চাপা কষ্ট হকি খেলোয়াড়দের!

বাংলাদেশে হকি এক সময় দারুণ জনপ্রিয় খেলা ছিল। ঘাসের মাঠ থেকে সিনথেটিক টার্ফে যাওয়ার পর থেকে কেমন ম্রিয়মাণ হতে থাকে খেলাটি। 

তৃতীয় জনপ্রিয় খেলা হলেও এখন আর হকিকে হিসাবের মধ্যেই আনতে চায় না কেউ। মাঠের চেয়ে টেবিলের লড়াইয়ের কারণে খেলাটি তার হৃত গৌরব হারিয়েছে। দেশের হকির শীর্ষস্থানীয় খেলোয়াড়দের রুটি-রুজির সবচেয়ে বড় মাধ্যম প্রিমিয়ার লিগ; কিন্তু এই লিগই সর্বশেষ মাঠে গড়িয়েছিল ২০১৮ সালের জুন মাসে। 

এরপরের সময়টা যেমন হতাশার, ঠিক তেমনি কষ্টেরও। সাথে যোগ হয়েছে করোনাভাইরাস। জাতীয় দলে খেলার সময় কিছু অর্থ পেয়ে থাকলেও কোনো খেলোয়াড়কেই মাসিক ভিত্তিতে কোনো বেতন দেয়া হয় না। কষ্টে দিনাতিপাত করা হকি খেলোয়াড়দের যেন দেখার কেউ নেই। তাই প্রিমিয়ার ডিভিশন হকি লিগ নিয়ে হতাশা কাটছে না। 

এখন আগামী নভেম্বরে লিগ শুরুর বিষয়ে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে এই তারিখও নিশ্চিত নয় বলে অনেকে মনে করছেন।

স্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যেই অসহায় অবস্থায় থাকতে হয় বাংলাদেশের হকি খেলোয়াড়দের। লিগ না খেলে অবসরে কাটাতে হচ্ছে অলস সময়। কয়েক বছর আগে শামীম রেজা নামের একজন হকি খেলোয়াড় অভাবের তাড়নায় আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন। রাজশাহীর এই খেলোয়াড় তখন দেশের হকির ট্রেড মার্ক হয়েছিলেন। 

হকিতে নিয়মিত খেলা মাঠে না গড়ানোর অভিযোগ বেশ পুরনো। তবে এই মুহূর্তে যে টার্ফে হকি খেলা সম্ভব না, সেটি ফেডারেশনের মতো বুঝেছেন খেলোয়াড়রাও। যেখানে সারা দুনিয়াতে সবকিছু অচল হয়ে রয়েছে, সেখানে তলিয়ে যাওয়া হকি খেলা রয়েছে আরো বেশি অনিশ্চয়তায়। যেখানে ক্রিকেট আর ফুটবল ভার্চুয়াল কার্যক্রম থেকে মাঠের লড়াই শুরু করেছে, সেখানে হকি রয়েছে অনেকটাই অন্ধকারে। সিডিউল অনুসারে এই জুনেই জুনিয়র বিশ্বকাপের বাছাই ও এশিয়া কাপ হকি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ঢাকায়। দুটি আসরই ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত হবে। 

তবে খেলোয়াড়দের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন প্রিমিয়ার ডিভিশন হকি। এখন জুনিয়র এশিয়া কাপের পাশাপাশি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও পড়ে গেছে অনিশ্চয়তার মধ্যে। গত এক যুগে নেতৃত্বের লড়াইয়ে মগ্ন কর্মকর্তারা নিজেদের চেয়ার বাঁচাতে বেশি ব্যস্ত থেকেছেন। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। 

২০১৯ সালের এপ্রিলে আলোচিত নির্বাচনের পর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন একেএম মোমিনুল হক সাঈদ। আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ ও দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাবের এই সভাপতি গত সেপ্টেম্বরে ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িয়ে বর্তমানে দেশান্তরী। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক এই কাউন্সিলর ক্ষমতাসীন থাকার সময় বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের মতো মূল চেয়ারে বসে কয়েক মাসে অর্জন খুবই সামান্য তার। টানা অনেক মিটিংয়ে অনুপস্থিত থাকার পর অবশেষে বহিষ্কার করা হয়েছে বিতর্কিত এই সংগঠককে। 

মেয়েদের হকির পাশাপাশি স্কুল হকি শুরু করা বর্তমান কমিটির সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে; কিন্তু এতে কি খেলাটি বাঁচবে? হকি যতটা চলছে তার সিংহভাগই সার্ভিসেস দলের কারণে। কিন্তু বিভিন্ন বাহিনীতে কতদিন চলবে হকি সেই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। জাতীয় দল ও দলের বাইরে থাকা খেলোয়াড়দের খোঁজ কেউ নিচ্ছে না। 

বর্তমান কমিটির মেয়াদে ইনডোর হকি দিয়ে মাঠে রেখেছে জাতীয় দলকে। এর বাইরে যেমন কোনো লিগ খেলার সুযোগ পাচ্ছে না, ঠিক তেমনি জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাচ্ছে না রাসেল মাহমুদ জিমি, আশরাফুল ইসলাম, মঈনুল ইসলাম কৌশিকরা। ২০১৮ সালের পর লিগ আর মাঠে গড়ায়নি। 

অথচ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর মুমিনুল হক সাঈদ বলেছিলেন, তারা প্রিমিয়ার লিগকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে লিগ মাঠে গড়াবেন। 

বর্তমানে হকিকে বাঁচাতে হলে প্রিমিয়ার লিগের কোনো বিকল্প নেই। খেলোয়াড়দের চাপা কান্না যেন কর্মকর্তারা শোনেন এই দাবিই করেছেন তারা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //