পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আলভির অপসারণে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন

প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিতর্কিত ভূমিকার সঙ্গে যুক্ত থাকায় পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে অসদাচরণ এবং তার দায়িত্ব পালনে "নিরপেক্ষতা" বজায় রাখতে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে আরিফ আলভির অপসারণের জন্য একটি পিটিশন দায়ের করা হয়েছে। জিও নিউজ শনিবার এ তথ্য জানিয়েছে। 

পিটিশনকারী মনে করেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার বিতর্কিত ভূমিকার পরিপ্রেক্ষিতে আলভির আর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পদে থাকা ন্যায়সঙ্গত নয়। গোলাম মুর্তজা খান নামের ওই পিটিশনকারী শনিবার সংবিধানের ১৮৪(৩) অনুচ্ছেদের অধীনে ওই পিটিশন দাখিল করেন। এতে তিনি প্রেসিডেন্টের সচিব এবং আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের সচিবকে বিবাদী হিসেবে উল্লেখ করেন। 

অভিযোগে জানা যায়, প্রেসিডেন্ট আলভি প্রয়োজন অনুযায়ী তার কাজ পরিচালনা করছেন না। আইন অনুযায়ী কাজ করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার অধীনে রয়েছেন তিনি। কিন্তু প্রেসিডেন্ট সেই ক্ষমতার অপব্যবহার করে আসছেন। তার কথা ও আচরণের মাধ্যমেও সংবিধান লঙ্ঘন হচ্ছে বলে তিনি একটি রাষ্ট্রের প্রধান হিসাবে এই অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ পদে থাকার অধিকার হারিয়েছেন। 

তিনি আরও উল্লেখ করেন, প্রেসিডেন্ট আলভি ২০২২ সালের এপ্রিলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নির্দেশে জাতীয় পরিষদ ভেঙ্গে দিয়ে দেশের পুরো রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ধ্বংসের পাশপাশি আন্তর্জাতিকভাবে পাকিস্তানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছেন। 

এর আগে আলভি সিজেপি কাজী ফয়েজ ঈসার বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের (এসজেসি) রেফারেন্স পাঠানো থেকে শুরু করে ২০২২ সালের এপ্রিলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে দায়ের করা অনাস্থা প্রস্তাবের আগেই জাতীয় পরিষদ ভেঙে দিয়েছিলেন। এর ফলে আলভি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অংশ হয়েছিলেন।

এমনকি প্রেসিডেন্ট সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের তারিখও দেননি। অথচ তিনি পুরো জাতির প্রতিনিধিত্ব করছেন। তাই তিনি পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারেন না এবং একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের পক্ষাবলম্বন করতেও পারেন না। কিন্তু তারপরেও তিনি পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফকে (পিটিআই) সাহায্য করতে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে পিটিআই-এর সভা ও রাজনৈতিক ঘরোয়া নানা কর্মসূচীর জন্য প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ব্যবহারের অভিযোগও রয়েছে। যা প্রেসিডেন্টে হিসেবে সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক। 

অন্যদিকে ‘অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যামেন্ডমেন্ট বিল’ এবং ‘পাকিস্তান আর্মি অ্যামেন্ডমেন্ট বিল’-এ স্বাক্ষর না করে তিনি তার পক্ষপাতমূলক অবস্থানকে ফুটিয়ে তুলেছেন। আবার বিভিন্ন সময় বিতর্কিত বক্তব্য রেখেও করেছেন তার পদের অবমাননা। 

পিটিশনকারী বলেন, এই কাজগুলি প্রেসিডেন্ট হিসেবে আলভিকে অযোগ্য প্রমাণিত করেছে। তিনি সংবিধানের ৫ এবং ১২ তম অনুচ্ছেদের বিধান লঙ্ঘন করেছেন। বিভিন্ন রায়ে উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণে প্রতীয়মান হয় যে, প্রেসিডেন্ট তার সাংবিধানিক ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে এড়িয়ে গেছেন কারণ তিনি সংবিধান লঙ্ঘনের পাশপাশি সংবিধান অনুযায়ী চরম অসদাচরণ করেছেন। অতএব, তিনি প্রেসিডেন্ট হিসাবে তার দায়িত্ব অব্যাহত রাখার যোগ্য নন। এমন অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের ঘোষণা করা প্রয়োজন যে আলভিকে আর প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্বে রাখা হবে না।

এদিকে তার পাঁচ বছরের মেয়াদ ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩-এ শেষ হলেও তিনি বর্তমানে সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদের অধীনে দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। 

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের এপ্রিলে বিরোধী দলগুগুলো খানের নেতৃত্বাধীন পিটিআই সরকারের বিরুদ্ধে সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব আনলে তৎকালীন জাতীয় পরিষদের স্পিকার আসাদ কায়সার অনাস্থা প্রস্তাবটিকে "অসাংবিধানিক" বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন।

সূত্র: জিওটিভি 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //