চীনা পুলিশের গোপন নথি: শ্বাসরুদ্ধকর নজরদারিতে উইঘুর জনগোষ্ঠী

চীনের উত্তর-পশ্চিমের শিনজিয়াংয়ে ৯০ লাখ উইঘুর জনগোষ্ঠীর বসবাস। অভিযোগ রয়েছে এই উইঘুরদের ওপর চীন প্রশাসন বছরের পর বছর ধরে নির্যাতন করে আসছে। প্রায় ২০ লাখ উইঘুর নারী-পুরুষ সুরক্ষিত বন্দিশিবিরে আটক রয়েছে। চীন প্রশাসন এসব বন্দিশালার নাম দিয়েছে ‘চরিত্র সংশোধনাগার’। 

উইঘুরদের ওপর এই নির্যাতন নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চীনের ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। যদিও নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে চীনা কমিউনিস্ট সরকার। তবে সম্প্রতি শিনজিয়াং পুলিশ বিভাগের ফাঁস হওয়া লাখ লাখ নথিতে স্পষ্ট উঠে এসেছে উইঘুররা কীভাবে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে; তাদের কতটা নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। 

পুলিশ বিভাগের এসব তথ্য সংবলিত ডাটাবেসটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মুক্ত সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্টারসেপ্টের হাতে পৌঁছেছে। 

দ্য ইন্টারসেপ্টের ধারণা, এই ডাটাবেসটি উরুমকি সিটি পাবলিক সিকিউরিটি ব্যুরো ও শিনজিয়াং পাবলিক সিকিউরিটি ব্যুরো তত্ত্বাবধান ও ব্যবহার করত। এছাড়া চীনের ন্যাশনাল ইন্টারনেট সেফটি অ্যান্ড প্রোটেকশন ব্যুরোর কিছু তথ্যও এ প্রতিষ্ঠানটির কাছে রয়েছে। ডাটাবেসটির সর্বমোট জায়গা ৫২ গিগাবাইট ও এখানে প্রায় ২৫ কোটি তথ্য রয়েছে; যা এর আগে কখনো প্রকাশিত হয়নি। ডাটাবেসটির সাথে সংযুক্তি থাকা প্রায় ডজনখানেক বিভিন্ন ধরনের অ্যাপসের মাধ্যমে তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব অ্যাপসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য জিংওয়াং ওয়েশি। মোবাইল ফোনে থাকা ফাইলগুলো মনিটরিংয়ে এই অ্যাপসটি ব্যবহার করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে অ্যাপসটি ডাউনলোডে উইঘুরদের বাধ্য করে চীনা পুলিশ। 

‘পিপলস সেফটি অ্যাপ’ অথবা ‘পাবলিক সেফটি অ্যাপ’ হিসেবে পরিচিত বাইশিং অ্যানকোয়ান থেকেও ডাটাবেসে তথ্য নেয়া হয়েছে। এই অ্যাপটি সাধারণ মানুষ ও পুলিশ উভয়েই ব্যবহার করে থাকে। উইচ্যাট ও আউটলুকের মতো অ্যাপস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা কুজহেং সোজো গুয়ানলি অথবা ‘ইভিডেন্স কালেকশন ম্যানেজমেন্ট’ থেকেও ডাটাবেসে তথ্য যোগ করা হয়েছে।

শিনজিয়াংয়ের বৃহত্তম শহর উরুমকির পুলিশ অটোমেশন সিস্টেম থেকে ডাটাবেসের তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। ডাটাবেসে দেখা যায়, স্থানীয় পুলিশ বিভাগের কাছে একটি রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ একে ‘ইন্টেলিজেন্স ইনফরমেশন জাজমেন্ট’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, একজন উগ্রবাদীর নারী আত্মীয়াকে সুরম্য অঞ্চল ইউনানে বিনে পয়সায় ভ্রমণ আমন্ত্রণ জানানো হয়। স্মার্টফোন ম্যাসেজিং অ্যাপ উইচ্যাটের সুবাদে এ আমন্ত্রণটি তিনি পান। ‘ট্রাভেলারস’ নামের একটি গ্রুপ এ আমন্ত্রণ জানায়। উইঘুর, কাজাখ ও কিরগিজের মতো মুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্তরা এর সদস্য হওয়ার কারণে গ্রুপটি কর্তৃপক্ষের নজরদারির মধ্যে থাকে। আর এ কারণে এ গ্রুপটি থেকে কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হলে তাকেও হয়রানিতে পড়তে হয়।

এদিকে পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, “জাতিগত ভাষায় কথা বলে এমন দুই শতাধিক সংখ্যালঘু মুসলিম এই গ্রুপটির সদস্য। তাদের মধ্যে অনেকেই বন্দিশিবিরে আটক থাকা ব্যক্তিদের আত্মীয়। সম্প্রতি অনেক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, উগ্রবাদীদের সমবেত করার একটি প্রচেষ্টা দেখা গেছে এ গ্রুপটিতে। এই বিষয়টির ওপর অনেক গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। ফলে এ প্রতিবেদন হাতে আসামাত্রই তদন্ত শুরু করতে হবে। ‘ফ্রি ট্রাভেল’ এই কার্যক্রমের পেছনে যারা রয়েছে তাদের খুঁজে বের করা ছাড়াও এর মূল উদ্দেশ্য শনাক্ত করতে হবে।”

উরুমকির শিয়েবা প্রিসিঙ্কের পুলিশ বিভাগের কাছেও এই কার্যাদেশ পৌঁছায় এবং ২০১৮ সালের এক প্রতিবেদনে এই কাজের সারমর্ম তুলে ধরা হয়। ওই আত্মীয়াকে বিনা খরচে ভ্রমণের তদন্তের সূত্র ধরে একজন উইঘুরকে আটক করা হয়। যদিও আটককৃত ব্যক্তির আগের কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড ছিল না এবং তিনি এর আগে উইচ্যাট গ্রুপের নামও শোনেননি, পর্যটক হিসেবে চীনে কখনো ভ্রমণ করেননি। পুলিশের প্রতিবেদনে এই ব্যক্তি সম্পর্কে লেখা হয় ‘তার আচরণ যথেষ্ট ভালো ও তাকে নিয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই।’ পুলিশের এরকম পরিষ্কার প্রতিবেদন সত্ত্বেও উক্ত ব্যক্তির মোবাইলটি এখনো জব্দ অবস্থায় রয়েছে ও এটিকে ‘ইন্টারনেট সেফটি ইউনিটে’ পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে পাওয়া তথ্যে আরো দেখা যায়, অনেক উইঘুরের ব্যক্তিগত বাড়িতে কর্তৃপক্ষ ক্যামেরা বসিয়েছে, বিশালাকার বন্দিশিবির তৈরি করেছে, শিশুদের প্রায় সময়ই তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে বিদ্যুতায়িত বেড়ায় আবদ্ধ প্রি-স্কুলে রাখা হচ্ছে। এছাড়া জোরপূর্বক গর্ভপাত, বন্ধ্যত্বকরণ ও জন্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে উইঘুরদের বংশবৃদ্ধি আটকে রাখা হচ্ছে। 

ফাঁস হওয়া তথ্যে আরো দেখা যায়, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ফোন, অনলাইন এমনকি আর্থিক কার্যক্রমের ওপরও পুলিশ নজরদারি চালিয়েছে। শুধু তাই নয়, সাধারণ ধর্মীয় কার্যক্রমের বিষয়গুলোতেও উগ্রবাদী বা জঙ্গি কার্যক্রম সন্দেহে কড়া নজরদারি চালানো হয়েছে। 

এছাড়া মুসলিমদের মসজিদে যাতায়াত কমাতে গৃহীত নীতিমালাগুলো কতটুকু সফল হচ্ছে, তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হতো বলে ফাঁস হওয়া তথ্যে উঠে এসেছে। স্বাস্থ্য-বিষয়ক কার্যক্রম হিসেবে চালিয়ে দেয়া ‘ফিজিক্যাল ফর অল’ নামের বায়োমেট্রিক সংগ্রহের কর্মসূচিটি মূলত পুলিশি নজরদারি ব্যবস্থারই একটি অংশ। ইলেকট্রনিক মনিটরিংয়ের যাবতীয় তথ্যও শিনজিয়াংয়ে পাঠানো হতো; যেখানে থাকত কোটি কোটি টেক্সট মেসেজ, কন্টাক্ট লিস্ট, ফোন কল রেকর্ড, ব্যাংকিং তথ্য, ফোনের হার্ডওয়্যার ও এর সাবসক্রাইবারের যাবতীয় তথ্য, উইচ্যাটে আসা যাবতীয় রেফারেন্স।

শিনজিয়াংয়ে পুলিশের নির্যাতন ও বন্দিদের বিষয়েও ডাটাবেসটিতে তথ্য রয়েছে। সেখানে বিদেশে অবস্থান করা ও রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদনকারী সাবেক উইঘুর বাসিন্দাদের সন্ত্রাসী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ‘চরিত্র সংশোধনাগারে’ থাকা বন্দিদের যাবজ্জীবন আটকে রাখার কথাও বলা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে অবশ্য পুনর্বাসন অথবা কারিগরি প্রশিক্ষণের দোহাই দেয়া হয়েছে। 

শিনজিয়াং ও তিব্বত নিয়ে কাজ করা নৃবিজ্ঞানী ও গবেষক আদ্রিয়ান জেনজ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সার্বিকভাবে এটি একটি অপ্রতিরোধ্য পুলিশি রাষ্ট্রের সাক্ষ্য দেয়। এখানে সাধারণ মানুষকে কোনো অপরাধ না করা সত্ত্বেও নানারকম সন্দেহে রাখা হয়।’

উইঘুর জনগোষ্ঠীর ওপর নজরদারির মাত্রা পরিমাপে উইচ্যাটের ট্রাভেলার গ্রুপের ঘটনাই উপযুক্ত উদাহরণ বলে মনে করেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের চীন-বিষয়ক জ্যেষ্ঠ গবেষক মায়া ওয়াং। তিনি আরো বলেন, ‘এখানে পুরোপুরি বিশৃঙ্খল অবস্থা চলছে। যেখানে কোনো কিছু না করেই অনেককে কারাগারে যেতে হচ্ছে। আর পুরো বিষয়টিই ঘটছে নিয়ম বহির্ভূতভাবে, খামখেয়ালিপনায়।’

এছাড়া স্মার্টফোন, ডিজিটাল ক্যামেরা সিস্টেম ও বিশালাকার অনলাইন স্টোরেজের মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কীভাবে সাধারণ মানুষের একটি বড় অংশকে দমন ও নজরদারিতে রাখা হচ্ছে, ফাঁস হওয়া তথ্যগুলো তার জ্বলন্ত উদাহরণ। ওয়াং এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘শিনজিয়াংজুড়ে এই ব্যাপক নজরদারির খবর আমাদের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয়। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কীভাবে অধিকার অর্জনের প্রবেশদ্বার হতে পারে শিনজিয়াংয়ের ঘটনা তা বুঝিয়ে দিয়েছে। যেখানে কোনো ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করা হয় না, সেখানকার মানুষের কোনো মানবাধিকার থাকে না। যেখানে নিজ ধর্মচর্চার কোনো অধিকার থাকবে না, নিজ চিন্তাধারা নিয়ে ভাবা যাবে না; কারণ সেখানে রয়েছে অতি নজরদারি ব্যবস্থা।’

শিনজিয়াংয়ে নজরদারি ব্যবস্থা খুবই কড়া। একে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নজরদারিতে থাকা অঞ্চল বলা হয়। এখানকার সাধারণ মানুষকে সব অবস্থাতেই পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। কিছু কিছু তথ্য সরাসরি মোবাইল থেকে; বাকিগুলো ট্যাব, সেন্সর, আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। পুলিশের ডক্যুমেন্টে উইঘুর ও তাদের ইসলাম ধর্মচর্চার বিরুদ্ধে নেয়া কার্যক্রম আক্রমণাত্মক শব্দে বর্ণনা করা হয়।

ডাটাবেসে নজরদারির আরেকটি আক্রমণাত্মক তথ্য পাওয়া গেছে। ফোন তল্লাশি কার্যক্রমে ‘সন্ত্রাসবিরোধী অস্ত্র’ নামে কিছু ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। শহরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা পুলিশ চেকপয়েন্টে এসব ডিভাইস থাকে, সাধারণ মানুষকে এসব চেকপয়েন্ট অতিক্রমের সময় তাদের সাথে থাকা মোবাইলটিকে এসব ডিভাইসে সংযুক্ত করা হয়। আর এভাবে ডিভাইসগুলোর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ফোন থেকে কনটাক্ট, টেক্সট মেসেজ নিয়ে নেয়া হয়। মোবাইলে থাকা ছবি, ভিডিও, অডিও ফাইল ও অন্যান্য ডক্যুমেন্টও চেক করা হয়। তারা উইচ্যাট ও এসএমএস টেক্সট মেসেজের তথ্যও নিয়ে নেয়। 

২০১৮ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, উরুমকির কেন্দ্রস্থল থেকে কিছুটা উত্তর-পূর্বের কুইদাওয়ান অঞ্চলে নিযুক্ত কর্তৃপক্ষ মার্চ মাসের এক সপ্তাহেই ‘সন্ত্রাসবিরোধী অস্ত্র’ ডিভাইসের মাধ্যমে এক হাজার ৮৬০ জনের মোবাইলে তল্লাশি চালিয়েছে। একই প্রতিবেদনে বলা হয়, এপ্রিলের এক সপ্তাহে এই তল্লাশির সংখ্যা ছিল দুই হাজার ৫৭। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অঞ্চলটিতে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বসবাস করছে। 

কুইদাওয়ানের মতো উরুমকির অন্যান্য অঞ্চলেও পুলিশের এ তল্লাশি চৌকি দেখা যায়। ফাঁস হওয়া নথিতে দেখা যায়, এক রাতের মধ্যেই তিন থেকে চারবার করে একজনের মোবাইল ফোন চেক করা হয়। ফলে দেখা যায়, পুলিশের ভালো কাজ থেকে সাধারণ মানুষের নজর সরে যাচ্ছে ও তারা ক্রমেই বিরক্ত হয়ে পড়ছেন এসব কর্মকাণ্ডে।

উদাহরণ হিসেবে ২০১৭ সালের একটি পুলিশ প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করা যায়। সেখানে বলা হয়, কিছু চেকপয়েন্টে বারবার ফোন তল্লাশি করার কারণে (কারও ফোন তিনবার চেক করা হয়) সাধারণ মানুষ অভিযোগ জানিয়েছে। একই বছরের অক্টোবরে প্রকাশিত ‘সোশ্যাল অপিনিয়ন ইন্টেলিজেন্স রিপোর্টে’ এ বিষয়ে বলা হয়, ‘অনেকেই বর্তমানের চেকপয়েন্টগুলোকে অতিশক্তিশালী হিসেবে দেখছেন। এক রাতের মধ্যে প্রায় সময়ই তিনবার করে মোবাইল চেক করা হয়। অতি জরুরি প্রয়োজনে এভাবে অনেক সময় নষ্ট হয়।’ দেখা যায়, এ ধরনের অযাচিত তল্লাশি এড়াতে অনেকেই পুরনো ফোনে ফিরে গিয়েছেন।

শিনজিয়াং ও উইঘুরদের নিয়ে কাজ করেছেন ডেনমার্কেন নৃতত্ত্ববিদ রুন স্টিনবার্গ। ২০১৬ সালের শেষের দিক পর্যন্ত তিনি কাশগারে গবেষণার কাজ করেছেন। স্টিনবার্গ জানান, অহেতুক তল্লাশি এড়াতে তিনি ২০১৪ সালে স্মার্টফোনের পরিবর্তে সাধারণ ফোন ব্যবহার করেছেন। অনেক উইঘুরও একই কাজ করেছে। তিনি বলেন, ‘এটি শুধু এমন নয় যে, তারা আপনার ফোনের তথ্যগুলো জেনে ফেলবে। বরং আপনাকে অপরাধী প্রমাণ করতে অনেক কিছু আপনার ফোনে প্রবেশ করাতে পারে। আর এ ধরনের ঘটনার পর কোনো উপায় থাকবে না যে, এগুলো আপনার ফোনে আগে থেকে ছিল না। ফলে এ অবস্থায় একটি স্মার্টফোন থাকা মানে অনেক বিপদ সাথে রাখা।’

উরুমকিবাসীর মোবাইল ফোনগুলোয় কতটা ব্যাপক আকারে নজরদারি করা হচ্ছে তা অনুধাবনে এই ডাটাবেস বেশ ভালো ভূমিকা রাখবে। ফাঁস হওয়া তথ্যে দেখা যায়, মাত্র এক বছর ১১ মাস সময়ের মধ্যে চীনা কর্তৃপক্ষ ১১ মিলিয়ন এসএমএস সংগ্রহ করেছে। আর এক বছর ১০ মাসে ১১.৮ মিলিয়ন ফোন কল রেকর্ড করা হয়েছে। এক বছর ১১ মাসে সাত মিলিয়ন কন্টাক্ট ও ফোন হার্ডওয়্যারের ওপর দুই লাখ ৫৫ হাজার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

শিনজিয়াংয়ের কাশগারে বসবাসকারী আব্দুওয়েলি আইয়ুপ একজন ভাষাবিদ ও কবি। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নিজের হাতে থাকা মোবাইল ফোনটির কারণে আপনি কোথাও নিরাপদ বোধ করবেন না। আপনাকে ২৪ ঘণ্টাই মোবাইল ফোন খোলা রাখতে হবে এবং যেকোনো সময় পুলিশের কল আসলে কথা বলতে হবে।’ এমনকি চ্যাট অ্যাপসগুলোও নজরদারিতে রাখা হয়। উইঘুররা নিজের ঘরে বসেও ব্যক্তিগোপনীয়তা বজায় রাখতে পারে না।

অন্যদিকে, উইঘুরদের মসজিদে যাতায়াতকে উগ্রবাদের লক্ষণ হিসেবে দেখে থাকে চীন সরকার। আর কেউ যদি নামাজ শেষে দোয়ায় চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রশংসা না করে, তাহলে তাকে সন্দেহভাজনের তালিকায় ফেলা হয়। সম্প্রতি কিছু প্রতিবেদনে দেখা যায়, মসজিদে জনসমাবেশ কমাতে এখানে আসার জন্য সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এসব বাধ্যবাধকতা আরোপের পর চার মাসের মধ্যেই মসজিদে মুসলিমদের যাতায়াত ৮০ হাজার কমে যায়।

এসব নজরদারির পাশাপাশি উইঘুরদের বন্দিশিবিরেও আটকে রাখা হয়। যারা কারাগারে আটক রয়েছেন শুধু তাদের ওপরই নয়, তাদের পরিবারের সদস্যরাও ভুক্তভোগী। ফাঁস হওয়া একটি নথিতে বলা হয়, উরুমকির সাতটি জেলার একটিতে ৩২৬ জন শিশু রয়েছে, যাদের মা-বাবা উভয়েই অথবা একজন বন্দিশিবিরে আটক রয়েছেন। ওই শিশুরা মানবেতরভাবে তাদের শৈশব কাটাচ্ছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //