ক্ষত নিয়ে ‘ওপেনহাইমার’ দেখল জাপানিরা

বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫২ এএম | আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০৫ এএম

ওপেনহাইমার।

ওপেনহাইমার।

৭৯ বছর আগে মার্কিন বিজ্ঞানী ওপেনহাইমারের পারমাণবিক অস্ত্র দিয়েই জাপানের দুটি শহর ধ্বংস করা হয়েছিল। হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ফেলা পারমাণবিক বোমার সেই ক্ষত আজও বয়ে বেড়াচ্ছে জাপান। তবে দীর্ঘ চড়াই-উতরাইয়ের আট মাস পর জাপানে ২৯ মার্চ মুক্তি পেয়েছে গত বছরের সবচেয়ে আলোচিত ও অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র ‘ওপেনহাইমার’। ওপেনহাইমার দেখে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে জাপানিদের মাঝে। 

জাপান হলিউডের সিনেমার অন্যতম প্রধান বাজার হওয়া সত্ত্বেও দেশটিতে এত দিন সিনেমাটি মুক্তি দেওয়া হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে জাপানের পশ্চিমের শহর হিরোশিমা এবং দক্ষিণের শহর নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা হামলায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের পাশাপাশি ২ লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কিছু ছবিতে দেখা গেছে, টোকিওর কিছু থিয়েটারের প্রবেশপথে দর্শকদের সতর্ক করে নোটিশ টানানো হয়েছে যাতে বলা হয়েছে, ‘সিনেমাতে পারমাণবিক পরীক্ষার দৃশ্য রয়েছে যা তাদের পারমাণবিক বোমার জন্য সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে পারে।’ চলচ্চিত্রটি ব্যক্তি হিসেবে ওপেনহাইমার এবং তার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে। সিনেমায় হিরোশিমা ও নাগাসাকির ওপর আক্রমণের দৃশ্য দেখানো হয়নি। বরং ওপেনহাইমারের বোমা আবিষ্কার ও পরবর্তী সময়ে পারমাণবিক বোমা ব্যবহারের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান ও জাতীয় ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে পড়ে যাওয়ার ঘটনায় তৈরি হয়েছে।

‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, হিরোশিমায় বোমা হামলা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন তিন বছর বয়সী তোশিউকি মিমাকি। তিনি এখন জাপান কনফেডারেশন অব এ-বম্ব সারভাইভাল গ্রুপ নামে একটি সংস্থার (বোমা আক্রান্তদের জন্য) চেয়ারপারসন। তিনি একটি প্রিভিউ ইভেন্টে ‘ওপেনহাইমার’ দেখেন। সিনেমাটি দেখে জানান যে তিনি জে. রবার্ট ওপেনহাইমারের গল্প শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন। ওপেনহাইমার দেখেও তিনি সন্তুষ্ট। তোশিউকি বলেন, ‘জাপানিরা পার্ল হারবারে আক্রমণ চালিয়ে এমন একটি যুদ্ধ শুরু করেছিল, যা তারা কখনোই জয়ের আশা করতে পারে না। সিনেমা চলাকালীন আমি হিরোশিমা বোমা হামলার দৃশ্যটি আসার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, কিন্তু সেটি আসেনি। এটি অবশ্যই দেখার মতো চলচ্চিত্র।’

জাপানে সিনেমাটির প্রদর্শনীর পর এর ভূয়সী প্রশংসাও করেছেন অনেক দর্শক। টোকিওর একটি থিয়েটার থেকে বের হওয়া এক দর্শক বলেন, সিনেমাটি দুর্দান্ত ছিল। অপর এক দর্শক বলেন, ওপেনহাইমারের অভ্যন্তরীণ অশান্তিকে চিত্রিত করা দৃশ্যে তিনি হতবাক হয়েছেন। সোফিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক কাজুহিরো মায়েশিমা, যিনি মার্কিন রাজনীতির একজন বিশেষজ্ঞ, তিনিও সিনেমাটিকে ‘আমেরিকান বিবেকের অভিব্যক্তি’ বলে অভিহিত করেছেন। 

ক্রিস্টোফার নোলান পরিচালিত ও কিলিয়ান মারফি অভিনীত ওপেনহাইমার গত বছর ছিল সবচেয়ে বড় হিট। সিনেমাটি অস্কারেও আধিপত্য দেখিয়েছে। জিতে নিয়েছে সাতটি অস্কার। বিশ্বব্যাপীও দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে ওপেনহাইমার। গত বছর ২১ জুলাই বিশ্বব্যাপী মুক্তির পর আগস্টে দক্ষিণ কোরিয়া এবং চীনসহ অন্যান্য এশিয়ান বাজারেও মুক্তি পায় এটি। বক্স অফিসেও হিট হয়। কিন্তু এত দিন জাপানে মুক্তির জন্য কোনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি সিনেমাটির। দীর্ঘ আলোচনার পর অবশেষে জাপানিরা দেখতে যাচ্ছে বছরের অন্যতম হিট চলচ্চিত্রটি।



সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh