বিড়াল ও দৈত্য

স্টিভেন জয়েসকে জেমস জয়েস

প্রিয় স্টিভি

কিছু দিন আগে তোমাকে মিষ্টি ভরা ছোট্ট একটা বিড়াল পাঠিয়েছিলাম। বুজেন্সির সেই বিড়ালের গল্পটা তুমি হয়তো জানো না। 

ফ্রান্সের সবচেয়ে দীর্ঘ নদী লোয়ার তীরে ছোট্ট শহর বুজেন্সি। ফ্রান্সের নদীগুলোর মধ্যে এটি খুব প্রশস্তও। বুজেন্সিতে লোয়ার বিস্তার এত বেশি যে এক তীর থেকে অন্য তীরে যেতে তোমাকে অন্তত এক হাজার কদম হাঁটতে হবে। 

অনেক দিন আগে বুজেন্সির মানুষ নৌকায় এই নদী পার হতো। তখন এই নদীর ওপর সেতু ছিলো না। নিজেরাও একটি সেতু নির্মাণ করতে পারছিলো না, আবার কাউকে দিয়ে যে নির্মাণ করাবে তেমন অর্থও তাদের ছিলো না। পারাপারের জন্য নৌকা ছাড়া তাহলে আর উপায় কী?

তখন একটা দৈত্য ছিলো। দৈত্যটা সব সময় খবরের কাগজ পড়তো। বুজেন্সির লোকজনের দুর্দশার কথা শুনে সে পোশাক পরে তৈরি হয়ে নিলো। সে দেখা করতে এল বুজেন্সির মেয়রের সঙ্গে। মেয়রের নাম ছিল মশিয়ে আলফ্রেড বার্ন। তিনিও সাজগোজ খুব পছন্দ করতেন। টকটকে লাল গাউন পরতেন। গলায় সব সময় সোনার ইয়া লম্বা একটা চেইন ঝুলতো। এমনকি গভীর ঘুমে হাঁটুতে যখন মুখ গুঁজে থাকতেন তখনও কিন্তু চেইনটা তার গলায় থাকতো। 

দৈত্যটা পত্রিকায় যা পড়েছে মেয়রকে বললো। বুজেন্সির মানুষের সুবিধার জন্য একটা সেতু বানিয়ে দিতে চাইলো সে। সেতু দিয়ে মানুষ যতবার ইচ্ছা নদী পার হতে পারবে। এমন চমৎকার সেতু বানাবে যা আগে কোনোদিন কেউ বানায়নি। সেতুটা বানাবে সে মাত্র এক রাতে। এমন একটা সেতু নির্মাণের জন্য তাকে কত টাকা দিতে হবে মেয়র জানতে চাইলেন। 

‘কোনো টাকা লাগবে না’, বলল দৈত্যটা, ‘আমি শুধু চাই, যে প্রথম এই সেতু পার হবে সে হবে আমার।’

‘বেশ,’ বললেন মেয়র।

রাত নেমে এল। বুজেন্সির মানুষ বিছানায় গেল এবং ঘুমিয়ে পড়লো।

সকাল হলো। তারা ঘুম থেকে উঠে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠলো: ‘ও লোয়া, তোমার বুকে এ কি চমৎকার সেতু!’ নদীর ওপর কঠিন পাথরে গড়া সুন্দর সেতুটি দেখতে সবাই ছুটে এলো। ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকলো। সেতুর অন্য মাথায় দাঁড়িয়ে ছিলো দৈত্য। অপেক্ষায় ছিলো। যে প্রথম সেতুটা পার হবে তাকেই নিয়ে নেবে। কিন্তু দৈত্যের ভয়ে কেউ সেতুটা পার হচ্ছিলো না।

তখন বিউগলের আওয়াজ শোনা গেলো। এটা লোকজনের জন্য চুপ করার সংকেত। সেই বিখ্যাত লাল গাউন আর সোনার চেইন পরা মেয়র আলফ্রেড বার্ন এসে দাঁড়ালেন। তাঁর এক হাতে এক বালতি পানি আর অন্য হাতে একটা বিড়াল। তাকে দেখে দৈত্যটি সেতুর ওপার থেকে নাচানাচি বন্ধ করলো। দূরবীনটি তুলে নিয়ে সেটির ভিতর দিয়ে তাকালো। লোকজন নিজেদের মধ্যে কানাকানি শুরু করলো। বিড়ালটি চোখ তুলে মেয়রের দিকে তাকালো। বুজেন্সি শহরে এই অনুমোদন ছিলো যে, বিড়ালও মেয়রের দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারবে। মেয়রের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তো বিড়ালও ক্লান্ত হয়ে যেতে পারে। যে কারণে বিড়ালটি মেয়রের গলার সোনার চেইন নিয়ে খেলতে শুরু করলো। 

মেয়র যখন সেতুর মাথায় উঠে দাঁড়ালেন সব পুরুষ একেবারে দম বন্ধ করে ফেললো। কথা বলা থেমে গেলো সব নারীর। মেয়র বিড়ালটিকে সেতুর ওপর নামিয়ে রাখলেন আর কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই- ঝপাৎ! বালতির সবটুকু পানি একবারে ঢেলে দিলেন বিড়ালের ওপর। দৈত্য আর বালতির পানির মধ্যখানে দাঁড়িয়ে বিড়ালটি এক মুহূর্তে মন ঠিক করে নিলো। কান দুটি পেছনে পেতে রেখে প্রাণপণে ছুটলো দৈত্যের দিকে। 

দৈত্যটি এবার দৈত্যের মতোই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। ‘ওঁ হেঁ বুঁজেন্সির মাঁনুষ’, চিৎকার শুরু করল সে, ‘এঁখন থেঁকে সঁবাই তোঁমাদের বিঁড়ালের আঁত্মার মাঁনুষ বঁলে ডাঁকবে!’ বিড়ালের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘এঁদিকে এঁসো ছোঁট্ট বিঁড়াল সোঁনা! তুঁমি কিঁ ঠাঁন্ডা লাঁগছে, আঁমার ছোঁট্ট বিঁড়াল সোঁনা? এঁসো, এঁসো, এঁই দৈঁত্য তোঁমাকে নঁরকে নিঁয়ে যাঁবে, ঠিঁক আঁছে? সেঁখানে তুঁমি-আঁমি দুঁজনেই শিঁগগিরই উঁষ্ণতা পাঁবো।’

রাগে গজরাতে গজরাতে বিড়ালটিকে নিয়েই চলে গেলো সেই দৈত্য।

তখন থেকেই এই শহরের লোকদের বলা হয় বুজেন্সির বিড়াল। সেতুটি কিন্তু এখনো আছে। ছেলেমেয়েরা এই সেতুতে চড়ছে, হাঁটছে, খেলছে। 

আশা করি এই গল্পটি তোমার ভালো লাগবে।

ইতি

তোমার দাদু 

পুনশ্চ : দৈত্যটি প্রায় সময়ই নিজের মতো করে নিজের বেলসিব্যাবল ভাষায় কথা বলে। কিন্তু খুব রেগে গেলে সে খুব খারাপ ফরাসি ভাষাও বেশ ভালোই বলতে পারে। যারা তার কথা শুনেছে, তারা অবশ্য বলে যে, তার ভাষায় ডাবলিনের মানুষের কথা বলার ভঙ্গিটা বেশ জোরালো। 

ভাষান্তর : ষড়ৈশ্বর্য মুহম্মদ

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //