 

এখন এই যে একটা মেয়ে ছোট দুভাই আর মাকে নিয়ে নিজেদেরকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রামে নিয়োজিত, আশপাশের সব বয়সের পুরুষেরাই তাকে বাধাগ্রস্ত করছে- একেই কি বলে পুরুষতন্ত্রের বিষবাষ্প? আমার মতে তা নয়। আমি মহিলাকুলের থেকেও তখন প্রতিনিয়ত হেনস্তা হচ্ছি। আমি হয়ে যাই আমার বড় দুই বোনের চক্ষুশূল। তখনো আমি অনুধাবন করতে পারিনি স্বামীর সংসারে কতটা অসুখী জীবন কাটাচ্ছে তারা। স্বভাবে আজন্মকাল থেকেই তারা খুব স্বার্থপর আর হিংসুটে- অনাধুনিক মানুষের বৈশিষ্ট্য। প্রজ্ঞা তাদের মননে প্রবেশ করতে পারেনি। তারা জানে না সুন্দর মুখশ্রী আর সংসারের পারঙ্গমতা, সর্বোপরি এত পতিব্রতা হবার পরও কেন তারা এত অসুখী, বঞ্চিত এবং নিষ্পেষিত। মানুষ যখন তাদের প্রশ্নের উত্তর খোঁজে না, তখন প্রশ্নগুলো জ্বালা-যন্ত্রণাময় অনুভূতি হয়ে দেহের ভেতরের বিভিন্ন স্তরে জমা হতে থাকে। এই অনুভূতির শক্তি কাউকে কবি বানায় আর কাউকে বানায় হিংসুটে ঘসেটি বেগম। 

সে সময়টাতেই প্রথম অনুধাবন করি আমার পাপোশ-প্রায় মা আসলে একজন উচ্চদরের ঋষি-মুনি ঘরানার মানুষ। তার জীবনে আরও যন্ত্রণাময় অধ্যায় গেছে; কিন্তু তিনি নিজেকে কখনো মানুষ হিসেবে নিচুস্তরে নেমে আসেননি। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা কবিতা লিখে গেছেন আর তার ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে ফলে যেত। আম্মার সঙ্গে দুবোনের সংঘাত ছিল প্রজ্ঞার সঙ্গে অনাধুনিকতার সংঘর্ষ। তারা দুজন পেয়েছে ফুপু-দাদির মন-মানসিকতা। এ শ্রেণির নারীকুল মনে করে পুরুষদের মন জুগিয়ে চলতে পারলেই নিজের এবং সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত এবং হ্যাঁ, অবশ্যই পরপুরুষদের থেকে দূরে থাকতে হবে যাতে প্রমাণ হয় তারা সব সতীর দল। 

আধুনিকতা চলে উত্তরণের পথে। এ পথে চলতে হয় খুব সাবধানে। বেশি জোরে ছুটতে গেলে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে আর পিছিয়ে পড়লে নিশ্চিত নিষ্পেষিত জীবন। যে পেষিত হয় সে নিজে আবার অন্যকে পেষণ করতে চায়। আম্মা আসলে জন্মেছিলেন সময়ের আগে। তাই তাকে দুর্ঘটনায় পড়তে হয়েছিল। একজন কবিকে গুম করে তাকে হাত-পা বেঁধে রাখা হয়। কবির অপরাধ ওই হাত দিয়ে কেন তিনি কবিতা লেখেন, রান্নার খুন্তি নাড়েন না। আমি আম্মাকে মুক্ত করে দিই। আম্মা আবার কবিতা লিখতে শুরু করেন, খুব যত্নে সংসারের সব দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। এমনকি হিসাবের সূক্ষ্মতাও তার নজর এড়ায় না। অনেক দিন অকেজো থাকার পর আমাদের গাড়িটা যখন এক লাখ টাকায় বিক্রি হলো তখন আম্মা গুনে বললেন, ‘এখানে তো দেখা যাচ্ছে পঁচাত্তর হাজার টাকা।’ টাকার ব্যাগ হস্তান্তর হয়েছিল মন্টু মিয়ার হাত দিয়ে। ওইটুকু সময়ের মধ্যেই মন্টু মিয়া যতটুকু পেরেছিল তাই হাতসাফাই করেছিলেন। জীবনে যা কিছু উনার সঞ্চয় তা আমাদের বাসায় আশ্রিত থাকার সময়। এরপর বাকি জীবন আর তেমন কিছু করতে পারেননি। তাহলে আমার উপর ক্ষেপবেন না কেন? 

চতুর্মুখী প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে আমি তখন বিপর্যস্ত। আব্বা আর আম্মার সম্পত্তির মধ্যে বড় বোন আর তার স্বামীর লক্ষ্যবস্তু মধ্যবিত্ত পাড়ার বাড়ি, মেজবোন আর তার স্বামী ইতোমধ্যে উচ্চবিত্ত পাড়ার বাড়ি হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছে। মন্টু মিয়ার দৃষ্টি ছিল বাড়িভাড়ার বিশাল টাকার উপর- নগদ যা পায়। এমনকি পাশের ফ্ল্যাটে থাকা বাবার বয়সী মামার কাছ থেকেও পদে পদে বাধা পেতে হয়েছে। মামার মেডিক্যালে পড়ার ইচ্ছা ছিল। নিজের মামার পরামর্শে পড়লেন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। পরবর্তীকালে যদিও সচিবালয়ের আমলা হতে পেরেছিলেন, কিন্তু ভালো বন্ধু-বান্ধব না পাওয়ার দুঃখের কথা সারাজীবন বলে গেছেন। তবে আমার মনে হয়েছে উনার স্বভাবের কারণেই এমনটা হয়েছে। আমি তখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে পড়ছি। 

বন্ধু-বান্ধব নিয়ে মজা হই-হুল্লোড় করছি। আর মামা বলে বেড়াত, ‘মেঘা তো সেজেগুজে মেডিক্যালে গিয়ে ফষ্টি-নষ্টি করে বেড়ায়।’ শুধু তা হলেও হতো, ছোট ভাই আসগরকে প্রায়ই উসকে দিত আমার বিরুদ্ধে, ‘তোমাকে বঞ্চিত করে মেঘা সব সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে।’ এমনকি মন্টু মিয়াও সুযোগ পেলে আসগরকে উসকে দিত। আসগর আমার ১০ বছরের ছোট। তখন তার বয়োসন্ধি চলছে। তার ওপর একজন ছেলে। যত যা-ই হোক পুরুষ-অহম থেকে সে তো আর মুক্ত নয়। সবাই যখন তাকে বলছে সে বঞ্চিত, সে নিজেকে বঞ্চিত ভাবছে। সবাই যখন তাকে বলছে সে আমার কারণে বঞ্চিত, তখনো সে তাই ভাবছে। পরিবারের মধ্যে আমাকে তখন এই টাইম বম্ব সমস্যার মোকাবিলা করতে হচ্ছে। 

মাঝেমধ্যে হতাশ হয়ে যখন হোস্টেলে চলে যাওয়ার কথা ভাবি তখন আম্মা আর ছয় বছরের ছোট আমার পরের ভাই শান্ত, অশ্রুসজল চোখে আমাকে বাসায় থেকে যাওয়ার অনুরোধ করে। শান্ত স্বভাবে শান্তশিষ্ট, ভালো ছাত্র। পড়ছে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিতাড়িত ব্রজেশ্বরদ্বয় তার নামেও গুজব-গুঞ্জন ছড়িয়ে বেড়াচ্ছিল। আমার মতো মানসিক শক্তি শান্তর নেই। নরম মনের ছেলে সে সহজেই কাবু হয়ে যায়। তখন আমি প্রথম উপলব্ধি করি সমস্যাটা আসলে পুরুষতন্ত্রের নয়, সমস্যাটা হচ্ছে হিংসাতন্ত্রের। আমাদের মধ্যবিত্তপাড়ার আত্মীয়-স্বজনেরা অন্তঃদহনে জ্বলছিল। নিজেরা সুস্থ-সবল দীর্ঘজীবী হবার পরও সন্তানদের প্রতিষ্ঠা করতে হিমশিম খাচ্ছে আর এরা সব তরতর করে উঠে যাচ্ছে। 

আর ওই দিকে বিশিষ্ট ভিলেজ পলিটিশিয়ান বুলবুল ভাই, ফুপুর ছেলে, দাদাবাড়ির বিশাল ভূ-সম্পত্তি নিজেদের জিম্মায় নিয়ে আসার জন্য নানান কুটকচালি করছে। আব্বা আর ফুপু ছিল শুধুমাত্র দু’ভাইবোন। ফুপা ছিল প্রায় বেকার মানুষ। ফুপুর সংসার ছিল দাদার সম্পত্তির উপর নির্ভরশীল। বুলবুল ভাই জানত কীভাবে আমাদের ভাইবোনদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে হয়। ভাইয়া আর মেজদি প্রশংসার কাঙাল। এ দুজনকে একটু মাথায় উঠিয়ে দিলেই তারা অন্য ভাইবোনদের আর কোনো তোয়াক্কা করত না। ভাইয়া যখন কথায় কথায় নিজের ভাইবোনদেরকে খারাপ ব্যবহারের মাধ্যমে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছিল তখন একদিন আমি রুখে দাঁড়ালাম। বললাম, ‘তুমি নিজে এমন কী লাট সাহেব হয়ে গেছ যে, কথায় কথায় ভাইবোনদেরকে তুলোধুনো করো?’

‘আত্মীয়স্বজন আমার প্রশংসা করে, তোমার প্রশংসা করে না।’

‘ভাইবোনদের টাকা মেরে দিয়ে যাদের দানখয়রাত করে বেড়াচ্ছ শুধু তারাই তোমার প্রশংসা করছে। তুমি কি বোঝ না সবাই চায় আমাদের মধ্যে বিভেদ তৈরি হোক?’

‘তুমি হচ্ছ এই পরিবারের প্রধান সমস্যা। তুমি বাসা থেকে বের হও।’

এরপর সত্যিই আমি পরিবারকে পেছনে ফেলে নিজের পথে বের হই। এই পর্যায়ে পরিবারের নিয়ন্ত্রণ চলে আসে আবার ভাইয়ার হাতে। বাংলাদেশির শাসনামল শেষ হলো তো শুরু হলো আরেক পাকিস্তানির শাসনামল।

তিন
পরিবার থেকে প্রায় নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে আমি তখন লন্ডনে নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করছি। সংসার করার মতো বিশ্বাসযোগ্য মানুষ খুঁজে পেয়েছি সে আর যা-ই হোক আমার পরিবারের মানুষগুলোর মতো ঝামেলাবাজ নয়। সময়মতো দুটি সুস্থ ফুটফুটে সন্তানের মা হই। পেছনে ফেলে আসা পরিবার তখন আমার কাছে অতীত। আমার নতুন পরিবারকে তখন মনের মতো করে সাজিয়ে-গুছিয়ে নিচ্ছি। দেশ থেকে মাঝেমধ্যে খবর আসে। লন্ডনে আসার প্রথম বছরেই পেলাম আম্মার মৃত্যুসংবাদ। তার দুবছর পর শান্ত বৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য জার্মানি চলে আসলো। আসগরকে একা পেয়ে শুরু হলো তিন পাকিস্তানির লোভের প্রসার। আসগর তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছিল। ওর পড়াশোনা শেষ হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য তিনজন দেখাতে পারল না। শুরু হলো মিরপুর আর গুলশানের বাড়ি নিয়ে তিনজনের কুচক্র। অনেকেই বলবে তারা হয়তো তাদের স্বামী বা স্ত্রীর ইন্ধনে এতটা লোভী হয়ে উঠেছিল। আমি সব সময় বাইরের মানুষকে দোষ দেওয়ার আগে নিজেদের দিকেই আঙুল তুলব। মিরপুরে আসগরের ঘরের দরজা ভেঙে মনসুর মিয়া গুলশানের বাড়ির দলিল নিয়ে যায় ভাইয়ার প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ে। তখন প্রথম জানতে পারি আব্বা-আম্মার টাকায় কেনা মিরপুরের ফ্ল্যাট দুটি ভাইয়া অনেক আগেই নিজের নামে করে নিয়েছে। 

আসগরকে সে ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে যেতে বলে। আসগর একদিন সত্যি সত্যিই নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। সে খবর পেয়ে দেশে গিয়ে আসগরকে খুঁজে বের করি। সবার মধ্যস্থতায় গুলশানের জমি একটি আবাসন কোম্পানিকে ফ্ল্যাট নির্মাণ করার জন্য দেওয়া হয়। এদিকে আপুনির কাছ থেকে টাকা নিয়ে মিরপুরের ফ্ল্যাটগুলো ভাইয়া তাকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন। আপুনিও খুশি। অন্য ভাইবোনদের বঞ্চিত করে শুধু ভাইয়ার সঙ্গে লেনদেন করে মিরপুরের ফ্ল্যাটগুলো কিনতে পারছে বলে তাকে বাজার থেকে অনেক কম দাম দিতে হয়েছিল। আপুনির এই স্বার্থপরতা দেখে তার উপর আমার বিশ্বাস হারিয়ে যায়। গুলশানের জমির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি পায় মনসুর মিয়া আর মেজদি। এ সময় মেজদি আমেরিকায় গিয়ে ভাইয়ার ছেলেকে এক বছর দেখাশোনা করে। মেজদির থেকে এই সুবিধা পেয়ে ভাইয়া তখন তার উপর খুবই প্রসন্ন। মনসুর মিয়া তখন যা বলে ভাইয়া তাই শোনে। মনসুর মিয়ার অনুরোধে ভাইয়া তখন ফ্ল্যাটগুলোর রেজিস্ট্রেশন স্থগিত রাখলেন। পরবর্তী সময়ে এর উদ্দেশ্য বোঝা গেল। ফ্ল্যাটগুলোর কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর মনসুর মিয়া এক এক করে ভাইবোন সবার ফ্ল্যাট দখল করতে শুরু করে দিল। 

প্যাঁচের ওপর প্যাঁচ। ভাইয়া তখন মন্টু মিয়া আর বুলবুল ভাইয়ের পরামর্শ ছাড়া চলে না। উনারাও দেখল এই পরিবারকে ধ্বংস করার এই তো সুযোগ। তাদের পরামর্শে টাকা নেওয়ার পরও ভাইয়া আপুনিকে আর দলিল রেজিস্ট্রি করে দিল না। এই অনৈতিক কাজে ভাইয়ার সাময়িক কিছু অর্থনৈতিক লাভ হয়েছিল বটে, কিন্তু আমার মুখোমুখি হওয়ার সাহস হারিয়ে ফেলল। ভাইবোনদের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন। অবশ্য ভাবিও তা চাইছিল। তখন ভাইয়ার জীবনে আমাদের সব বিঘœময় আত্মীয়স্বজন আর ভাবির ভাইবোনেরা; কিন্তু এতে শেষ রক্ষা হলো কি? কোভিডের দাবানল যখন চরমে সেই ২০২১ সালের প্রথম দিকে ভাবির বোন ভাইয়াকে জোর করে নিজেদের স্যান হোজের বাড়ি থেকে সাতশ মাইল দূরে লস অ্যাঞ্জেলেসে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে গেলেন। সেখানে একুশ দিন চরম ভোগান্তির পরে ভাইয়া মারা গেল। পেছনে রেখে গেলেন পাঁচ বছরের মেয়ে আর ১১ বছরের ছেলে। ঠিক এই সময়ে আমার আবার পরিবারে গৃহপ্রবেশ ঘটে। আবার এক বাংলাদেশির শাসনামল শুরু হয়।

চার.
করোনা ভাইরাস যত ক্ষুদ্রই হোক রক্তের মধ্যে অণুজীব-বিধ্বংসী ওষুধ পাঠিয়ে এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণুজীব মেরে ফেলা সম্ভব হয়। আবার বিজ্ঞানকে সঙ্গে নিয়ে মানব সভ্যতাকে রক্ষা করা গেল। এটি সম্ভব হয়েছিল। কারণ করোনা ভাইরাসের একটি বাস্তব অবস্থানের কারণে; কিন্তু যে ভাইরাসের অবস্থান কাল্পনিক, চিন্তাপ্রসূত, রক্তের বদলে যার বাহক অনুভূতি- বিজ্ঞান তাকে কী করে বশ করবে? ঈর্ষা, অবিশ্বাস, লোভ, হিংসা, মিথ্যা, শঠতা, অপবাদ, অস্থিরতা, কুযুক্তি, হঠকারিতা, সর্বোপরি অহমবোধ- এসব হচ্ছে এক একটি কাল্পনিক অণুজীব। দিনকে দিন এইসব ভাইরাসের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে বলে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের সংখ্যাও বাড়ছে। একটা দীর্ঘ সময় বিরতি দিয়ে আবার আমার পরিবারে ফিরে এসে দেখি- একজন আরেকজনকে টেনেহিঁচড়ে ধ্বংস করে দিতে চাচ্ছে। এই পরিবারের ধ্বংসের জন্য এখন আর মন্টু মিয়া, বুলবুল ভাই, মামা, ফুপুদের দরকার নেই। এক মনসুর মিয়াই যথেষ্ট। মেজদি ইতোমধ্যে বনানীর ফ্ল্যাটের অন্য বাসিন্দাদের মধ্যে এক বানোয়াট গল্প প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের অপরাধ জায়েজ করার চেষ্টা করছে। মনসুর মিয়া আর মেজদি মিলে নাকি আমাদের তিন অনাথ ছোট ভাইবোনদের মানুষ করেছে। এ গল্প শুনে হাসব না কাঁদব তা বোধগম্য হচ্ছিল না। মনে আছে ছাত্রাবস্থায় দেশে যখন ছিলাম তখন মেজদির প্রধান কাজ ছিল আম্মার কাছে কান্নাকাটি করে টাকাপয়সা নিয়ে যাওয়া। তার এই স্বভাবের কারণে একবার আমরা ঈদে নতুন কোনো পোশাকও কিনতে পারিনি। ওই সময়টাতে যারাই আমাদের জীবন যন্ত্রণাময় করে তুলেছিল তারাই সব দাবি করছে আমাদের পরিবারকে দেখাশোনা করার। 

আগে ভাবতাম বড় দুই বোনের মধ্যে হয়তো সম্পর্ক ভালো ছিল; কিন্তু না- তাদের মধ্যেই সবচেয়ে ‘সাপে-নেউলে সম্পর্ক’। বিশেষ করে দুই ভাই-ভাইয়ের মধ্যে। কেউ কোনো সমস্যার সমাধান চায় না- সবাই শুধু জিততে চায়। বিচার মানি, কিন্তু তালগাছটা আমার- এ মানসিকতা থাকলে তো আর আলোচনা করে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এ যেন বাংলাদেশের রাজনীতির আরেক প্রতিচ্ছবি। পুতিনের রাশিয়া হঠাৎ করেই ইউক্রেনকে আক্রমণ করে বসল। পরিবার কিংবা রাষ্ট্র- যুদ্ধের সূচনাকারী যুদ্ধবাজরা এক-একজন মানসিক রোগী। সবাই নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারে ভুগছে। 

মনসুর মিয়া আর মেজদির নিজেদের পরিবারও একদম ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তিন সন্তান অনেক আগেই লেখাপড়া ছেড়েছে এবং বর্তমানে পুরোপুরি ড্রাগে আসক্ত। মেজদি একবার শাড়ির ব্যবসা শুরু করেছিল। মনসুর মিয়া সেই শাড়িকে কেন্দ্র করে নারী-উদ্যোক্তা কোটায় কয়েক কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। দিন দিন সে ঋণের বোঝা বাড়ছে। মনসুর মিয়ার কাছে প্রতিদিনই পাওনাদাররা হানা দিচ্ছে। মনসুর মিয়ার কোনো ভাবান্তর নেই। প্রতিরাতে ক্লাবে গিয়ে মদে চুর হয়ে মাঝরাতে বাড়িতে ফিরছে। কোনো কোনোদিন ক্লাবের দালাল আরিফের সঙ্গে দামাদামি করে মেয়ের বয়সী কোনো সুন্দরীকে নিয়ে এক রাতের জন্য রেস্টহাউসে বিশ্রাম করতে যাচ্ছে। নিজের শ্বশুরবাড়ি ছাড়া মনসুর মিয়ার সমাজে পরিচয় দেওয়ার মতো আর কী আছে? যে গাছ বেয়ে মানুষ উপরে ওঠে সে গাছ কখনো গোড়া থেকে কাটতে নেই। বোকা মানুষ যখন লোভী হয় তখন তারা এই বোকামিটাই করতে থাকে। 

মেজদি সারাজীবন মনে করে এসেছে সত্যের মতো অভিনয় করে মিথ্যা কথা বলতে পারলে সবাই তা বিশ্বাস করবে- মেজদিটা কী বোকা! সে এখন চাইছে সবার জীবন তার মতোই ক্ষয়ে যাক। এখন গুলশানের ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের জীবন তারা অতিষ্ঠ করে তুলছে। ভাবছে তাদের যন্ত্রণায় পুরো অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স খালি হয়ে যাবে তখন তারা নিশ্চিন্তে সব অ্যাপার্টমেন্ট দখল করে নেবে। এই বিল্ডিংয়ের সব বাসিন্দা প্রতিনিয়ত আমাদের পরিবারকে দুষছে। আমাদের পারিবারিক সমস্যার কারণে তাদের ভোগান্তি হচ্ছে। ঠিক এই জায়গায় এসে আমি মানসিকভাবে খুব আহত বোধ করতে থাকি। 

এই অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের নাম মাধবী কমপ্লেক্স। আম্মার নাম ছিল মাধবী। সেই ১৯৬৬ সালে আব্বা এখানে একটা একতলা বাড়ি বানিয়ে নাম দিয়েছিল মাধবী ভিলা। আমার জীবন আম্মাকেন্দ্রিক। আম্মার নামের অপমান আমার পক্ষে সহ্য করা সম্ভব নয়। আমার পক্ষে সম্ভব নয় নিজের ভাইবোনের সমস্যা মিটিয়ে ফেলা, তবে অন্য বাসিন্দাদের সহায়তায় এই মাধবী ভিলায় শান্তির চেষ্টা তো করে দেখতে পারি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তখন চলছে সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রচেষ্টা, বিশ্বরাজনীতিতে চলছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সমাধান খোঁজা। আমি অতি ক্ষুদ্র মানুষ- আমার স্বপ্ন মাধবী ভিলায় শান্তি স্থাপন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //