বাজারে পেঁয়াজের ‘ঘাটতি নেই’, শিগ্‌গিরই ‘মূল্য স্বাভাবিক হবে’

দেশের কোনো বাজারেই পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। শিগ্‌গিরই পেঁয়াজের মূল্য স্বাভাবিক হয়ে আসবে। ফলে ভোক্তাদের আতঙ্কিত হবার কোনো কারণ নেই।

ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের পর কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে গত দুই দিনে ১ হাজার ২১৯ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।খালাস হওয়া পেঁয়াজ ছাড়াও নাফ নদীতে আরো চারটি ট্রলারে ৪০০ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এসব পেঁয়াজ আজ বুধবার স্থলবন্দর দিয়ে খালাস হওয়ার কথা রয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দেশে পেঁয়াজের মূল্য ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ট্রাক সেলে ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ন্যায্যমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে। এতোদিন ১৬টি ট্রাকের মাধ্যমে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি হতো, আজ থেকে ট্রাক সেলের সংখ্যা ৩৫টিতে উন্নীত করা হয়েছে। এতে স্বল্প আয়ের মানুষ ন্যায্য মূল্যে পেঁয়াজ ক্রয় করার সুযোগ পাচ্ছেন।

সরকারি হিসেব মতে, দেশে বছরে মোট পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টন। এরমধ্যে গত ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ২৩.৩০ লাখ মেট্রিক টন। এর ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ স্বাভাবিকভাবেই নষ্ট হয়। পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বছরে আমদানি হয়ে থাকে ৮ থেকে ১০ লাখ মেট্রিক টন। হিসেব মোতাবেক দেশে পেঁয়াজের কোনো সংকট নেই। 

দেশের পেঁয়াজ সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোর পাইকারি হাট-বাজারে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে, ফলে সারা দেশের হাট-বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ পর্যাপ্ত। ফলে বাজারে দেশি ও আমদানিকৃত পেঁয়াজের সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই।

সহজ পরিবহনের কারণে সারা বছরই ভারত থেকে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। ভারতের মহারাষ্ট্র ও অন্য এলাকায় বন্যার কারণে পেঁয়াজের ফলন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে কিছুদিন আগে রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারত প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের মিনিমাম এক্সপোর্ট প্রাইস (এমইপি) নির্ধারণ করে দেয়। আগে প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের আমদানি মূল্য ছিল কম-বেশি ২৫০ মার্কিন ডলার। গত ১৩ সেপ্টেম্বর ভারত তা ৮৫০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করে দেয়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে ভারত কর্তৃপক্ষ পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে। 

বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে এলসি ও বর্ডার ট্রেডের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছে। বাংলাদেশ মিশর ও তুরস্ক থেকেও এলসির মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছে। এই পেঁয়াজ দেশে পৌঁছাতে শুরু করেছে, অল্প সময়ের মধ্যে দেশের বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ স্বল্পমূল্যে পাওয়া যাবে। এছাড়া ভারত থেকে ও দেশে উৎপাদিত নতুন পেঁয়াজ শিগ্‌গিরই বাজারে আসবে।

বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করায় বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। পেঁয়াজ আমদানি ক্ষেত্রে এলসি মার্জিন ও সুদের হার হ্রাস করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক পদক্ষেপ নিয়েছে।

স্থল ও নৌ বন্দরগুলোতে আমদানিকৃত পেঁয়াজ দ্রুত ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খালাসের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ও ফোনে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। সে মোতাবেক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমদানিকৃত পেঁয়াজ খালাস করা হচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে পেঁয়াজ দ্রুত ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পৌঁছানোর জন্য সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পেঁয়াজ পরিবহন নির্বিঘ্ন করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের ভোমড়া, সোনা মসজিদ, হিলি ও বেনাপোল বন্দরে পেঁয়াজ আমদানি নির্বিঘ্ন করতে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। 

সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিংয়ের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের ১০ জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা গতকাল মঙ্গলবার থেকে কক্সবাজার, চট্রগ্রাম, ফরিদপুর, রাজবাড়ি, যশোর, দিনাজপুর, পাবনা, সাতক্ষীরা, সিরাজগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার বাজারগুলোতে তদারকি শুরু করেছেন।

এছাড়াও প্রতিটি জেলা প্রশাসন থেকেও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এলসির মাধ্যমে মিয়ানমার, মিশর ও তুরস্ক থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বন্দরে খালাস করা শুরু হয়েছে। এছাড়া মিয়ানমার থেকে বর্ডার ট্রেডের মাধ্যমে টেকনাফ বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত পেঁয়াজ এবং দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি হাটগুলোতে বিক্রিত পেঁয়াজ দ্রুত সারা দেশে নির্বিঘ্নে পৌঁছে যাচ্ছে। পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //