সিএএ চালু হতেই বিক্ষোভের আগুন আসামে

লোকসভা ভোটের আগেই ভারতে চালু হলো বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)। সোমবার সন্ধ্যায় মোদি সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করতেই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে আসামে।

আজ মঙ্গলবার (১২ মার্চ) রাজ্যজুড়ে হরতালের ডাক দিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। তবে সেই সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন বাতিলের হুমকিও দেন আগের দিন। 

অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (এএএসইউ) এবং অন্যান্য গোষ্ঠীগুলো মঙ্গলবার এ বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেয়। রাজ্যজুড়ে এদিন বিক্ষোভ-সমাবেশ এবং সিএএর কপি পোড়ানো হয় । আসামের ১৬টি বিরোধী দলের জোট ইউওএফএ সাফ জানিয়েছিল, সিএএ কার্যকর হওয়ার পরদিন থেকেই রাজ্যজুড়ে বন্ধ-হরতাল শুরু হবে। এদিনের বিক্ষোভে অংশ নেয় তারাও।

মোদি সরকারের সিএএ আইনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও। মঙ্গলবার উত্তর চব্বিশ পরগনার  হাবড়ার প্রশাসনিক সভা থেকে মমতা বলেন, ভোটের আগে বিজেপি বিভাজনের খেলা খেলতেই এটা করেছে। তা হলে চার বছর বসে রইল কেন? ওরা আবার বাংলাটাকে ভাগ করতে চায়। বাঙালিকে তাড়াতে চায়। এই প্রসঙ্গেই মমতা ২০১৯ সালে আসামের ঘটনার উল্লেখ করেন। তার কথায়, ২০১৯ সালে আসামে এনআরসির নামে ১৯ লাখ মানুষের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে ১৩ লাখ বাঙালি হিন্দু।

তিনি আরও বলেন, একটা কথা মন দিয়ে শুনে নিন! আপনারা কেউ নাগরিকত্বের জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন করবেন না। করলেই আপনাদের নাগরিকত্ব চলে যাবে। আপনাকে বেআইনি অনুপ্রবেশকারী বলবে। আপনার সম্পত্তি কেড়ে নেবে। ওই ফাঁদে খবরদার পা দেবেন না!

সিএএ আটকাতে সুপ্রিমকোর্টে মুসলিম সংগঠন : ২০১৯ সালে আইনে পরিণত হওয়া সিএএ-তে হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি এবং খ্রিস্টান শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হলেও সেখানে মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্তদের কথা উল্লেখ করা হয়নি। বিতর্কিত এই সিএএ আটকাতে  মঙ্গলবারই সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হলো একটি মুসলিম সংগঠন। কেরালার আঞ্চলিক দল ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ (আইইউএমএল) শীর্ষ আদালতে সিএএ নিয়ে দ্রুত হস্তক্ষেপের আর্জি জানিয়েছে। সুপ্রিমকোর্টে জমা দেওয়া আবেদনে আইইউএমএল বলেছে, সিএএ অসাংবিধানিক এবং বিভাজনের আইন।

দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর সিএএ পাশ করিয়েছিল মোদি সরকার। ওই আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো মুসলিম ধর্মাবলম্বী দেশ থেকে যদি সে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে ভারতে আশ্রয় চান, তা হলে তা দেবে ভারত। কিন্তু সিএএ-তে হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি এবং খ্রিস্টান শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হলেও সেখানে মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্তদের কথা উল্লেখ করা হয়নি। প্রায় সাড়ে চার বছর আগে সংসদের উভয় কক্ষে পাশ হওয়ার পর দেশটির তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দও অনুমোদন দিয়েছিলেন সিএএ বিলে। কিন্তু এতদিন ধরে সিএএ কার্যকর করা নিয়ে কোনো বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি। 

গত ফেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছিলেন, লোকসভা নির্বাচনের আগেই দেশে সিএএ কার্যকর হবে। শুধু তা-ই নয়, শাহ এ-ও বলেছিলেন, শিগগিরই সিএএ কার্যকর করার বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে যাবে।

সূত্র- দ্য ইকোনমিক টাইমস, হিন্দুস্তান টাইমস

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //