ক্রিকেটের লড়াইয়ে জড়ালেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান

খেলাধুলায় প্রতিপক্ষ দুই দলের কোচ- খেলোয়াড়দের কথার লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়া নতুন কিছু নয়। হরহামেশাই এমনটা ঘটে। তবে কোনো একটা ম্যাচ নিয়ে প্রতিপক্ষ দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের বাগযুদ্ধে জড়ানোটা বড় খবরই।

চলমান টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এমনই এক বড় খবরের জন্ম দিয়েছেন জিম্বাবুয়ের রাষ্ট্রপতি এমারসন ডাম্বুডজো নানগাগাওয়ার ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। দুই দলের ম্যাচ নিয়ে কথার লড়াইয়ে জড়িয়েছেন দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। তবে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের বাগযুদ্ধটা এখনো রসিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর মুখোমুখি হয় পাকিস্তান ও জিম্বাবুয়ে। পার্থের যে ম্যাচে শক্তিশালী পাকিস্তানে ১ রানে হারিয়ে দিয়েছে জিম্বাবুয়ে। স্বাভাবিকভাবেই দলের পারপরম্যান্সে উচ্ছ্বসিত জিম্বাবুয়ের রাষ্ট্রপতি এমারসন ডাম্বুডজো নানগাগাওয়া। সঙ্গে সঙ্গেই দলকে অভিনন্দন জানিয়ে একটা টুইট করেন তিনি।

টুইটে শুধু নিজ দলকে অভিনন্দন জানানোয় সীমাবদ্ধ থাকলে কোনো কথাই ছিল না; কিন্তু জিম্বাবুয়ের রাষ্ট্রপতি টুইটে পাকিস্তানের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটাও দিয়েছেন! এমনিতেই পাকিস্তানিরা পরাজয়ের শোকে কাতর। তার ওপর জিম্বাবুয়ের রাষ্ট্রপতি আবার রসিতকার ছলে পাকিস্তানকে একটা খোঁচাও মেরেছেন।

গোলটা বেঁধেছে এখানেই। প্রতিপক্ষ দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের এমন রসিকতাকে নিরবে মেনে নেননি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। সঙ্গে সঙ্গেই রসিকতার জবাব দিয়েছেন।

ক্রেগ আরভিনের দলকে অভিনন্দন জানিয়ে এমারসন লেখেন, ‘জিম্বাবুইয়ানদের জন্য দুর্দান্ত এক জয়। শেভরনদের অভিনন্দন।’ এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল; কিন্তু জিম্বাবুয়ের রাষ্ট্রপতি পাকিস্তানকে খোঁচা মেরে পরের বাক্যটি লেখেন এভাবে, ‘পরের বার আমরা আসল মিস্টার বিনকে পাঠাব।’

এমারসন ডাম্বুডজো নানগাগাওয়ার এই রসিকতার মাধ্যমে কী বোঝাতে চেয়েছেন বুঝতে পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের একটুও সমস্যা হয়নি। কারণ পাকিস্তানের কৌতুকশিল্পী আসিফ মুহাম্মদের সুবাদে গত কয়েক দিন ধরেই নতুন করে খবরে উঠে এসেছে বিখ্যাত মিস্টার বিন চরিত্রটি। যে চরিত্রের আসল রূপকার ব্রিটিশ অভিনেতা রোয়ান অ্যাটকিনসন।

পাকিস্তানি শিল্পী আসিফও মিস্টার বিনের চরিত্র অনুকরণের জন্য বিখ্যাত। তাঁকে নিয়ে বিস্তর চর্চাও হচ্ছে। অনেকেই তাঁকে ‘নকল মিস্টার বিন’ বলে ডাকেন। বিষয়টি জিম্বাবুয়ের রাষ্ট্রপতির অজানা নয়। সে দিকে ইঙ্গিত করেই পাকিস্তানে ‘আসল মিস্টার বিন’কে পাঠানোর কথা বলেছেন তিনি।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে একবার জিম্বাবুয়েতে গিয়ে অনুষ্ঠান করেছিলেন আসিফ। তাই জিম্বাবুইয়ানদের কাছে তিনি খুবই পরিচিত মুখ।

জিম্বাবুয়ের রাষ্ট্রপতির এই রসিকতা যেন পাক প্রধানমন্ত্রীর কাছে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো লেগেছে। প্রতিপক্ষ দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের এমন রসিকতা খানিকটা খেপিয়েও তোলে শেহবাজ শরিফকে। তাই পাল্টা তীর ছুঁড়তে একদমই দেরি করেননি পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী।

পাল্টা জবাব হিসেবে শেহবাজ শরিফ লিখেছেন, ‘আমাদের হয়তো আসল মিস্টার বিন নেই; কিন্তু ক্রিকেটের আসল স্পিরিট রয়েছে। আমাদের পাকিস্তানিদের মজার একটা অভ্যাস রয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতিতে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে জানি। রাষ্ট্রপতি মহোদয়, অভিনন্দন। আপনাদের দল সত্যিই ভালো খেলেছে।’

দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের লড়াই আপাতত এ পর্যন্তই। কারণ পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীর জবাব দেওয়া টুইটের জবাবে জিম্বাবুয়ের রাষ্ট্রপতি কিছুই বলেননি।

তবে একটা ক্রিকেট ম্যাচ ঘিরে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের লড়াইটা যতটুকু হয়েছে, তাতে ভালো মজাই পেয়েছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। বহু মানুষ তাঁদের পক্ষে-বিপক্ষে মন্তব্য করেছেন।

কেউ কেউ আবার এমন আশাও প্রকাশ করেছেন, ক্রিকেট মাঠের উত্তাপ রাজনীতির অন্দরে পৌঁছলেও দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারবে না। তা ছাড়া এমারসন ডাম্বুডজো নানগাগাওয়া ও শেহবাজ শরিফের মধ্যে তিক্ততার বীজও বুনতে পারবে না।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //