দোলনাতেই কথা বলেছেন যে তিন শিশু

সাধারনত একটি বাচ্চা দেড় বছর পর থেকে অল্প অল্প করে কথা শেখে। প্রায় আড়াই বছর সময় লাগে ভালোভাবে কথা বলতে। তবে ইসলামের ইতিহাসে এমন শিশু আছে যারা দোলনাতেই কথা বলেছে।

সাঈদ ইবনু জুবাইর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী‎ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তিনজন শিশু ছাড়া আর কেউ দোলনায় থেকে কথা বলেনি। প্রথমজন ঈসা (আ.), দ্বিতীয় ও তৃতীয়জন বনী ইসরাঈলের দুই শিশু।

আল্লাহর একান্ত কুদরতে পিতাহীন দুনিয়ায় আগমন করেন ঈসা (আ.)। পবিত্র কোরআনের সুরা মারইয়ামের প্রথম ৪০ আয়াতে সেই ঘটনার বিবরণ এসেছে। রাসুলের যুগে আবিসিনিয়ার খ্রিস্টান বাদশাহ আসহামা নাজ্জাশি সুরা মারইয়ামের এই আয়াতগুলো শুনেই ইসলামে দীক্ষিত হয়েছিলেন।

আল্লাহতায়ালা যখন মারইয়াম (আ.)-কে ঈসা (আ.)-এর জন্মের সুসংবাদ দিলেন, তখন তিনি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে আল্লাহকে বলেন, ‘পরওয়ারদেগার, কেমন করে আমার সন্তান হবে; আমাকে তো কোনো পুরুষ স্পর্শ করেনি। আল্লাহ বললেন, এভাবেই আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কোনো কাজ করার জন্য ইচ্ছা করেন তখন বলেন, হয়ে যাও, অমনি তা হয়ে যায়।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৪৭)

ঈসা (আ.) ছিলেন আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মারইয়াম-তনয় মাসিহ রাসুল ছাড়া আর কিছু নয়।...’ (সুরা মায়েদা, আয়াত : ৭৫)

অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মাসিহ আল্লাহর বান্দা হওয়াকে কখনো লজ্জার বিষয় মনে করেন না এবং ঘনিষ্ঠ ফেরেশতারাও না। যারা আল্লাহর দাসত্বে লজ্জাবোধ করবে এবং অহংকার করবে, তিনি তাদের সবাইকে নিজের কাছে সমবেত করবেন।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৭২)

ঈসা (আ.)-কে আল্লাহ অলৌকিক ক্ষমতা দান করেছিলেন। দোলনা থেকেই তিনি কথা বলতে শুরু করেন। মৃত মানুষকে জীবিত করা, মাটির পাখিকে জীবনদান এবং অন্ধদের দৃষ্টিদানের মতো ক্ষমতা আল্লাহ তাকে দিয়েছিলেন। তখনকার অধিকাংশ মানুষ এগুলোকে জাদু বলে উড়িয়ে দিয়েছিল। তবে অল্পসংখ্যক লোক তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন কোরআনের ভাষায় যারা ‘হাওয়ারিয়্যিন’ নামে পরিচিত।

দ্বিতীয় শিশুর ব্যাপারে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বনী ইসরাঈলের এক ব্যক্তিকে ‘জুরাইজ’ নামে ডাকা হতো। একদিন সে ইবাদতে লিপ্ত ছিলো, এ সময় তার মা এসে তাকে ডাকল। সে নামাজে থাকায় তার মায়ের ডাকে সাড়া দিলো না। এতে তার মা কষ্ট পেলেন এবং দোয়া করে বললেন, হে আল্লাহ্‌! ব্যাভিচারিণীর মুখ না দেখা পর্যন্ত তুমি তাকে মৃত্যু দিও না। 

জুরাইজ তার ইবাদতখানায় থাকত। একবার তার কাছে এক নারী এলো এবং তাকে কুপ্রস্তাব দিলো। কিন্ত জুরাইজ সেই নারীর ডাকে সাড়া দিলো না, তার আহ্বান অস্বীকার করল। 

এরপর সেই নারী এক রাখালের কছে গেল এবং তাকে দিয়ে মনোবাসনা পূর্ণ করল। পরে সে একটি পুত্র সন্তান প্রসব করল। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো এই সন্তানের বাবা কে? সেই নারী বলল, এটা জুরাইজের সন্তান। 

এ কথা শুনে লোকেরা জুরা্ইজের কাছে এসে তার ‘ইবাদতখানা ভেঙ্গে দিল। এরপর তাকে ইবাদতখানা থেকে নীচে নামিয়ে এনে গালি গালাজ করল। তখন জুরাইজ অজু করে নামাজ পড়লো। এবং নবজাত শিশুটির কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, হে শিশু! তোমার বাবা কে? সে জবাব দিল, সেই রাখাল। 

এভাবে সত্য প্রকাশের পর লোকেরা তাদের কাজের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করলো এবং বলল, আমরা আপনার ‘ইবাদতখানাটি সোনা দিয়ে তৈরী করে দিচ্ছি। কিন্তু জুরাইজ বলল, না, মাটি দিয়ে তৈরি করে দাও। 

তৃতীয় শিশু সম্পর্কে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বনী ইসরাঈলের এক নারী তার শিশুকে দুধ পান করাচ্ছিল। তার কাছ দিয়ে একজন সুদর্শন পুরুষ আরোহী চলে গেল। নারীটি দোয়া করল, হে আল্লাহ! আমার ছেলেকে তার মত বানাও। শিশুটি তখনই তার মায়ের স্তন ছেড়ে দিল এবং আরোহীটির দিকে মুখ ফিরালো। আর বলল, হে আল্লাহ্‌! আমাকে তার মতো করো না। এরপর মুখ ফিরিয়ে দুধ পান করতে লাগল। 

এরপর সেই নারীর পাশ দিয়ে একটি দাসী চলে গেল। নারীটি বলল, হে আল্লাহ্‌! আমার শিশুটিকে এর মতো করো না। শিশুটি তাৎক্ষণিক তার মায়ের দুধ ছেড়ে বলল, হে আল্লাহ্! আমাকে তার মতো কর। তার মা বলল, তুমি কেন তার মতো হতে চাও আর সেই যুবকের মতো হতে চাও না? শিশুটি বলল, সেই আরোহী সুদর্শন পুরুষটি মূলত একজন জালেম, সে তার অধীস্তদের উপর অত্যাচার করে। আর এই দাসীটি নিরীহ ও নির্দোষ এক নারী। তার ওপর মানুষেরা জেনা ও চুরির অপবাদ দিয়েছে, কিন্তু সে সম্পূর্ণ নির্দোষ। -(বুখারি ৩৪৩৬, ২৪৮২, ৩৪৬৬, মুসলিম ২৫৫০, আহমদ ৮০১০, ৮৭৬৮, ৯৩১৯)

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //