৭৫-এ ন্যাটো

এম এ আলআমিন

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪৭ পিএম

ন্যাটোর সদস্য দেশের পতাকা। ছবি: সংগৃহীত

ন্যাটোর সদস্য দেশের পতাকা। ছবি: সংগৃহীত

১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিল ১২টি ইউরোপীয় দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মন্ত্রীরা ওয়াশিংটন ডিসিতে এক বৈঠকে বসেছিলেন। নিজেদের প্রতিরক্ষা জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করাই ছিল যার উদ্দেশ্য। এর চার বছর আগে শেষ হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। যুদ্ধের স্মৃতি তখনো তরতাজা। এ রকম যুদ্ধ এড়ানো এবং নতুন যে হুমকি উঁকি দিচ্ছিল তা মোকাবেলায় নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস থেকে জন্ম নেয় উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা বা ন্যাটো।  

চলতি মাসে এটি ৭৫ বছর পূর্ণ করেছে। এ সময়ে জোট নিঃসন্দেহে আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী হয়েছে, যাকে এখন মনে করা হয় বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর সামরিক জোট। প্রতিষ্ঠার সময় যেমন, ৭৫ বছর পরও এর সামনে একই রকম হুমকি রয়ে গেছে। ৯০-এর দশকের গোড়ায় সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল জোটভুক্ত দেশগুলো। সম্প্রতি জোটের নিরাপত্তা হুমকি বেড়েছে। এ কারণে ন্যাটোর দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য চলতি বছর জিডিপির ২ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সুইডেন জোটের ৩২তম সদস্য হওয়ার পর এপ্রিলে মন্ত্রী পর্যায়ের প্রথম বৈঠক হয়। সুইডেনের ন্যাটোর সদস্য হওয়ার বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। প্রায় দুইশ বছর দেশটি নিরপেক্ষ সামরিক নীতি অনুসরণ করছিল। এর ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার জন্য দুটি কারণ চিহ্নিত করা যায়। প্রথমত বছর দুই আগে রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ইউরোপে নিরাপত্তা উদ্বেগ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পুরো পশ্চিমা দুনিয়ার বিরুদ্ধেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত জোট হিসেবে এটি কার্যকর প্রমাণ হয়েছে। শীতল যুদ্ধ যুগে সোভিয়েত প্রভাব ঠেকিয়ে রাখতে ভূমিকা রাখে ন্যাটো। দশকের পর দশক সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য বজায় ছিল। দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায় ৭৫ বছরে ন্যাটোর কোনো সদস্যকে জোটের বাইরের কোনো দেশ আক্রমণ করতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার পর ন্যাটোর সবগুলো দেশ তাৎক্ষণিকভাবে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে। বলা যায় সুইডেন ন্যাটোর সদস্য হওয়ার পর আগের চেয়ে বেশি নিরাপদ বোধ করবে। ন্যাটোও সুইডেনের মতো সদস্য পেয়ে আগের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হবে। পুতিনের হুমকি থেকে ইউরোপের দেশগুলো নিকট ভবিষ্যতে মুক্ত হতে পারবে বলে মনে হয় না। এ কারণে ন্যাটোকেও একটি দীর্ঘমেয়াদি কৌশল ঠিক করতে হবে। 

২০১৪ সালে ব্রিটেনে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে জোট নেতারা জিডিপির ২ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ওই বছর রাশিয়া ক্রিমিয়া দখলের পর ইউরোপের দেশগুলো নড়েচড়ে বসেছিল। এর আগ পর্যন্ত মাত্র তিনটি দেশই প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপির ২ শতাংশ ব্যয় করে এসেছিল। জোট নেতৃবৃন্দ ওই সময় উপলব্ধি করেন, নিরাপত্তার জন্য কেবল গুটি কয়েক দেশের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে এ ব্যাপারে সবার ভূমিকা পালন করা উচিত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হুমকির ধরন-ধারণও পাল্টেছে। সাইবার হামলা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মোকাবিলায় বিংশ শতাব্দীর অস্ত্রগুলো যথেষ্ট নয়। ইউক্রেন যুদ্ধ জোটকে নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে। কারণ এটি শুধু ইউক্রেনের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই নয়। ইউক্রেন হেরে গেলে ইউরোপের ভবিষ্যতের ওপর তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে। এ বছর জুলাইতে ওয়াশিংটনে ন্যাটোর শীর্ষ বৈঠক হতে যাচ্ছে। তাতে জোটের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে বলেই ধরে নেওয়া যায়।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh