মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল
প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২৩ পিএম
শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত। ফাইল ছবি
আইসিসি এলিট প্যানেলের আম্পায়ার হিসেবে প্রথমবারের মতো শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত নির্বাচিত হয়েছেন। তার আগে আইসিসির ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের জন্য বাংলাদেশ থেকে চারজনকে মনোনীত করা হয়েছে। যা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পুরুষ ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মেয়েদের ব্যর্থতা কিছুটা হলেও ঢেকে দিয়েছে। সৈকতের এলিটে সুযোগ পাওয়া ও নারী আম্পায়ারিংয়ে নতুন নাম যোগ হওয়াকে বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
খেলোয়াড় হিসেবে ক্যারিয়ারে যত অপূর্ণতা ছিল তার পুরোটাই কাটানোর চেষ্টা করছেন সৈকত। জাতীয় দলের সাবেক এ ক্রিকেটারের জায়গা হয়েছে এলিট প্যানেলে। অথচ অনেকে হয়তো জানেই না অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছে, এর পরই তিনি খেলেছেন উনিশ না পেরোনো দলে।
জীবনের সবচেয়ে বড় আক্ষেপটা ১৯৯৪ সালে কেনিয়ায় অনুষ্ঠিত আইসিসি ট্রফি নিয়ে। ফারুক আহমেদের নেতৃত্বাধীন সেই দলে স্পিন বিভাগের দায়িত্বে এনামুল হক মনির পাশাপাশি ছিলেন সৈকত। দেশের ক্রিকেটের খুঁটিনাটি খবর রাখা মানুষের কাছে নামটি পরিচিত হলেও বেশিরভাগের কাছেই রয়ে গেছেন অচেনা। তবে আম্পায়ার সৈকতের পরিচিতির মাত্রা যেন অনেকটাই উল্টো। বাংলাদেশের যে কজন আন্তর্জাতিক আম্পায়ার ম্যাচ পরিচালনা করছেন তাদের মধ্যে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় আর পরিচিত মুখ তিনি। আন্তর্জাতিক পরিম-লে দেশের সুনামকে সমুজ্জ্বল করে চলেছেন।
২০১০ সালের ৮ জানুয়ারি মিরপুরে তখনকার বর্ষসেরা আম্পায়ার সাইমন টোফেলের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা দিয়ে শুরু সৈকতের। এর পরের সময়টা শুধুই এগিয়ে যাওয়া। ব্যাকপেইন ইনজুরির কারণে জাতীয় দলে দীর্ঘদিন খেলার স্বপ্ন পূরণ না হলেও আম্পায়ার হিসেবে এখন তিনি সবার ওপরেই রয়েছেন।
১৮ বছর দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা সৈকত এখন বাংলাদেশের মানুষের কাছে গর্বের নাম। আন্তর্জাতিক আম্পায়ার হিসেবে নাদির শাহ, এনামুল হক মনিদের দেখিয়ে দেওয়া পথে খেলা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করা শুরু করেন। নিজের নিষ্ঠা, একাগ্রতা আর পরিশ্রমের ফলস্বরূপ সেই সৈকত আম্পায়ারিং জগতে বাংলাদেশকে নিয়ে গেলেন অনন্য এক উচ্চতায়। প্রতিক্রিয়ায় সৈকত জানিয়েছেন, ‘এলিট আম্পায়ারে নাম ওঠানো বর্তমানে অনেকের কাছেই স্বপ্নের মতো। যখন মনে হলো বাংলাদেশে আমি প্রথম এ দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছি তখন অন্যরকম ভালোলাগায় মনটা ভরে ওঠে। এখন নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে আমি পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছি।’
এ পর্যন্ত পুরুষদের ক্রিকেটে ১০টি টেস্ট, ৬৩টি ওয়ানডে, ৪৪টি টি-টোয়েন্টি এবং নারীদের ক্রিকেটে ১৩টি ওয়ানডে ও ২৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আম্পায়ার ছিলেন সৈকত। নারীদের ২০১৭, ২০১৮ ও ২০২১ বিশ্বকাপসহ পুরুষদের সবশেষ ২০২৩ বিশ্বকাপেও দায়িত্ব বেশ দক্ষতার সঙ্গে পালন করেছেন তিনি। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের ছাত্র থাকাবস্থায় সূর্যতরুণ সংঘের হয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে খেলা শুরু করেন। সার্ক ক্রিকেটে ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ দলে সুযোগ পান। এখন খেলোয়াড়ের চেয়ে আম্পায়ার সৈকত বেশ সমৃদ্ধ।
এদিকে সৈকতের এমন অর্জনের ঠিক দিন কয়েক আগে আইসিসির প্যানেলে বাংলাদেশের চার নারী আম্পায়ার ও এক ম্যাচ রেফারি মনোনীত হয়েছেন। আইসিসি ডেভেলপমেন্ট আম্পায়ার্স প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে চারজন নারী আম্পায়ার- সাথীরা জাকির জেসি, রোকেয়া সুলতানা, ডলি রানী সরকার ও চম্পা চাকমাকে। তা ছাড়া ম্যাচ রেফারি বিভাগেও আইসিসি আন্তর্জাতিক প্যানেলের জন্য মনোনীত করেছেন আরেক বাংলাদেশি সুপ্রিয়া রানী দাসকে। আন্তর্জাতিক ম্যাচ রেফারি হিসেবে বাংলাদেশ থেকে দায়িত্ব পালন করছেন আখতার আহমেদ ও নিয়ামুর রশিদ রাহুল। এবার তাদের দেখে নতুনদের সুযোগ পেলে নিজেকে প্রমাণের পালা।