মুক্তিযুদ্ধের গল্প

বীক্ষণ

এক.
চৌরাস্তার ডানদিকের গলির মুখে হলে রমরমিয়ে চলতো। আর গলির উল্টো মুখে একটা নতুন ব্যাংক বসেছে। লোকজনের খুব আসা যাওয়া। সেখান থেকেই মফস্বল শহরের সরু এক গলি গিয়ে মিশেছে সেই নিরিবিলি ঝিলপাড়ে। ওই যারা আড্ডা ফাড্ডা দিতে আসে, মনে হয়েছিল এ ছাড়া এখানে লোকে আর ক’কাপই বা চা খেতে আসবে- ব্যবসা হবে না। সে না হোক। নিজের বলে কথা, কারও কাছে হাত পাততে হয়নি। পৈতৃক বাড়িটা প্রায় ঝিলপাড় লাগোয়া। অনেকের সাদর আহ্বান থাকা সত্ত্বেও চাকরির চাকর হতে চায়নি। সদ্য স্বাধীন দেশ বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধ ফেরত মতিন অস্ত্র জমা দিয়ে এক রকম ঘরেই বসে ছিল।
শতেক খোয়ারি পোড়া বাড়ি, ভাঙা দেয়াল। সেখানেই জানালা দরজা ঠিকঠাক করে কোনো রকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছিল সে। সকাল বিকেল ঝিল পাড়ে গিয়ে বসে পুরনো পাকুড় গাছটার তলায়। সকালের সূর্য ওঠা আকাশ অবাক হয়ে দেখতে দেখতে তার মনে হয় এমনটা তো আগে কখনো দেখিনি। অথবা বিকেলে গোধূলির নেশা ধরানো আলো ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। সে আলো ঠিকরে পড়ছে ঝিলের জলে। সূর্য হয়তো ডুবে গেছে ওপারের গাছপালার আড়ালে কিন্তু তার কিরণ তখনো মিলায়নি। সার বাঁধা দেবদারুর উঁচু মাথাগুলো তখনো চিকচিক করে। সেসব দেখে দেখে তার আশ মেটে না। আগে তো এমন ছিল না- এখন! এখন যে স্বাধীন দেশের সূর্য। কী মায়া তার প্রতিটি আলোকচ্ছটায়। বুকের ভেতর রিনরিন করতে থাকে। এ দৃশ্য দেখে দেখে তার আরও কিছুদিন কাটতে পারত, যদি না মোমেনা তাকে খুঁজে বের করত। চার বছরের সম্পর্ক সে তো কম সময় নয়!
ঝিলপাড় থেকে এক দুপুরে মতিন ঘরে ফিরে দেখল মোমেনা নিজেই কোমরে কাপড় গুঁজে ঘর গোছাচ্ছে।

  • আমার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাউকে আমি ব্যবসা করতে দেব না। বাবার মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট দেখিয়ে যে চাকরি পেতে হয় সে চাকরি নাই করলি! বলেই ছেলের গালে কষে থাপ্পড় মারলো। ঘটনার আকস্মিকতায় জীবন কিছু বুঝে উঠতে না পেরে থমকে গিয়ে বিছানার ওপর বসে পড়ে ধপ করে। কিছুক্ষণ পর ঘর থেকে বেরিয়ে যায় সে। আর ফেরেনি

মোমেনাকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠেছিল মতিন। আর মোমেনা- ক্রাচে ভর দেওয়া মতিনকে দেখে থমকে গিয়েছিল। সে মুহূর্ত কয়েক। ছুটে গিয়ে তার ক্রাচের ওপর হাত রাখে আর একটি হাত মতিনকে জড়িয়ে ঘরে নিয়ে আসে। দু’জনের বহু দিনের জমানো অশ্রু অবাধ্য হয়ে ওঠে। কতটা সময় চলে গেছে জানা নেই। মোমেনা নিজেকে সামলে বলে- যাও, গা ধুয়ে এসো। একসঙ্গে খাব।
তাকে দেখে মনে হয় কতদিন ধরে সংসার করছে তারা।
মতিন স্বভাবে চুপচাপ ধরনের, কিছুটা রাশভারিও। এ কারণে তার বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যাও হাতে গোনা। পুরো নয়-দশ মাস তারা কে কোথায় ছিটকে পড়েছিল কেউ কারও খবর জানতো না। মোমেনা কেবল জানতো তার প্রিয় মানুষটি মুক্তিযুদ্ধে গেছে। বেঁচে থাকলে দেখা হবে একদিন। আর মতিন, যে রাতে বাড়ি ছেড়েছিল তার পরের দিনই লুটপাট করে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে ছিল শত্রুরা। সেই ডামাডোলে মোমেনার কোনো খোঁজ নিতে পারেনি। পুরো শহরজুড়ে একই তাণ্ডব চলেছিল। ছেলেবেলায় বাবাকে হারিয়ে তার একমাত্র অবলম্বন ছিল মা। মাকে কোনো রকমে গ্রামে মামাবাড়িতে রেখে আসতে পেরেছিল। তারপর নানা ঘাট-অঘাট পেরিয়ে সীমান্তের ওপারে। হাতের মুঠোয় একুশ বছরের জীবন। বারুদ। যে কোনো মুহূর্তে বিস্ফোরণের অপেক্ষায়। সে কোনো কারণ খুঁজে পায় না একই তো দেশ, দেশের মানুষ। পাকিস্তান বাহিনীর কথা ছেড়ে দিলে রাতারাতি এমন করে একদল শত্রু হয়ে উঠল কারা এই দেশে থেকে? যে তার মতো মানুষের ঘরটা পর্যন্ত চিনতো!
মতিন বরাবরই কম কথার মানুষ। আড্ডায় মিটিংয়ে সে কেবল অন্যদের কথাই শুনেছে। উড়াধাড়া মন্তব্য তো নয়ই বরং ভেতরে ভেতরে নিজের সঙ্গেই বোঝাপড়া চলত। মানুষটির ভেতর রাগ যন্ত্রণা, ভালোবাসা ঘৃণা কেবল চোখের দিকে তাকালেই বোঝা যেত। সে বোঝা অল্প ক’জনই বুঝতো। সেই অল্প ক’জনার মধ্যে মোমেনা।
মোমেনা মতিনকে বুঝতো। মানুষটি কোনো আবেগ প্রকাশ করতে পারে না। সে বুঝে ছিল এই মানুষটি কোনো দিনই তাকে বলবে না ভালোবাসি, চলো ঘর বাঁধি। আজও বলল না এই কঠিন সময় কোথায় কীভাবে পার করেছ। শুধু চোখের দিকে তাকিয়ে মোমেনাকে পড়ে নিয়েছিল সে।
কলেমা পড়েই বিয়ে করেছিল তারা। তারপর পেরিয়ে যায় প্রায় এক যুগেরও বেশি। মোমেনা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিল সন্তানের আশা। ভেতরে ভেতরে চেষ্টা চূড়ান্ত করে ছেড়েছিল। এরকম সময়ে একরকম মনের অজান্তেই কখন মরুভূমির বুকে শ্যামলের আস্তরণ বিস্তৃত হয়েছিল মোমেনার শুকনো গর্ভে। সে যেন স্বপ্নের মতো এখনো। ঝিল পাড়ের সামান্য চায়ের একচালা দোকান, সামনে দুটি তাল তক্তার বেঞ্চ, সামান্য আয়। ওই দিয়েই সংসার, ছেলের লেখাপড়া চলে গেছে টেনেটুনে। সে মোমেনার হাতের গুণেই বলতে হবে। কেউ কেউ তো বলে ফেলে সংসার সুখী হয় রমণীর গুণে। এ প্রবাদ নিশ্চয়ই তোমার জন্যই সার্থক। মোমেনার ছন্দময় সংসার, ছন্দপতন ঘটল ছেলের চাকরি খোঁজার সময় থেকে।

দুই.
মতিন সন্তানের নাম রেখেছিলেন জীবন। বংশের একমাত্র প্রদীপ বলে তাকে নিয়ে কোনো আদিখ্যেতা করেনি ওইটুকু ছাড়া। আদিখ্যেতা ছিল না ফেলে আসা যুদ্ধের মাঠে একদল সহযোদ্ধার জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন বিপন্ন করে তোলার ঘটনা বলা নিয়ে। কোনো দিনও আসর সরগরম করেনি বীরত্বের কথা বলতে গিয়ে। পা হারিয়ে ছিল এক গেরিলা যুদ্ধে, সেও প্রায় মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে। যুদ্ধ মানেই তো রক্তের হলি খেলা আর মৃত্যু। তার চিকিৎসা হয়েছিল আগরতলার বিশ্রামগঞ্জের মেলাঘরের এক অস্থায়ী হাসপাতালে। পরে আরও বড় জায়গায়। সে চিকিৎসা না পেলে হয়তো মারাই যেত। যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত সৈনিককে শহীদ বলা হয়। সেই ভালো ছিল! এখন আফসোস হয় সেই কাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর জন্য। অথচ সেদিন বেঁচে যাওয়াটাকে জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বলে মনে করেছিলেন মতিন।
গুলিবিদ্ধ পাটি হারিয়ে পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধার খাতায় নাম লেখায় মতিনের চরম আপত্তি ছিল। যথাস্থানে গিয়ে সে নাম এক সময় কাটিয়েও এসেছিলেন।
 হারু চেয়ারম্যান এক বিকেলে চা খেতে এলো তার দোকানে। এক কাপ চা নিয়ে কথাটা পারল।
-মতিন, তুমি যে মুক্তিযোদ্ধা সে তো আমরা জানি, তুমি আমাদের গর্ব।
লোকে তোমারে সমীহ-সম্মান করে। জানো তো সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা দিতাছে। একজন শিক্ষিত মানুষ তুমি, মুক্তিযোদ্ধা হয়েও চায়ের দোকান চালাও। কত কষ্টের সংসার তোমার। আমি চাই তুমিও এই সম্মানি ভাতা পাও। তোমার তো যোদ্ধার সার্টিফিকেট আছেই। ওইডা কাইল আমারে দিও। আমিই সব ব্যবস্থা করে দিমুনে।
মতিন কিছুই বলে না। কেবল তার পলকহীন চোখ দুটি স্থির হয়েছিল জ্বলন্ত চুলোটার ওপর। বোধহয় মণিদুটি তার ছিটকে বেরিয়ে আসবে। নাড়ি ছেঁড়া রক্তাক্ত হওয়া নবজাতক মায়ের বেদনা, সম্মান এই জংলিরা কী করে বুঝবে? এই জংলি শূকররা তো মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে বাণিজ্য করার গন্ধ পেয়ে গেছে। এই বাণিজ্য করার জন্য ওত পেতে আছে এই রকম হারু চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে একেবারে ওপর তলার সরকারি কর্মকর্তা পর্যন্ত।
কাপটা বেঞ্চের ওপর রেখে চায়ের দাম না দিয়েই যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েও ঘুরে দাঁড়ায় হারু চেয়ারম্যান। তারপর মুখটা মতিনের আরও কাছে এনে ফিস ফিস করে বলে শোন অল্পবিস্তর টাকাকড়ি দিও। বুঝোই তো ওইখানে টাকাকড়ি ছাড়া কোনো ফাইল নড়ে না।
মতিনের আর সহ্য হয় না। তার বলিষ্ঠ দেহের লম্বা হাতটি সাড়াশির মতো বাড়িয়ে হারু চেয়ারম্যানের কলারটি নাগালের মধ্যেই পেয়ে গিয়েছিল। হ্যাচকা টানে আরও একটু কাছে এনে হারুর মুখটা জ্বলন্ত চুলোর মধ্যে ঠেসে ধরতে চেয়েছিল; কিন্তু সেটি না করে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল দূরে। ঝিলপাড়ের অনেক মানুষই সেদিন দেখেছিল এ দৃশ্য।
হারু মাটি থেকে উঠে গায়ের ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে চিল চিৎকার গলায় বলে চলে-
-আমি তোকে দেখে নেব। তুই কাজটা ঠিক করলি না। আমার গায়ে হাত দেওয়া।
বলতে বলতে মতিনের চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয় হারু চেয়ারম্যান।
দূরে ঝিলপাড়ের ওপারে কোথাও সূর্য ডুবছে। দিনের আলো ম্লান হবার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ছে শেষ কার্তিকের কুয়াশার নিবিড়তা। ঝিলের জল শুকিয়ে পাড় জেগে উঠেছে অনেকটাই দুর্ভিক্ষের জাতা কলে পড়া মানুষগুলোর বুকের হাড়-পাঁজরার মতো। সেখানে কেউ কেউ বর্শি ফেলে বসে আছে। মানুষগুলোকে স্পষ্ট চেনা যায় না। মতিন সেখানে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে মাথাটা ঠাণ্ডা করে। তারপর বাড়ি ফেরে ক্রাচে মৃদু শব্দ তুলে।
 
তিন.
সেদিন বড় ক্লান্তিতে মতিন সন্ধ্যার মুখেই বাড়ি ফেরে। জীবন একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিল ঢাকায়। ফিরেছে বোধ হয়। জীবন নিজের পায়ে দাঁড়ালে সে চিন্তা মুক্ত হয়। তিল তিল করে ওকে গড়ে তোলার আনন্দ সার্থক হয়। ওর মুখের দিকে তাকালে সব কষ্ট ভুলে যায় মতিন। জীবনের মধ্যেই যেন বাংলাদেশটাকে দেখে সে। সেই মূল্যবোধ দিয়েই তো মোমেনা ছেলেকে বড় করেছে। মায়ের সঙ্গেই সে বেশি খোলামেলা, তার সঙ্গেই যত আবদার। বাবাকে সে ভালোবাসে; কিন্তু অন্তর্মুখিতার জন্য ঘনিষ্ঠ হতে পারে না।
 ঘরে না ঢুকে খোলা বারান্দার বেঞ্চটাতে গিয়ে বসে। হাওয়া আসছে। হাওয়াতে কেমন একটা শিরশিরানি ভাব এসেছে। শীত এসে পড়ল বলে।
বাইরে থেকেই শুনতে পায় মা ছেলের কথা। শুধু কথা বললে ভুল হবে, একরকম কথা কাটাকাটিই চলছে।
- মা তুমি বুঝতে পারছো, আমার একেবারে হওয়া চাকরি। ভালো বেতন, কোয়ার্টার, কিছুদিন পর অফিস থেকে গাড়ি পাব।
- ভালোই তো। তোমার এরকম একটা চাকরি হতে যাচ্ছে, সে তো সৌভাগ্যের।
- কিন্তু...
- কিন্তু কী?
- আমি যে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান তার প্রমাণ দিতে হবে।
- তাতে কি তোমার সন্দেহ আছে?
- কী আশ্চর্য, সন্দেহ কেন হবে। বাবা যে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তার প্রমাণ লাগবে। মানে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট দেখাতে হবে।
- জীবন, তোমার এই চাকরিটা যদি না-ও হয় তবু আমি তোমার বাবার সামনে একথা তুলতেই পারব না। উনি খুব কষ্ট পাবেন। রেগে যাবেন।
- কেন মা? আমি ঢাকায় চাকরি করলে তোমরা কি আমার সঙ্গে থাকবে না? আমি কি তোমাদের এখানে ফেলে রেখে যাব?
- সে পরের কথা, তবে ...
জীবন অধৈর্য হয়ে ওঠে। মাথার চুল ছেঁড়ার জোগাড় তার।
- বাবা যে র‌্যাংকের মুক্তিযোদ্ধা সেরকম মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকা শহরে যে সান-শওকতের সঙ্গে আছে, তা তোমরা চিন্তাই করতে পারবা না। থাকলা তো সারাজীবন এই ভাঙা বাড়িতে। আর বাবা মুখগুঁজে পড়ে থাকল ওই ছাপড়া চায়ের দোকানে। কী পেয়েছে জীবনে? এখন যদি একটু সুখের মুখ দেখতে চাই তাতে দোষের কী? কত মানুষ কত কী করছে আর... বাবা তো আমাকে অন্যায়ভাবে জোগাড় করা মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট দেবে না। দেবে তার অরিজিনাল সার্টিফিকেট। সেটা তার ছেলেকে দিতে অসুবিধে কোথায়? ছেলে-মেয়ের জন্য মানুষ কত কী করে।
- তুই থামবি?
- কোথায় রেখেছে কে জানে। সারা ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজলাম। সার্টিফিকেটটা দেখাতে পারলেই চাকরিটা কনফার্ম।
মা-ছেলের কথার মধ্যে ঘরে ঢোকে মতিন।
- তাই বুঝি ঘরটা এত এলোমেলো?
ক্রাচে ভর দিয়ে ছেলের সামনে এসে স্থির হয়ে দাঁড়ালেন মতিন।
- আমার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাউকে আমি ব্যবসা করতে দেব না। বাবার মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট দেখিয়ে যে চাকরি পেতে হয় সে চাকরি নাই করলি! বলেই ছেলের গালে কষে থাপ্পড় মারলো। ঘটনার আকস্মিকতায় জীবন কিছু বুঝে উঠতে না পেরে থমকে গিয়ে বিছানার ওপর বসে পড়ে ধপ করে। কিছুক্ষণ পর ঘর থেকে বেরিয়ে যায় সে। আর ফেরেনি।
মোমেনা ও মতিন বড় একা হয়ে যায়। সারাদিনে যে দু’চারটে কথা বলতো, তাও এখন বন্ধ। একদিন হঠাৎ করেই চা দোকান থেকে ফিরে মোমেনাকে সামনে বসিয়ে জানতে চাইলো, কেন এত অপমান বলতো, ওই এক টুকরো কাগজের জন্য। ও তো আমি কবেই পুড়িয়ে ফেলেছি। সেই যেদিন হারু চেয়ারম্যান চেয়েছিল।
চেয়ারম্যানের গায়ে হাত তোলার জন্য মাসখানেক জেল হাজত হয়েছিল তার।
বাড়ি থেকে জীবনের চলে যাওয়াটা সহ্য করতে পারেননি মতিন। মরতে মরতে একবারে তলানিতে এসে ঠেকেছিলেন।
এক সন্ধ্যায় বাইরে থেকে এসে মতিন ঝুপ করে শুয়ে পড়েছিলেন বিছানায়। মোমেনাকে ডাকারও বোধহয় ফুরসত পাননি।
চার.
সকাল থেকেই ঝিলপাড়ের মাঠটি লোকে লোকারণ্য। সে অরণ্যের সামনে লাল-সবুজের পতাকায় মোড়ানো একটি কফিন। সে কফিনের সামনে দাঁড়িয়ে একদল সেনা অফিসার গার্ড অব অনার দিচ্ছেন।
ভিড়ের মধ্যে থেকে সে দৃশ্য দেখার জন্য জীবন আরও খানিকটা মাথা উঁচু করার চেষ্টা করে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //