রিলায়েন্স-ডিজনির দখলে যাচ্ছে ভারতের বিনোদন বাজার

ভারতের বিনোদন বাজার ইতোমধ্যেই বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম। সম্প্রতি ভারতের রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল্ট ডিজনি তাদের ইন্ডিয়া টিভি এবং স্ট্রিমিং মিডিয়া একত্রীকরণের ঘোষণা দিয়েছে। দুই বৃহৎ করপোরেশনের এই যৌথ উদ্যোগ প্রায় সাড়ে আট বিলিয়ন ডলারের মিডিয়া পাওয়ার হাউস তৈরি করতে যাচ্ছে।

এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স এই যৌথ উদ্যোগে ১.৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এতে রিলায়েন্স তার সহযোগীদের চেয়ে ৬৩ শতাংশের বেশি অংশীদারত্ব থাকবে। ডিজনি প্রায় ৩৭ শতাংশ অংশীদারত্ব রাখছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি উভয় পক্ষ এক যৌথ বিবৃতিতে এ খবর জানিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এ যৌথ উদ্যোগ হবে ভারতে বিনোদন ও ক্রীড়া ক্ষেত্রের জন্য এক শীর্ষস্থানীয় টিভি এবং ডিজিটাল স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম, যা মিডিয়া জগতের আইকনিক সব সম্পদ এক ছাতার নিচে নিয়ে আসবে।’

ব্যবসায়িক দিক থেকে রিলায়েন্স এবং ডিজনির মধ্যে রেষারেষি চরমে উঠেছিল আইপিএলের সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রির সময়। দীর্ঘদিন আইপিএলের সম্পূর্ণ সম্প্রচার স্বত্ব ছিল স্টার ইন্ডিয়ার হাতে। টিভিতে আইপিএল দেখানোর পাশাপাশি ডিজনি প্লাস হটস্টারে লাইভ স্ট্রিমিং করা হতো। কিন্তু ২০২৩ সালে আইপিএলের টিভি এবং লাইভ স্ট্রিমিংয়ের সম্প্রচারের স্বত্ব পৃথকভাবে নিলামে তুলেছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। টিভিতে সম্প্রচারের স্বত্ব স্টার স্পোর্টস ছিনিয়ে নিলেও অনলাইনে বাজিমাত করেন আম্বানিরা। বাজার টানতে তারা বিনামূল্যে আইপিএলের লাইভ স্ট্রিমিং করে। আর এর প্রভাব পড়ে টিভি সম্প্রচারে। পরে ডিজনি প্লাস হটস্টারে বিনামূল্যে ২০২৩ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ এবং এশিয়া কাপ সম্প্রচার করা হয়। এতে ‘লড়াই’ তুঙ্গে পৌঁছায়। আর এ কারণে রিলায়েন্স ও ওয়াল্ট ডিজনির মধ্যকার চুক্তিকে অনেকে অভাবনীয় মনে করছেন।

নতুন যে যৌথ প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিপ্রস্তর তৈরি হলো, তার হাতে ১২০টি টিভি চ্যানেল থাকবে। সেই সঙ্গে থাকবে দুটি অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম, ডিজনি প্লাস হটস্টার ও জিও সিনেমা। এ উদ্যোগ ভারতের ২৮ বিলিয়ন ডলারের মিডিয়া ও বিনোদন বাজারে আম্বানিকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থানে নিয়ে যাবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। শুধু তা-ই নয়, বৃহৎ বিনোদন প্ল্যাটফর্ম জাপানের সনি, ভারতের জি এন্টারটেইনমেন্ট, এমনকি নেটফ্লিক্সকেও বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিতে পারে এই যৌথ উদ্যোগ। এর আগে ১০ বিলিয়ন ডলারে সনি ও জি একত্রীকরণের প্রস্তাব এসেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সনি সম্মত না হওয়ায় এ চুক্তি আলোর মুখ দেখেনি।

বিশেষজ্ঞরা জানান, দুই প্ল্যাটফর্ম এক হয়ে যাওয়ায় ডিজিটাল এবং লিনিয়ার টেলিভিশন (টিভি) দুই ক্ষেত্রেই গ্রাহকপ্রতি গড় আয় (অ্যাভারেজ রেভিনিউ পার ইউজার) বাড়ানোর পথে হাঁটার সম্ভাবনা রয়েছে নতুন সংস্থার। পাশাপাশি বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্যও খরচ আগামী দিনে বাড়তে চলেছে বলেই মত বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞের। তাদের দাবি, ভারতের মিডিয়া ও বিনোদন শিল্পে একক বৃহৎ খেলোয়াড়ের তকমা পকেটে নিতে পারে নতুন প্রতিষ্ঠানটি। বিজ্ঞাপন থেকে মোট আয়ের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ আসত এই দুই সংস্থার ঘরে।

চুক্তির বিষয়ে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান তথা ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুকেশ আম্বানি বলেন, ‘এটি যুগান্তকারী চুক্তি, যা ভারতের বিনোদন শিল্পে নতুন যুগের সূচনা করছে। সব সময়ই আমরা ডিজনিকে বিশ্বের অন্যতম সেরা মিডিয়া গোষ্ঠী বলে মনে করি। এই যৌথ উদ্যোগ গঠন নিয়ে আমরা অত্যন্ত উত্তেজিত। এর ফলে সারা দেশে দর্শকদের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে আমরা অতুলনীয় কনটেন্ট সরবরাহ করতে পারব। রিলায়েন্স গ্রুপের অংশীদার হিসেবে আমরা ডিজনিকে স্বাগত জানাচ্ছি।’ 

মুকেশ আম্বানির স্ত্রী নীতা আম্বানি নতুন যৌথ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারপারসন হিসেবে কাজ করবেন এবং ডিজনির সাবেক নির্বাহী উদয় শঙ্কর ভাইস চেয়ারম্যান হবেন।

ওয়াল্ট ডিজনির সিইও বব ইগার বলেছেন, ‘ভারত হলো বিশ্বের সব থেকে বড় উপভোক্তা বাজার। যৌথ উদ্যোগে গঠিত এই সংস্থাকে নিয়ে আমরা উত্তেজিত। ভারতীয় বাজার এবং উপভোক্তাদের সম্পর্কে রিলায়েন্সের গভীর উপলব্ধি রয়েছে। আমরা একসঙ্গে এই দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় মিডিয়া সংস্থা তৈরি করব। এই সংস্থার মাধ্যমে আমরা গ্রাহকদের কাছে অনেক অনেক ডিজিটাল পরিষেবা এবং বিনোদন এবং ক্রীড়া সামগ্রী পৌঁছে দিতে পারব।’

ফেব্রুয়ারি মাসের শুরু থেকেই এই চুক্তি সম্পর্কে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কিছুদিন আগেই জানা যায়, ওয়াল্ট ডিজনি তাদের ভারতীয় ব্যবসার প্রায় ৬০ শতাংশ ভায়াকম১৮-এর কাছে বিক্রি করতে সম্মত হয়েছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, রিলায়েন্স এই চুক্তি আগেই সম্পন্ন করেছে; কিন্তু মুখে কুলুপ ছিল দুই কোম্পানির। অবশেষে গত মাসের শেষে সব জল্পনার অবসান ঘটে যৌথ বিবৃতিতে। তবে এই চুক্তির জন্য নিয়ন্ত্রক এবং শেয়ারহোল্ডারদের অনুমতির প্রয়োজন হবে। সেই বিচারে, চুক্তিটি চলতি বছরের শেষ ত্রৈমাসিক বা আগামী বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //