মধ্যপ্রদেশে গরু এবার গরু মন্ত্রণালয়

ভারতের মধ্যপ্রদেশে গরুর জন্য এবার গড়ে তোলা হলো আলাদা গরু মন্ত্রণালয়। আলাদা অভয়ারণ্য তৈরি হচ্ছে এবং গরুর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বসানো হবে কর।

ভারতে এই প্রথম গরুর জন্য আলাদা মন্ত্রিসভা। যার নাম দেয়া হয়েছে কাউ ক্যাবিনেট। তৈরি করেছেন মধ্যপ্রদেশের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান। তবে এখানেই থামেননি তিনি। গরুদের বিচরণের জন্য তৈরি করছেন অভয়ারণ্য। আর গোশালা তৈরির জন্য তিনি এবার কর বসাবেন বলে জানিয়েছেন। 

দেশের অন্যতম গরিব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এখন গরুর জন্য যাবতীয় কর্মসূচি হাতে নিচ্ছেন। বিরোধীদের তো বটেই, গরু-রাজনীতিতে তিনি অন্য বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীদের থেকেও অনেকটাই এগিয়ে গেছেন। এই সব সিদ্ধান্তের জন্য তিনি সঙ্ঘ পরিবারের কাছ থেকেও সাধুবাদ পেতে পারেন।

গরু ক্যাবিনেট গঠনের সিদ্ধান্ত অভিনব। মোট ছয়টি মন্ত্রণালয়কে রাখা হয়েছে গরু ক্যাবিনেটে। পশুপালন, বন, পঞ্চায়েত, কৃষি, স্বরাষ্ট্র ও অর্থ। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, গরুর রক্ষণাবেক্ষণ ও কল্যাণের বিষয়টি দেখবে ওই গরু মন্ত্রিসভা। ইতিমধ্যেই মন্ত্রিসভার একটি বৈঠক হয়ে গেছে। সেখানে রাজ্য জুড়ে গোশালা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

কিন্তু গরুর কল্যাণের জন্য পয়সা আসবে কোথা থেকে? গোশালা তৈরি, গরুদের খাবার দেয়া, গরু অভয়ারণ্যের কাজ করতে তো কম অর্থ লাগবে না। এ বিষয়ে গত রবিবার মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ বলেছেন, গোমাতার কল্যাণ ও গোশালা তৈরির জন্য আমি সামান্য কর বসাব ভাবছি। আমরা সকালে প্রথম রুটি গরুকে খাওয়াই। রাতে শেষ রুটি দিই কুকুরকে। এরকমভাবেই আমরা প্রাণীকে ভালোবাসি। তাই গরুর জন্য আমরা সামান্য অর্থ মানুষের থেকে নেয়ার কথা ভবছি। 

ফলে অদূর ভবিষ্যতে মধ্যপ্রদেশের মানুষকে গরু কর দিতে হতে পারে। 

ভারতে এখনো পর্যন্ত বাঘ, সিংহ, গন্ডারের জন্য অভয়ারণ্য আছে। বিশেষ কুমির প্রকল্প আছে। বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। কিন্তু গরুর অভয়ারাণ্য নেই। শিবরাজের এই পরিকল্পনাও অভিনব। আর ভারতে প্রায় সব রাজ্যেই গো-হত্যা বন্ধ। গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজস্থানে বেওয়ারিশ চরতে থাকা গরুর দল ভোটে ইস্যু হয়ে গেছিল। ক্ষুধার্ত বেওয়ারিশ গরু আটকাতে কৃষকরা রাত জেগে খেত পাহারা দিতেন। মধ্যপ্রদেশেও একই সমস্যা আছে।

বিধানসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেসও তাই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, রাজ্যে এক হাজার গোশালা তৈরি করা হবে। ২০২০ সালের মধ্যে কোনো বেওয়ারিশ গরু থাকবে না। এই প্রতিশ্রুতিতে কংগ্রেসের লাভ হয়েছিল বলেই নেতারা মনে করেন। রাজ্যে ১৫ বছরের বিজেপি শাসনের পর কংগ্রেসের সরকার হয়েছিল। কমল নাথ মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার বিদ্রোহে বছরখানেকের মধ্যে সরকারের পতন হয়।

এখন শিবরাজ এসে গরুর কল্যাণে কাজ শুরু করছেন। প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, শিবরাজ আসলে হিন্দুত্বের সুবিধা পেতে চাইছেন। গরু ক্যাবিনেট, গরু কর, গরুর অভয়ারণ্য, গোশালা তৈরির সিদ্ধান্ত সে কারণেই। এরপর স্থানীয় ভোটে তিনি এর সুফল পেতেই পারেন।

কংগ্রেসের মতে, গরু মন্ত্রণালয়ের এই ঘোষণা নিছকই আরো এক হিন্দুত্ববাদী চমক। মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র কৃষ্ণ কুমার শর্মা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী যে মন্ত্রণালয়ের কথা ঘোষণা করেছেন, তা রাজনৈতিক ও হিন্দুত্ববাদী চমক, চটক ও কৌতুক ছাড়া অন্য কিছু নয়। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //