কেরু উৎপাদিত জৈবসার ‘সোনা দানা’

রিফাত রহমান, চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪২ পিএম

বাংলাদেশের আবাদি জমির মাটির উর্বর ক্ষমতা ৫ শতাংশ থেকে বর্তমানে ১ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। ভেজাল নিম্নমানের সার কিনে ক্রমাগত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে চাষি। এর মধ্যেই আশা জাগিয়েছে দেশের প্রথম সরকারি জৈবসার কারখানায় উৎপাদন ও বাজারজাত করা ‘সোনা দানা’ সার। ২০১২ সালে কারখানাটি সার উৎপাদন শুরু করে যা এখনো অব্যাহত। শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন এ জৈবসার কারখানা দেশের একমাত্র সরকারি জৈবসার কারখানা হিসেবে স্বীকৃত।

কেরু উৎপাদিত জৈবসারের মধ্যে ৩২টি প্রয়োজনীয় উপকরণ রয়েছে। রাসায়নিক সারের চেয়ে ২৯ ভাগ বেশি গুণাগুণ সমৃদ্ধ এ জৈবসার। যা জমিতে ব্যবহার করলে ফসল বৃদ্ধি পাবে এবং মাটির উর্বরা শক্তি সঠিক মাত্রায় বিদ্যমান থাকবে।

বাংলাদেশ খাদ্য ও চিনি করপোরেশনের অধীনে দেশে ১৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল রয়েছে। এই চিনিকলগুলোতে কয়েক হাজার একর আবাদি জমি রয়েছে। দেশের আবাদি জমির উর্বরা শক্তি এবং অধিক পরিমাণে আখের ফলন বৃদ্ধির মাধ্যমে চিনি শিল্পকে লোকসানের হাত থেকে বাঁচাতে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন জৈবসার কারখানা স্থাপন করে। ৯ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন এ জৈবসার কারখানায় বছরে ৩ হাজার মেট্রিক টন সার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সার উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। সার উৎপাদনের জন্য চিনিকলের আখের উপজাত মোলাসেচ বা প্রেসমাড (আখের বর্জ্য) আর ডিস্টিলারির বর্জ্য স্পেন্টওয়াশ জৈবসার উৎপাদনের মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতিবছর জৈবসার কারখানায় কাঁচামাল হিসেবে ১৮ হাজার মেট্রিক টন প্রেসমাড ও ৪০ হাজার মেট্রিক টন স্পেন্টওয়াশ প্রয়োজন। এর মধ্যে কেরু চিনিকলে ২ হাজার মেট্রিক টন প্রেসমাড পাওয়া যায়, অবশিষ্ট প্রেসমাড দেশের অন্যান্য চিনিকল থেকে এনে জৈবসার কারখানায় সংরক্ষণ করা হয়। চিনিকলের আখের উপজাত মোলাসেচ বা প্রেসমাড আর ডিস্টিলারির বর্জ্য স্পেন্টওয়াশের অর্থনৈতিক ব্যবহার এর আগে ছিল না। এ বর্জ্য সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থেকে পরিবেশ দূষিত করত। এ দুটি বর্জ্য কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে অ্যারাবিক কম্পোস্টিং পদ্ধতিতে পরিবেশবান্ধব জৈবসার উৎপাদন করা হচ্ছে। প্লান্টেশনের মাধ্যমে প্রেসমাডে মাইক্রোস ছিটিয়ে ৪৮ ঘণ্টা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখে সেগুলো পচানো হয়। এর পর চার দিন এরোট্রিলার দিয়ে টার্নেল করে আর্দ্রতা পরীক্ষা করে স্পেনওয়াশ করা হয়। ৪০ দিন স্পেনওয়াশ ও টার্নেল করার পর ২০ ডিগ্রি আর্দ্রতা কমিয়ে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে জৈবসারের গুণগত মান যাচাই করা হয়। এরপর নাইট্রোজেন, সালফার, অর্গানিক কার্বন, সোডিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি উপকরণগুলোর মিশ্রণ শেষে প্যাকেটজাত করা হয়। 

জৈবসার ‘সোনার দানা’ বিভিন্ন ফসল ও ফলের বাগানে ব্যবহার করে সুফল পাচ্ছেন চাষিরা। এ ছাড়া কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকল কর্তৃপক্ষ বাণিজ্যিক খামারগুলোতে ‘সোনা দানা’ জৈবসার ব্যবহার করে আখের ফলন বাড়াচ্ছে। 

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামের চাষি ডালিম বলেন, ইতিপূর্বে বিভিন্ন জৈবসার ব্যবহার করেছি। তবে কেরুর জৈবসার অত্যধিক ভালো সার। সমস্ত চাষে এ সার প্রয়োগ করা যায়। আখ চাষের জন্য এ সার বেশি ভালো।

একই উপজেলার মৃগমারী গ্রামের চাষি জাহিদ জানান, এ জৈবসার ভুট্টা আবাদের জমিতে দিয়েছি, ভুট্টা খুব ভালো হয়েছে। আখ আবাদের জমিতেও ব্যবহার করেছি, সেটার ফলনও ভালো হয়েছে। অন্যান্য জৈবসারের চেয়ে অনেক গুণ ভালো এ সার।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh