আমি সকল চরিত্রের সাথে মিশে যেতে পারি: লিলি গ্ল্যাডস্টোন

ভাষান্তর: জাফর খান

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৪, ০১:৩০ পিএম

অভিনেত্রী লিলি গ্ল্যাডস্টোন।

অভিনেত্রী লিলি গ্ল্যাডস্টোন।

বিশেষ এক সাক্ষাৎকারে গোল্ডেন গ্লোব এওয়ার্ড জয়ী অভিনেত্রী -লিলি গ্ল্যাডস্টোন কিলারস অফ দ্য ফ্লাওয়ার মুন-এ ওসেজের ‘মলি’ নামক কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ইতিবাচক রিভিউ পাওয়ার বিষয়ে নানা কথা বলেছেন। লিলি গ্ল্যাডস্টোন-কে মার্টিন স্কোরসেসের পিরিয়ড সাগা কিলার অফ দ্য ফ্লাওয়ার মুনের এক অন্যতম আবিষ্কার বলা হয়। তিনি রবার্ট ডি নিরো এবং লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওর মতো নামকরা অভিনেতাদের সামনে বেশ প্রশংসার সাথেই নিজের অভিনয় দক্ষতার ছাপ রেখেছেন।  সম্প্রতি হিন্দুস্তান টাইমসের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তার সৃজনশীল অভিনয় দক্ষতা, পর্দায় তার সম্প্রদায়ের সদস্য হিসাবে নিজের ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটানো এবং কীভাবে গল্পের মধ্যদিয়ে উপজাতিদের সম্পর্কে মেসেজ দিয়েছেন-সেসব নিয়েই কথা বলেছেন। তার এই সাক্ষাৎকারটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। 

গত মাসে যখন আমি মার্টিন স্কোরসেজের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম, তখন তিনি বলেছিলেন যে ‘কিলারস অফ দ্য ফ্লাওয়ার মুন’  উপনিবেশিত শাসন আমলের এক প্রতিচ্ছবি। আপনি কি বিশ্বাস করেন যে এ গল্পটি আপনার কাছে ব্যক্তিগত অর্জনের হিসাবে অন্যতম?

খুব ভালো প্রশ্ন। আমার কাছে এটিকে সার্বজনীন মনে হয়েছে। এমন অনেকেই রয়েছেন যারা এটির সাথে মলির তুলনাও করেছেন। এই ফিল্মটি ঔপনিবেশিকতা এবং শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদে জনগণের জটিল সমিকরণের এক হিসাব। আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছে লোকেরা এর প্রতি সবচেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে এবং সবচেয়ে বেশি অনুরণিত হয়েছে । এটি তারাই করেছে যারা উপনিবেশ শাসনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আপনি এই ফিল্মটি তৈরি করার সময় মার্টিন স্কোরসেজকে ওসেজ সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে দেখেছেন। আপনি ব্যক্তিগতভাবে এ বিষয়ে বিশেষ কোনো সাহায্য করেছেন কী?

হ্যাঁ, আমি ছাড়াও লিও এ কাজে বেশ সহযোগিতা করেছেন। আমি আমার ভাষা শিক্ষক ক্রিস কর্টের সাথে দেখা করে এ বিষয়ে ধারণা নিয়েছিলাম। ক্রিস এটা জানেন যে যিনি ভাষা শেখান, তিনি সে ভাষার সংস্কৃতি সম্পর্কেও বেশ জানেন। আর আপনি যদি সংস্কৃতি শেখান, তার মানে আপনি গল্পও শেখান। ক্রিস আমাকে এক কৌশলী ব্যক্তি সম্পর্কে গল্প বলেছিলেন, যা আমাদের দেশেও রয়েছে। যদিও আমাদের চালাকির চিত্র হয়তো ভিন্ন। বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ওসেজের বেশ কয়েকটি কৌশলী পরিসংখ্যান রয়েছে। ক্রিস আমাকে একটি কোয়োট চিত্র সম্পর্কে বলছিলেন। তখন আমি ভাবতে থাকলাম বাহ, এটি বাকি চলচ্চিত্রের জন্য সত্যিই একটি ভাল উপমা হতে পারে! পরে ক্রিস এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের অনুমতি নিয়ে আমরা আমাদের চলচ্চিত্রে এটি ব্যবহার করেছি।

আমরা সেই গল্পটি ফিল্মে বলি না, তবে আর্নেস্ট (লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও) কোয়োটের সেই চিত্রেরই প্রকাশ ঘটিয়েছে। তিনি স্বাচ্ছ্যন্দের মধ্যে বাস করা, ভাল বোধ করার মধ্যেই থাকতে ভালোবাসেন। এমনকি নির্বোধ এবং বোকা হয়েই নানা সমস্যায় পড়তে থাকেন। তিনি শেষ পর্যন্ত জয়ী না হলেও দর্শকরা তাকে দেখে কীভাবে সচেতন হতে হবে তা শিখেছে। 

আপনি একটি সাক্ষাৎকারে একবার বলেছিলেন যে কোনও ওসেজ চলচ্চিত্র নির্মাতা মার্টিন স্কোরসেজের মতো একটি মহাকাব্য তৈরি করতে $200 মিলিয়ন পাবার যোগ্যতা রাখে না।

( হাসি দিয়ে) আশা করছি আমি ভুল ছিলাম!

এবারে আমি মূল  প্রসঙ্গে আসি। আপনি কি বিশ্বাস করেন যে আপনি এই সিনেমার মধ্যদিয়ে সেই চরিত্রের বিন্যাস ঘটিয়েছেন যেটির মাধ্যমে সঠিক দিক নির্দেশনামূলক একটি পদক্ষেপ আমাদের জন্য হতে পারে, যা আমাদের কল্পনার চেয়েও দ্রুত সময়ে সেই দিনটিকে দেখতে সাহায্য করবে?

জিজ্ঞাসা করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমি তাই আশা করি, আমি সত্যিই তাই আশা করি. চলচ্চিত্রটি এমন এক প্রতিক্রিয়া ছিল যা আমার কাছে বেশ প্রতিক্রিয়ামুলক মেসেজ দিয়েছে বলে মনে করি। দর্শকদের কাছ থেকে বিশেষত বেশি এসেছে মলি এবং তার বোনদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে। তারা মনে হয় দেখতে চায় ওসেজ এই পরিস্থিতিতে ঠিক কী অনুভব করছিল। চলচ্চিত্রটিতে যা ছিল তার অনেকটাই ওসেজ, চার্লস রেড কর্নের লেখা একটি বই দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। এই গল্পগুলোতে নানা বিষয় নিয়ে একটি ভালো প্রোডাকশনের জন্য বেশ কিছু উপাদান রয়েছে যা কিনা বিশ্ববাসীর জন্য আরেকটি মাত্রা হতে পারে। এই চালবাজ গল্পটি এই চলচ্চিত্রটিকে এতটাই সর্বজনীন করেছে যা কিনা আমাদের পরিচিত অনেক দেশীয় প্রেক্ষাপটের পরিস্থিতি থেকেই এসেছে।

পরিশেষে জানতে চাই, আপনি কি মনে করেন যে এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আপনি সমালোচকদের যে পরিমাণ প্রশংসা পাচ্ছেন তা আপনাকে একজন আদিবাসী মহিলা হিসাবে আপনার পরিচয়ের বাইরে আরও সুযোগ এনে দিতে পারে? অথবা এমন কোনো উদ্বেগ রয়েছে কী যে একজন অভিনেতা হিসাবে আপনার সম্প্রদায়ের ভূমিকার মধ্যেই আপনাকে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে?

আমি যখন স্নাতকের শিক্ষার্থী ছিলাম সে সময়েই আমাকে বলা হয়েছিল যে, যদি আমি চাই তবে আমার চরিত্রগুলো জাতিগত সীমানার মধ্যেই যাতে সীমাবদ্ধ রাখি। তবে এখন পর্যন্ত, এটা আমাকে তা ফিরে পেতে  সাহায্য করেনি। আমি যে কোনো চরিত্রে অভিনয় করি। যা দেশীয় বা দেশীয় ইতিহাস বা সংস্কৃতিকে তুলে ধরে কিংবা সেটা তুলে ধরা হোক বা না হোক, আমি সবসময় যে কোনো চরিত্রের সাথেই মিশে যাই। সংক্ষিপ্তভাবে যদি উত্তর দেই তবে বলব আমি চলচ্চিত্রে বেশ কিছু আকর্ষণীয় প্রস্তাবও পেয়েছি যা একজন শিল্পীর ক্যারিয়ার প্রসারিত করতে বেশ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

নেটিভ আমেরিকান সারা বিশ্বেই রয়েছে। একটি উদাহরণ দেই, আমার সাথে ভিয়েনায় একজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির সাথে দেখা হয়েছিল। তিনি ভিয়েনিজ বংশোদ্ভূত ছিলেন। তার দাদি ছিলেন ব্ল্যাকফিট শতাব্দীর শুরুতে ভিয়েনিজ এক কৃষকের স্ত্রী। তারা একসাথে ভিয়েনায় ফিরে আসেন এবং একটি পরিবার শুরু করেন সেখানে। আমি যখন তার সাথে দেখা করি, তখন আমি বললাম, হ্যাঁ, আপনাকে বাড়ির লোকের মতোই দেখাচ্ছে। অনেকটাই এমন দেখাচ্ছে যেন আমরা একটি সংকীর্ণ বাক্সে আটকে রয়েছি। তবে স্থানীয় লোকেরা সর্বত্র ছিল এবং তারা সর্বদাই আমাদের সঙ্গে থাকবে। আমরা বিশ্বের অনেক মানুষের মতোন, আমরা বিশ্ব নাগরিক। আর তাই এখন আমি যে ভূমিকাই পালন করি সেটাই হবে এ জাতির জন্য একটি সম্প্রসারণ এবং প্রদর্শনমূলক দিক নির্দেশনা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh