কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৩৮ পিএম
টিউবওয়েল থেকে পানি উঠছে না। ছবি: কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
চারিদিকে পানির জন্য হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে কুষ্টিয়ায়। বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু থেকে বৃদ্ধ মানুষগুলো। মোটর দিয়েও টিউবওয়েল থেকে পানি উঠছে না। হস্ত চালিত টিউবওয়েলে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। পানি সংকট মিটাতে গভীর নলকূপ বসিয়ে পানির তোলা হচ্ছে। গভীর নলকূপ দিয়েও পানি উঠছে কম।
ফারাক্কার বিরূপ প্রভাব, পদ্মা ও গড়াই নদী পানিশূন্য, দেশের বৃহত্তর জিকে প্রকল্প বন্ধ হয়ে থাকার কারণেই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কুষ্টিয়া জেলাজুড়ে তীব্র খাবার পানির সংকটে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
পৌর এলাকায় পৌরসভার সরবরাহকৃত পানিই একমাত্র সম্বল। তা ছাড়া গ্রাম এলাকায় পানির জন্য হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ দূরদূরান্ত থেকে পানি সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। দাবদাহে কৃষকেরা মাঠের ফসল ফলাতেও পারছে না। প্রচণ্ড তাপে মাঠের ফসল পুড়ে যাচ্ছে। ডিপ টিউবওয়েল বসিয়েও পানি না পাওয়ায় ফসলে সেচ দিতে পারছে না।
ভেড়ামারা পৌরসভার নওদাপাড়া এলাকার নুরজাহান বেগম বলেন, নিজের বাড়িতে একটি টিউবওয়েল আছে। পানি উঠছে না। বাড়ির দক্ষিণে অনেকটা দূরে একটি বাড়ির টিউবওয়েল থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করে পান করি। কোন উপায় নেই, এ টিউবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করছি।
একই কথা জানান সুখী বেগম, মিলা আক্তার, টুম্পা জাহান, সন্ধ্যা বেগম ও ববি বেগম নামের কয়েকজন নারী।
তবে এই ওয়ার্ডের শামসুল বিশ্বাসের স্ত্রী আক্তারী বেগম রিমিঝিমের বাড়ির টিউবওয়েল থেকে পানি ওঠায় আশেপাশের প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার এখান থেকে পানি সংগ্রহ করেন। এতে করে সে বিরক্তবোধ করেন না বরং তাদের পানি পানের জন্য এখান থেকে সংগ্রহ করা পানি দিতে পেরে খুশি তিনি।
আমলা গ্রামের কৃষক হাসান আলী বলেন, জমিতে সেচ দেওয়ার মতো এলাকায় প্রায় ২০টি সেচযন্ত্র রয়েছে; যার মধ্যে মাত্র ২টিতে কোনো রকম পানি উঠছে। তাও সময় অনেক বেশি লাগছে। আগে যেখানে এক বিঘা জমিতে সেচ দিতে দুই ঘণ্টা সময় ও ৫০০ টাকা লাগতো, এখন সেই পরিমাণ জমিতে প্রায় ৫ ঘণ্টার বেশি সময় ও এক হাজার টাকা লাগছে। এর ফেলে সেচ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে।
মিরপুর উপজেলার মশান এলাকার ধান চাষি আব্দুল মান্নান জানায়, চলতি মৌসুমে সোনার বিলে সাড়ে তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। ধানগুলোতে এখন দানা হচ্ছে। এমন সময় তীব্র পানি সংকট দেখা দিয়েছে। গর্ত খুঁড়ে শ্যালোমেশিন নিচে বসিয়েও পানি উঠছে না।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কুষ্টিয়া বিভাগের কর্মকর্তারা জানায়, গত ১০ বছরে পানির স্তর ৮ থেকে ১০ ফুট নিচে নেমে গেছে। আগে ১৬ থেকে ১৮ ফুটে পানির লেয়ার পাওয়া গেছে সেখানে চলতি বছরে ২৬ থেকে ২৮ ফুট নিচে পানির লেয়ার চলে যাওয়ায় হস্ত চালিত টিউবওয়েলে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে।
কুষ্টিয়া, কুমারখালী, খোকসা, মিরপুর, ভেড়ামারা পৌরসভা পানি সংকটের হাত থেকে পৌরবাসীকে রক্ষা করতে পানির লাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করছে। তবে এখনো অনেক এলাকায় পানি সরবরাহের পাম্প বসানো হয়নি। ফলে পৌরসভার পানি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অনেক এলাকার পৌরবাসী।
কুষ্টিয়া পৌর এলাকায় প্রায় ৫ হাজারের ঊর্ধ্বে টিউবওয়েল বসানো হয়েছে। তবে পানির লেয়ার নিচে নেমে যাওয়াই ওই সব টিউবওয়েলে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে। গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত বাড়ির নারী-পুরুষেরা এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় গিয়ে পানি সংগ্রহ করছে। এতে করে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। গ্রাম বাংলার পুকুর ডোবা, খাল-বিল, জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানির আরো সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জানায়।
এদিকে কুষ্টিয়ার তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪১ ডিগ্রি হওয়ায় তীব্র গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। প্রচণ্ড গরম সইতে না পেরে খামারের মুরগি, বিভিন্নস্থানে পশু-পাখি মারা যাচ্ছে। শিশু ও বৃদ্ধরা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভিড় জমিয়েছে।
মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, লালপুর-বাগাতিপাড়া এমনিতেই খরাপ্রবণ এলাকা। তারপর আবার দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টিপাত না থাকায় পানির লেয়ার নিচে নেমে গেছে। সেজন্য পানির সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে বৃষ্টি হলেই সমস্যা থাকবে না।
কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে এমনই এক পরিস্থিতি আকার ধারণ করেছে। রোগীদের চাপ সামলাতে ডাক্তাররা হিমশিম খাচ্ছে। হাসপাতালে পা দেয়ার জায়গাটুকু নেই। এ যেন এক ভয়াবহ মহামারি সৃষ্টি হয়েছে।