জাকাত ও ফিতরার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি

সামর্থ্যবান মুসলমানের পক্ষে জাকাত দেওয়া ফরজ। যে পরিমাণ ধনসম্পদ থাকলে জাকাত ফরজ হয়, ইসলামি পরিভাষায় তাকে বলা হয় নিসাব। জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য অন্তত নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর নিজের কাছে থাকতে হবে। সম্পদের নিসাব হলো সোনা সাড়ে সাত ভরি, রুপা সাড়ে বায়ান্ন ভরি অথবা এর কোনো একটির সমমূল্যের নগদ টাকা বা ব্যবসার পণ্য। 

কখন থেকে হিসাব শুরু
অর্থসম্পদ যেদিন নিসাব পর্যায়ে পৌঁছাবে, সেদিন থেকেই জাকাতের বর্ষগণনা শুরু হবে। আর নিসাব পরিমাণ এবং এর বেশি সম্পদের মালিককে তার জাকাতযোগ্য সব সম্পদের হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর আড়াই শতাংশ (৪০ ভাগের ১ ভাগ) হারে জাকাত আদায় করতে হয়। 

যাদের জাকাত দেওয়া যায়
সুরা তাওবার ৬০ নম্বর আয়াত অনুযায়ী যারা জাকাত পাওয়ার উপযোগী, তারা হলেন: ১. ফকির : যার বেঁচে থাকার মতো সম্বল নেই বা খুব সামান্য। ২. মিসকিন : এমন অভাবী, যার রোজগার তার নিজের এবং তার ওপরে নির্ভরশীলদের অপরিহার্য প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়। ৩. জাকাত সংগ্রহ ও বিতরণকাজে নিয়োজিত কর্মচারী, যাদের আমিলিন বলে।  ৪. নব্য মুসলিম যার ইমান পরিণত হওয়ার পথে আছে অথবা ইসলাম গ্রহণ করতে ইচ্ছুক কোনো অমুসলিম। ৫. মুক্তিপণ ধার্যকৃত দাস বা রিকাব। ৬. ঋণী ব্যক্তি যিনি জাকাতের অর্থে ঋণ পরিশোধ করতে চান। ৭. আল্লাহর পথে ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত ব্যক্তি (মুজাহিদ)। ৮. বিপদগ্রস্ত মুসাফির।

যাদের জাকাত দেওয়া যায় না

  • নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক, যার কাছে অন্যূন ৮৫ গ্রাম সোনা বা ৫৯৫ গ্রাম রুপার সমপরিমাণ নগদ অর্থ বা সমমূল্যের দ্রব্যসামগ্রী বা বাণিজ্য পণ্য রয়েছে। তার জন্য এটি গ্রহণ নিষেধ। 
  • অন্যদিকে আপন মা, বাবা, মাতামহ, মাতামহী, পিতামহ ও পিতামহী এবং তাদের পিতা-মাতাকে জাকাত দিতে পারবে না। একইভাবে নিজের ছেলে, মেয়ে, নাতি ও নাতনি এবং তাদের সন্তানদের জাকাত দিতে পারবে না। আবার স্বামী স্ত্রীকে ও স্ত্রী স্বামীকে জাকাত দিতে পারবেন না।
  • গৃহভৃত্য বা অন্য কোনো কর্মচারীকে মজুরি হিসেবে জাকাত দেওয়া যাবে না। তবে মজুরি ছাড়া উপহার হিসেবে তাদের জাকাত দেওয়া যায়।
  • লা ওয়ারিশ মৃতদেহের দাফনও জাকাতের টাকায় করা যাবে না। আবার মৃত ব্যক্তির ঋণও সরাসরি জাকাতের টাকায় আদায় করা যাবে না। 
  • মসজিদ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল, এতিমখানাও জাকাতের টাকায় করা যাবে না।

আত্মীয়ের মধ্যে যারা জাকাত পাওয়ার যোগ্য
আপন ভাইবোন, ভাগনে-ভাগনি, ভাতিজা-ভাতিজি, চাচা-জেঠা-ফুফু, মামা-খালা; চাচাতো-জেঠাতো ভাইবোন, ফুফাতো ভাইবোন, মামাতো-খালাতো ভাইবোন এবং অন্যান্য নিকটাত্মীয় যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না হন, তাহলে তাদেরও জাকাত দেওয়া যাবে; বরং এদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।

সদকাতুল ফিতরঈদ আনন্দ সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে ইসলামে সদকাতুল ফিতরের বিধান চালু রয়েছে। ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে ফিতরা আদায় করতে হয়। ঈদের দিন সকালে যার নিকট নিত্যপ্রয়োজনীয় মালের বাইরে জাকাতের নেসাব পরিমাণ অর্থ বা সমমূল্যের বস্তু থাকবে, তার উপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে। সাধারণত ফিতরার হার উন্নতমানের আটা বা গম, যব, কিশমিশ, খেজুর, পনির- এসবের দামের ওপর হিসাব করে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। 

ফিতরা যাদের দেওয়া যাবে ও যাদের দেওয়া যাবে না 

  • ফকির, মিসকিন, জাকাতকর্মী, অনুরক্ত ব্যক্তি ও নওমুসলিম, ক্রীতদাস, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, আল্লাহর পথে (ইসলাম সুরক্ষার জন্য), বিপদগ্রস্ত বিদেশি মুসাফির ও পথসন্তানদের ফিতরা দেওয়া যাবে।
  • অন্যদিকে পিতা-মাতা ও ঊর্ধ্বতন এবং ছেলেমেয়ে ও অধস্তন এবং স্ত্রীকে ওয়াজিব ফিতরা ও জাকাত প্রদান করা যায় না।

এবারের ফিতরার পরিমাণ
এ বছর ফিতরার হার জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২ হাজার ৯৭০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //