ঈমান নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হলে করণীয়

মহান আল্লাহর প্রতি একচ্ছত্র বিশ্বাসই মানুষের সর্বোত্তম সম্পদ। তারপর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবি ও রাসুল হিসেবে বিশ্বাস করার নামই ঈমান। 

হজরত আবু যুমাইল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, একদিন আমি হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললাম, আমি আমার অন্তরে যেসব বিষয় অনুভব করি এগুলো কি? তিনি বললেন, তা কি? আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি সে বিষয়ে মুখ খুলবো না।

বর্ণনাকারী বলেন, তিনি আমাকে বললেন, সন্দেহমূলক কিছু?

বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি হাসলেন এবং বললেন, এর থেকে কেউই রেহাই পায়নি। এমনকি মহান আল্লাহ নাযিল করেন-

এরপর (হে নবি!) আমি যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যদি আপনি সে (গ্রন্থ) সম্পর্কে সন্দিহান হন, তাহলে আপনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন; যারা আপনার আগের (আসমানি) গ্রন্থ পাঠ করে। নিঃসন্দেহে আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার কাছে সত্য এসেছে। সুতরাং আপনি কখনই সংশয়ীদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না।’ (সুরা ইউনুস : আয়াত ৯৪)।

বর্ণনাকারী বলেন, ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাকে বললেন, যখন তুমি মনের মধ্যে এ ধরনের (সন্দেহের) কিছু উদ্রেক হতে দেখবে, তখন তুমি পাঠ করবে-

هُوَ الۡاَوَّلُ وَ الۡاٰخِرُ وَ الظَّاهِرُ وَ الۡبَاطِنُ ۚ وَ هُوَ بِکُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمٌ

‘তিনিই প্রথম, তিনিই শেষ, তিনিই প্রকাশ্য, তিনি গোপন এবং তিনি সব বিষয়ে সবচেয়ে বেশি জানেন (সুরা হাদিদ : আয়াত ৩)।’ (আবু দাউদ)

সন্দেহের সৃষ্টি হলে করণীয়

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, কোন সময় তোমার অন্তরে আল্লাহ তাআলা ও ইসলাম সম্পর্কে শয়তানের কুমন্ত্রণা দেখা দিলে-

উচ্চারণ : ‘হুয়াল আউয়ালু ওয়াল আখিরু ওয়াজ জ্বাহিরু ওয়াল বাতিনু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির।’

অর্থাৎ ‘তিনিই প্রথম এবং তিনিই শেষ আর তিনিই প্রকাশ্য এবং তিনিই গোপন; আর তিনি সব বিষয়ে সবচেয়ে বেশি অবগত’- আয়াতখানি আস্তে পাঠ করে নাও।’ (আবু দাউদ)

আয়াতটির ব্যাখ্যা

এই আয়াতে ‘আউয়াল’, ‘আখের’, ‘জাহের’ ও ‘বাতেন’- এ শব্দ চারটির অর্থ ও ব্যাখ্যায় সম্পর্কে তফসীরবিদগণের বহু উক্তি বৰ্ণিত আছে। এরমধ্যে ‘আউয়াল’ শব্দের অর্থ তো প্ৰায় সুনির্দিষ্ট; অর্থাৎ অস্তিত্বের দিক দিয়ে সব সৃষ্টজগতের আগে তিনি। কারণ, তিনি ব্যতিত সবকিছু তারই সৃষ্টি। তাই তিনি সবার আদি।

‘আখের’ এর অর্থ কারও কারও মতে এই যে, সবকিছু বিলীন হয়ে যাওয়ার পরও তিনি বিদ্যমান থাকবেন। যেমন- كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ إِلَّا وَجْهَهُ অর্থাৎ তাঁর চেহারা (সত্ত্বা)* ছাড়া সব কিছুই ধ্বংসশীল। (সুরা আল-কাসাস : আয়াত ৮৮)

ইমাম বুখারি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘জাহের’ অর্থ জ্ঞান-গরিমায় তিনি সবকিছুর উপর। আবার তিনি ‘বাতেন’ জ্ঞানের দিক থেকে তিনি সবকিছুর সন্নিকটে।

এ আয়াতের সুন্নাতি আমল

কোরআনুল কারিমের এ আয়াতের ব্যাখ্যায় এক হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে ঘুমানোর সময় বলতেন-

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা রাব্বাস সামাওয়াতি ওয়া রাব্বাল আরশিল আজিমি; রাব্বানা ওয়া রাব্বা কুল্লা শাইয়িন; মুনযালাত তাওরাতি ওয়াল ইনঝিলি ওয়াল ফুরক্বান; ফালিক্বালহাব্বি ওয়াননাওয়া; আউজুবিকা মিন সাররি কুল্লি শাইয়িন আনতা আখিজা বিনাসিয়াতিহি; আন্তাল আউয়ালু ফালাইসা ক্বাবলাকা শাইয়ুন; ওয়া আনতাল আখিরু ফালাইসা বাদাকা শাইয়ুন; ওয়া আনতাজ জাহিরু ফালাইসা ফাউক্বাকা শাইয়ুন; ওয়া আনতাল বাত্বিনু ফালাইসা দুনাকা শাইয়ুন; আক্বদা আন্নিদদিনা ওয়া আগনিনা মিনাল ফাক্বরি।’

‘হে আল্লাহ! সাত আসমানের রব, মহান আরশের রব, আমাদের রব এবং সবকিছুর রব, তাওরাত, ইঞ্জিল ও ফুরকান নাযিলকারী, দানা ও আঁটি চিরে বৃক্ষের উদ্ভাবকারী, আপনি ব্যতিত কোনো সত্য মাবুদ নেই; যাদের কপাল আপনার নিয়ন্ত্রণে এমন প্ৰত্যেক বস্তুর অনিষ্ট থেকে আমি আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি, আপনি অনাদি, আপনার আগে কিছু নেই, আপনি অনন্ত আপনার পরে কিছুই থাকবে না। আপনি সবকিছুর উপরে, আপনার উপরে কিছুই নেই, আপনি নিকটবর্তী, আপনার চেয়ে নিকটবর্তী কেউ নেই, আমার পক্ষ থেকে আপনি আমার ঋণ পরিশোধ করে দিন এবং আমাকে দারিদ্রতা থেকে মুক্তি দিন।’ (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

বিষয় : ঈমান হাদিস

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //