বিতর্কিত কৃষি বিলের প্রতিবাদে কৃষকদের ভারতজুড়ে বনধ্

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের সাথে কৃষকদের সংঘাত চরমে উঠল। দিল্লি ঘিরে বসে থাকা কৃষকদের কোনো দাবি মানতে রাজি নয় সরকার। 

কৃষি আইন বাতিল করা দূরস্থান, সরকার ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি নিয়ে আইনও করার দাবি মানতে রাজি নয়।

সরকারের সাথে তিন দফা আলোচনাতেও কোনো ফল না আসার পর আজ মঙ্গলবারের (৮ ডিসেম্বর) এ বনধ্ কর্মসূচি পালনের ডাক দেয়া হলো। তবে সাধারণ মানুষের সমস্যা তৈরি না করেই বন্‌ধ পালিত হবে বলে জানিয়েছে ভারতীয় কিসান সংগঠন। 

হাজার হাজার কৃষক গত ১২ দিন ধরে দিল্লির প্রবেশপথগুলো ঘেরাও করে অবস্থান করে আছে। এরই মধ্যে দেশটির কংগ্রেস, এনসিপি, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, ডিএমকে, আপসহ মোট ১৮টি বিরোধী দল কৃষকদের এই কর্মসূচিতে সমর্থন দিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস কৃষকদের দাবি সমর্থন করলেও বনধ সমর্থন করছে না। কারণ তারা নীতিগতভাবে বনধের বিরোধী।

সমর্থন বিদেশ থেকেও আসছে। লন্ডনে কৃষকদের সমর্থনে বড়সড় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন প্রবাসী ভারতীয়রা। নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশেও বিক্ষোভ হয়েছে। বিদেশ থেকে এ হেন সমর্থন পেয়ে কৃষকরা উজ্জীবীত বলে জানিয়েছেন।

দেশটির ক্ষমতাসীন বিজেপি বলছে, যে সংস্কারের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তাতে বেসরকারি খাত কৃষিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখার সুযোগ পাবে কিন্তু এটি কৃষকদের আয়ের কোনো ক্ষতি করবে না। কিন্তু কৃষকরা এটি গ্রহণ করতে নারাজ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, কৃষকদের দাবি মানার প্রশ্নই নেই। কারণ অনেক কৃষি আইন সবদিক বিবেচনা করেই আনা হয়েছে। এর ফলে কৃষকদের সুবিধা হবে। দালালরাজ খতম হবে। কর্পোরেটগুলো কৃষিক্ষেত্রে এলে লাভবান হবে। ভবিষ্যতের কথা ভেবেই আইন করা হয়েছে। আর এমএসপি থাকবে সেটাও সরকার জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে আইন করা হবে না। এরপরেও কৃষকরা আন্দোলন করতে চাইলে করবেন। তার দায় সরকারের নয়।

সরকারের সাথে বেশ কয়েক দফা আলোচনা করে এই সার সত্যটা কৃষকরাও বুঝে গেছেন। তাই তারা ভারত বনধ ডেকেছেন। কৃষকরা তাদের শক্তি প্রদর্শন করতে বদ্ধপরিকর।

সাম্প্রতিক সময়ে পায়ে হেঁটে ও ট্রাক্টরে করে কৃষকরা দিল্লি অভিমুখে রওনা দেয়। পুলিশ দিল্লির সীমান্তে ব্যারিকেড দিলে কৃষকদের সাথে সংঘর্ষ হয়। বিক্ষোভরত কৃষকদের বড় অংশই এসেছে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা থেকে। মূলত এরাই দেশটির ধনী কৃষক সম্প্রদায়। তাদের আন্দোলনের প্রচার চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ও দেশে-বিদেশে প্রভাবশালী শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যেও।

পরে তারা শহরে প্রবেশের অনুমতি পেলেও হাজার হাজার কৃষক শহরের সীমান্তেই অবস্থান নিয়ে আছে এবং সরকার সংস্কার থেকে সরে না আসা পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান নেয়ার হুমকি দিয়েছে।

এদিকে ভারতে বিতর্কিত তিনটি আইন বাতিলের দাবিতে কৃষকরা গত ১০/১২দিন ধরে যে আন্দোলন করছেন, তার প্রতি দুনিয়াজুড়ে প্রবাসী শিখ সম্প্রদায় সমর্থন জানাচ্ছেন। নিউইয়র্ক থেকে লন্ডন, টরন্টো থেকে সানফ্রান্সিসকো, অকল্যান্ড থেকে বার্লিন- এই সপ্তাহান্তে বিশ্বের বিভিন্ন শহরে ভারতীয় দূতাবাসের সামনে শিখরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, আন্দোলনকারী কৃষকদের সমর্থনে গাড়ির মিছিল পর্যন্ত বের করছেন।

সম্প্রতি পার্লামেন্টে পাস হওয়া তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে এ আন্দোলন শুরু হয়। অব্যাহত এই বিক্ষোভে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশসহ বিভিন্ন রাজ্যে কৃষক সংগঠনগুলো সড়ক ও রেলপথও অবরোধ করেছেন।

পার্লামেন্টে পাস হওয়া যে তিনটি বিলকে ঘিরে এই আন্দোলন- তার প্রথমটিতে সরকার নিয়ন্ত্রিত পাইকারি কৃষিবাজার বা মান্ডিগুলো কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে।

দ্বিতীয় বিলটি ফসলের আগে থেকে ঠিক করে রাখা দামে চুক্তিভিত্তিক চাষ বা কনট্রাক্ট ফার্মিংয়ের পথ প্রশস্ত করবে। আর ব্যবসায়ী বা উৎপাদকরা চাল-ডাল-আলু-পেঁয়াজ ইত্যাদি কতটা মজুত করতে পারবেন, এই মুহুর্তে তার ওপর যে সরকারি নিয়ন্ত্রণ আছে তৃতীয় বিলটি সেটাই বিলোপ করবে।

বিলের স্বপক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে সিনিয়র ক্যাবিনেট মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি আবার বলেন, কৃষিমন্ত্রী থেকে শুরু করে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত বারবার নানা মঞ্চে আশ্বস্ত করেছেন, এসএসপি থাকবে- চিন্তার কিছু নেই। -বিবিসি, ডয়চে ভেলে

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //