শেরপুরে সরিষা চাষ করে চোখে সর্ষেফুল দেখছেন চাষিরা

রফিক মজিদ,‌ শেরপুর

প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:১৬ পিএম

সরিষায় চাষিরা লোকসানের মুখে পড়ে হতাশায় ভুগছেন। ছবি: শেরপুর প্রতিনিধি

সরিষায় চাষিরা লোকসানের মুখে পড়ে হতাশায় ভুগছেন। ছবি: শেরপুর প্রতিনিধি

সরকার ভোজ্য তেলে আমদানি নির্ভরতা কমাতে গত কয়েক বছর যাবত চাষিদের প্রণোদনাসহ নানা সুযোগ সুবিধা দিয়ে আসছে সরিষা চাষে। এতে শেরপুরে দিন দিন বাড়ছে সরিষার আবাদ। গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে শেরপুরে সরিষার আবাদ বেড়েছে প্রায় চার গুণ। কিন্তু এবার আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় সরিষার ফলন হয়েছে অনেক কম। সেই সাথে দামও কমে গেছে অনেক। ফলে এবার সরিষায় চাষিরা লোকসানের মুখে পড়ে হতাশায় ভুগছেন। তবে জেলা কৃষি বিভাগ কৃষকের এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তারা বলছে, বাজারে বর্তমানে দাম একটু কম হলেও ফলনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। তবে আগামীতে দাম আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এতে কৃষকের ক্ষতির সম্ভাবনা নাই বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ।

সূত্র জানায়, প্রতিবছরের ন্যায় এবারো গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত শেরপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা সরিষার আবাদে হলুদে ছেয়ে যায়। গত পাঁচ বছর যাবত সরকার থেকে বীজ-সারসহ নানা প্রণোদনা দেওয়ায় চাষিরাও আগ্রহী হয়ে ওঠে এ সরিষা চাষে। জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি বছর সরকার জেলায় প্রায় ৩০ হাজার কৃষককে প্রণোদনা দিয়েছেন। তাই এসব কৃষকের বাড়তি কোনো খরচ হয়নি।

এদিকে জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে সরিষার আবাদ ঘরে তুলেন কৃষকরা। চন্দ্রকোনা গ্রামের সরিষার চাষি সজীব মিয়া ও জয়নাল মিয়া জানায়, অন্যান্য বছর মৌসুমের শুরুতে সরিষার দাম থাকে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ শত টাকা মণ এবং কয়েক মাস পরে এর দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৩ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা মণ। কিন্তু এবার ভিন্ন চিত্র। শুরুতে দাম উঠেছিল ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা। গত দুই মাসে সরিষা শুকিয়ে বর্তমানে দাম উঠেছে ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা। এই দর পতনের পাশাপাশি যোগ হয়েছে ফলন কম। তাই উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, ফলন কম এবং বাজার দর কম থাকায় প্রণোদনা না পাওয়া কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়েছে। শেরপুর জেলায় সবচেয়ে বড় সরিষার হাট বসে নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা বাজারে। এ বাজার ঘুরে দেখা গেছে হতাশ কৃষকরা।

এবার কৃষকের আবাদ কম এবং দর কম থাকার কথা স্বীকার করেন হাটের পাইকারি ব্যবসায়ীরা। চন্দ্রকোনা বাজারে পাইকারি ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম জানায়, প্রতিবছর আমরা মৌসুমের শুরু থেকে সারা বছর সরিষা ক্রয় করে তা শুকিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের সরিষা মিলে বিক্রি করি। কিন্তু গত বছর তেল মিলের চাহিদা কম থাকায় লোকসান দিয়ে সরিষা বিক্রি করতে হয়েছে আমাদের। তাই এবার গত বছরের চেয়ে কম দামে সরিষা কিনছি লোকসানের হাত থেকে বাঁচতে।

এ বিষয়ে শেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস এবার সরিষার দাম কম রয়েছে, এ কথা স্বীকার করলেও কৃষকদের ফলন কমের অভিযোগটি অস্বীকার করেন তিনি। সেই সাথে তিনি বলেন, সামনের দিনগুলোতে সরিষার দাম আরো বাড়বে এতে কৃষকের লোকসানের কোন সম্ভাবনা নেই। এছাড়া সরকার সয়াবিন তেলের পাশাপাশি সরিষা তেলের উপর নির্ভরশীল হতে নানা প্রচারণা চালাবেন বলে জানায় এই কৃষি কর্মকর্তা।

সরকার যে লক্ষ্য নিয়ে সরিষা চাষে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করছে, সেক্ষেত্রে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে চাষিদের আগামীতে সরিষা চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই বাজার নিয়ন্ত্রণ ও চাষিদের প্রণোদনার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সরিষা তেলের উপর নির্ভরশীল হতে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন জেলার সচেতন মহল।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh