ভারতের কয়লা গুহায় গিয়ে ২ বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৪:৩২ পিএম

কয়লা গুহায় প্রাণ হারানো দুই যুবক। ছবি: সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

কয়লা গুহায় প্রাণ হারানো দুই যুবক। ছবি: সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের ট্যাকেরঘাট সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাই পথে অবৈধভাবে ভারতে গিয়ে কয়লা গুহায় দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও চারজন আহত হয়েছেন। এই ঘটনার এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

নিহতরা হলেন,উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের লাকমা নয়াপাড়া (৩ নং ওয়ার্ড) গ্রামের বাসিন্দা শাহাব উদ্দিনর ছেলে খায়রুল মিয়া (২৭) ও একেই গ্রামের রমজান মিয়ার ছেলে মুকলেছ মিয়া (২৫)। নিহত দুইজন সম্পর্কে তারা ভাইরা ভাই।

গতকাল সোমবার (১৮ মার্চ) রাত ১১টার দিকে উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের ট্যাকেরঘাট সীমান্তে ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের ১১৯৮ আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ২ এস এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

খবর পেয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে তাহিরপুর থানা পুলিশ এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দীন।

স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, কলাগাও, চারাগাও, জঙ্গলবাড়ি, লালঘাট, বরুংঙ্গা ছড়া এলাকা দিয়ে রাতের আঁধারে উপজেলার সীমান্তের চিহ্নিত চোরাচালানীরা চোরাই পথে অবৈধভাবে ভারত থেকে শত শত টন কয়লা বস্তায় ভরে স্থানীয় যুবকদের দিয়ে বাংলাদেশে আনছে। এরই ধারাবাহিকতায় চোরাচালানীরা লাকমা গ্রামের ১০-১৫ জন যুবককে রাত ১০ টার দিকে ট্যাকেরঘাট স্কুল ও লাকমা বাজারের মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ১১৯৮ এর ২ এস এলাকা দিয়ে চোরাই পথে বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে অবৈধভাবে ভারতের কয়লা গুহা থেকে কয়লা আনতে পাঠায়। ওখানে একাধিক গুহা থাকলেও যে গুহাটিতে খায়রুল মিয়া (২৭) ও মুকলেছ মিয়া (২৫) যান সেটিতে অক্সিজেন পাওয়া যায় না, এতে বিষাক্ত গ্যাসে দম বন্ধ হয়ে যায়। এই কারণে কেউই ওই গুহায় যান না। কিন্তু তারা দুইজন মিলে কাউকে না জানিয়ে ওই গুহার ভিতরে গিয়েই অক্সিজেন সংকটে পড়ে বিষাক্ত গ্যাসে অসুস্থ হয়ে গুহার ভিতরেই পড়ে থাকেন। পরে তাদের গুহার ভিতরে যাওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে সাথে থাকা সহযোগিতা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে তাদের উদ্ধার করে গুহার বাহিরে নিয়ে আসেন। পরে দুইজনকেই দ্রুত রাত ১২টায় তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে আসলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক আবাসিক মেডিকেল অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন মৃত ঘোষণা করেন। ওই গুহা থেকে নিহত দুই যুবককে উদ্ধার করতে গিয়ে আরো চারজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

সীমান্ত এলাকার সচেতন মহল দাবি করেন, চোরাকারবারিদের প্ররোচনায় একের পর এক যুবকের মৃত্যু হচ্ছে কয়লার গুহায়। যাদের প্ররোচনায় এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে সেই সব কয়লা চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে ও তাদের সহযোগিতাকারী এবং তাদের গডফাদারদের আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। না হলে সীমান্ত এলাকায় এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটবেই।

তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দীন নিহতের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, নিহতদের লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্য মঙ্গলবার সকালে সুনামগঞ্জ মর্গে পাঠানো হয়েছে। এই বিষয়ে অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ট্যাকেরঘাট বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার সাইদুর রহমান জানান, সীমান্ত এলাকার কঠোর নজরদারির রয়েছে আর নিয়মিত টহল দিচ্ছি আমরা। শুনেছি ভারতের কয়লা গুহায় দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তবে তারা কিভাবে আর কখন ভারতে প্রবেশ করেছে তা আমাদের জানা নেই।

এই বিষয়ে সুনামগঞ্জ ২৮ বিজিবির অধিনায়ককে সরকারী মোবাইল নাম্বারে ফোন দিলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য দেওয়া সম্ভব হয়নি।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh