স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি ২৪ বছরেও

এম ডি হোসাইন

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৪, ০৯:৪৩ এএম

স্বাধীনতা স্তম্ভ।

স্বাধীনতা স্তম্ভ।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের নানা ইতিহাস। ঐতিহাসিক এ মাঠেই একাত্তরের ৭ মার্চ কালজয়ী ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীপ্ত কণ্ঠে বাঙালি জাতিকে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণের প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজে খরচ হয়েছে ২৬২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। কিন্তু এখনো প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের পুরো কাজ শেষ হয়নি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়।

উদ্যানের যে অংশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তার ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, সেখানে বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য এবং যেখানে মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেছিল, সেখানে আরেকটি ভাস্কর্য তৈরির কাজ চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এ ছাড়া হাঁটাপথ, ফোয়ারাসহ অনেক রকম কাজ হবে উদ্যানজুড়ে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো উদ্যানের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক স্থানগুলো সংরক্ষণ কাজ শেষ করতে পারেনি সরকার। এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ আরেক দফা বাড়িয়ে কাজ করার চেষ্টা করছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ভাস্কর্যগুলো নির্মাণ হয়নি; সরকার করেনি তাই। এখানে শুধু ভাস্কর্য নয়, আরও অনেক কিছু করা উচিত ছিল, কিন্তু হয়নি।

এদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণের (তৃতীয় পর্যায়) প্রাথমিক নকশায় গাছ কেটে ফেলার কোনো পরিকল্পনা ছিল না, তারপরও হাঁটার পথ তৈরি করার জন্য অনেকগুলো গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত স্থপতিরা বলেছেন, হাঁটার পথ তৈরি করার অংশটি পরিকল্পনায় পরে যুক্ত করা হয়েছে। তারা বলেন, নতুন অনেক কিছু তৃতীয় পর্যায়ের নকশায় সংযুক্ত করা হয়েছে, যা মূল নকশার পরিপন্থী। এ ব্যাপারে মূল নকশা প্রণেতাদের অভিমতও নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন তারা। করোনাকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কেটে ফেলার খবর পত্রিকায় আসার পর পরিবেশ আন্দোলন কর্মী এবং বিভিন্ন সামাজিক সংস্থাগুলো বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানান।

স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ তৃতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের আওতায় ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর একনেকে অনুমোদন হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রকল্পের মেয়াদ পার হলেও এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ও আত্মসমর্পণ স্থানের দুই ভাস্কর্যের মডেল চূড়ান্ত ছাড়া আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফলে ব্যয় ও সময় বাড়িয়ে আবারও প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে কাজ করার চেষ্টা চলছে। 

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, কর্তৃপক্ষ তৃতীয় পর্যায়ের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার আগে বিশেষজ্ঞদের অভিমত নেয়নি। চূড়ান্ত করার আগে এ ধরনের পরিকল্পনা জনগণের সামনে উন্মোচিত করার কাজটি বিশ্বজুড়ে প্রচলিত, কিন্তু তারা এটি অনুসরণ করেননি। তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল স্থপতি, শহর পরিকল্পনাকারী, উদ্ভিদবিদ ও সামাজিক কর্মীদের মতও নেওয়া।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh