করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পোশাক শিল্পে

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু দিন দিন বেড়েই চলেছে। সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধিনিষেধ দেয়ে হয়েছে। এর আগে বিধিনিষেধের আওতার বাইরে পোশাক শিল্পকে রাখা হলেও এবার শিল্পপ্রতিষ্ঠানও বিধিনিষেধের মধ্যে রয়েছে। এতে করে উৎপাদন কাজও বন্ধ। এর এই মহামারিতে ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক (গার্মেন্ট) শিল্পে। 

পোশাক শিল্প খাতে ১৫ মাস ধরে ব্যবসা-বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হওয়ায় প্রায় ৪০১ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বেশি রপ্তানির আদেশ বাতিল হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় এর অঙ্ক ৩৪ হাজার ১২৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার বেশি। এর মধ্যে করোনার প্রথমে ঢেউয়ে বাতিল হয়েছিল ৩৫০ কোটি ডলারের রপ্তানি আদেশ। দ্বিতীয় ঢেউয়ে বাতিল হয়েছে আরো প্রায় ৫০ কোটি ডলার। অতি সম্প্রতি আরো প্রায় দেড় কোটি ডলারের রপ্তানি আদেশ বাতিল হয়েছে।

দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। বছরে এর অঙ্ক গড়ে ৩ হাজার ২৬২ কোটি ডলার। যদিও করোনার প্রভাবে এ খাতের রপ্তানি আয় কমে গেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সার্বিক রপ্তানি আয়ে। গত বছরের মার্চ থেকে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে লকডাউন আরোপিত হয়। এতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর শোরুম প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ক্রেতারা পোশাক রপ্তানির আদেশ বাতিল করে দিতে থাকে।

গত বছরের মার্চ থেকে মে পর্যন্ত সময়ে প্রায় ৩৫০ কোটি ডলারের রপ্তানি আদেশ বাতিল করা হয়। গত বছরের এপ্রিলে রপ্তানি আয় কমে যায় ৮৩ শতাংশ। ১৫ জুলাই রপ্তানিকারকদের ৫টি সংগঠনের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেওয়া এক চিঠিতে বলা হয়, গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত এক মাস কারখানা বন্ধ থাকার ফলে গত অর্থবছরের এপ্রিল থেকে জুন এ তিন মাসে রপ্তানি আয়ে ধস নেমেছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের মার্চে ১৮ দশমিক ২১ শতাংশ, এপ্রিলে প্রায় ৮৩ শতাংশ, মেতে সাড়ে ৬১ শতাংশ এবং জুনে আড়াই শতাংশ কমেছিল রপ্তানি আয়। জুলাই থেকে এ আয় সামান্য হারে বাড়তে থাকে।

গত মার্চে ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ, এপ্রিলে এসে রপ্তানি আয়ে রেকর্ড ৫০৩ শতাংশ, মে মাসে ১১২ শতাংশ এবং জুনে ১১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। জুলাইয়ে প্রথম ১৪ দিনে পোশাক রপ্তানিতে আয় হয়েছে ১৬৭ কোটি ডলার। গড়ে প্রতিদিন হয়েছে ১২ কোটি ডলার। এটিও রেকর্ড আয়। গত বছরের জুলাইয়ে প্রতিদিন গড় আয় হয়েছিল ৯ কোটি ডলার।

রপ্তানিকারকদের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেয়া চিঠিতে আরো বলা হয়, সরকারের প্রণোদনার সহায়তা নিয়ে করোনার ক্ষতি কটিয়ে উঠার জন্য যখন আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছিল, তখনই ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় ১৪ দিন রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানাগুলো বন্ধ রাখা হয়। এর সাথে ঈদের ছুটি ৩ দিন। ফিরে আসতে আরো ২-৩ দিন। সব মিলে মোট ১৯-২০ দিন কারখানা বন্ধ রাখতে হবে। ২০ দিন কারখানা বন্ধ থাকলে এক মাসের রপ্তানি শিডিউল গড়বড় হয়ে পড়ে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ৬ মাসের রপ্তানি আয়ে।

উদ্যোক্তারা বলেছেন, করোনার নিয়ন্ত্রণ করতে এখন আর লকডাউনের নামে যাতে কারখানা বন্ধ রাখতে বাধ্য করা না হয় সেই নিশ্চয়তা তারা চান। করোনাকে টিকা বা অন্য কোনো উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রেখে করোনাকে নিয়ন্ত্রণ করলে দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়া কঠিন হবে।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন গণমাধ্যমকে বলেন, চলমান লকডাউনে বস্ত্র খাতের শিল্প মালিকরা উভয় সংকটে পড়েছেন। রপ্তানি আদেশ আছে, কিন্তু কারখানা বন্ধ থাকায় তা সময়মতো ডেলিভারি দেওয়া যাবে না। এতে অর্ডার বাতিলের আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে শ্রমিকদের বেতন, বন্দর ও গ্যাস-বিদ্যুৎ বিলের জরিমানার ক্ষতি তো আছেই।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //