শতবর্ষী বিউটি লাচ্ছি

ফাহাদ ইফতেখার

প্রকাশ: ০২ মে ২০২৪, ০৭:৩৭ পিএম | আপডেট: ০২ মে ২০২৪, ০৭:৩৭ পিএম

শতবর্ষী বিউটি লাচ্ছি। ছবি: ফাহাদ ইফতেখার

শতবর্ষী বিউটি লাচ্ছি। ছবি: ফাহাদ ইফতেখার

হাজারো ঐতিহ্যের শহর পুরান ঢাকা। সেখানকার ৩০/১, জনসন রোডে মিলবে ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী এক লাচ্ছি, যার নাম বিউটি লাচ্ছি। জনসন রোডেই এর প্রধান এবং প্রথম শাখা অবস্থিত। ছোট দোকানটির সামনে সব সময় ভিড় লেগেই থাকে। ভিড় সরিয়ে ভেতরে গেলে দেখা মিলবে লাইন করে সাজানো আছে কাচের গ্লাস। যে গ্লাসগুলোতে পরিবেশন করা হয় লাচ্ছি ও লেবুর শরবত।

১৯২২ সালে মরহুম আব্দুল আজিজের হাতে প্রতিষ্ঠা লাভ করে এই বিউটি লাচ্ছি এবং ফালুদা। তিনি একজন নির্মাণ শ্রমিক ছিলেন, যিনি নির্মাণশৈলীর পাশাপাশি রায় সাহেব বাজারের রাস্তায় ‘লেবুর শরবত’ এবং ‘লাচ্ছি’ বিক্রি করতেন। সেই ১০০ বছর আগে তার হাতের তৈরি এই অনন্য সৃষ্টি মানুষকে আজও তৃপ্তি দিয়ে যাচ্ছে।

প্রথম দিকে বিউটি লাচ্ছিতে শুধু লেবুর শরবত বিক্রি হতো। পরে যোগ করা হয় লাচ্ছি। ১৯৮০ সাল থেকে বিউটি লাচ্ছির সুনাম বাড়তে থাকে এবং ধীরে ধীরে পুরান ঢাকাসহ সকল স্তরের খাদ্যপ্রেমী মানুষের ভালোবাসা এবং আস্থা অর্জন করে নেয়। ২০০০ সালের দিকে, সময়ের প্রয়োজনে এবং ব্যবসায় ভিন্নতা আনতে তারা তাদের খাদ্যতালিকায় ‘ফালুদা’ ও ‘স্পেশাল ফালুদা’ যোগ করে। তারা বর্তমানে লেবুর শরবত (চিনি এবং চিনি ছাড়া উভয়ই), লাচ্ছি, স্পেশাল লাচ্ছি, ফালুদা এবং স্পেশাল ফালুদা পরিবেশন করে থাকে।

তাদের লাচ্ছির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এই কাজে তারা কোনো বৈদ্যুতিক ব্লেন্ডারের ব্যবহার করে না। বরং ডাল ঘুটনি দিয়ে হাতের সাহায্যে তৈরি হয়, যা স্বাদে এক ভিন্নতা আনে। লাচ্ছি তৈরিতে তারা ব্যবহার করেন নিজেদের তৈরি খাঁটি দই। তার সঙ্গে চিনির সিরাপ, বরফকুচি। লেবুর শরবত তৈরির জন্য ব্যবহার করেন লেবু, চিনির সিরাপ ও বরফকুচি। তা ছাড়া ফালুদা তৈরিতে ব্যবহার করা হয় পেস্তাবাদাম, খুরমা, আপেল কুচি, আনার, আঙুর ও কিশমিশ।

এখানে প্রতি গ্লাস লেবুর শরবত ২০ টাকা, নরমাল লাচ্ছি ৪০ টাকা ও স্পেশাল ৫০ টাকা, ফালুদা ১০০ টাকা, স্পেশাল ফালুদা ১২০ টাকায় বিক্রি করা হয়।

শীতকালে লাচ্ছি-শরবত তেমন বিক্রি না হলেও গ্রীষ্মকালে প্রতিদিন ৭শ থেকে ৮শ গ্লাস শরবত তারা বিক্রি করে থাকেন। শরবতের পাশাপাশি এখানে আলুপুরিও পাওয়া যায়।  

তিনপুরুষ ধরে চলে আসছে বিউটি লাচ্ছি। আব্দুল আজিজের মৃত্যুর পর তার ছেলে আব্দুল গাফফার ২০০০ সাল পর্যন্ত এটি দেখভাল করেন। ইন্তেকালের পর তার ছেলেরা এখন এটি চালাচ্ছেন। তাদের আশা, পরবর্তী প্রজন্মও পূর্বপুরুষের তৈরি এই ঐতিহ্য ধরে রাখবে।

পুরান ঢাকায় বিউটি লাচ্ছির বর্তমানে ৩টি শাখা রয়েছে। প্রধান শাখাটি জনসন রোডে, দ্বিতীয়টি নারিন্দায় এবং সর্বশেষ শাখাটি কাজী আলাউদ্দিন রোডে অবস্থিত।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh