‘যে কথা মনেতে ছিল’

আব্দুল্লাহ আল মামুন রিটন

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৩৩ পিএম | আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০২:৫৫ এএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

তখন সবে এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করে গা-ঝাড়া দিয়ে ফ্রি মুডে দিন কাটাচ্ছি। সকাল বিকাল কফি-শপে বন্ধুদের সাথে আড্ডা। কখনো কখনো রাত হয়ে যেত বাসায় ফিরতে। যদিও মা টেনশনে থাকতেন, কিন্তু বাড়ির বড়রা কেউ কিছু বলতেন না।

প্রতিদিনের মতোই সেদিনও সকালে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে কফি-শপ থেকে বাসায় ফিরছি। হঠাৎই একটি কালো রঙের কার এসে আমার শরীর ঘেঁষে দাঁড়ালো।

-এই শাওন, ভেতরে এসো।

একটা অল্পবয়সী মেয়ে। ওকে চিনি আমি। আমার দুই ক্লাস নিচে পড়তো। পাশের মহল্লার বড় ঘরের মেয়ে। ওর নাম দীঘা।

-কী ব্যাপার দীঘা?

-ভেতরে এসো।

ও কারের গেট খুলে মেলে ধরে আছে আমার অপেক্ষায়। আমার খুবই লজ্জা এবং আতঙ্ক অনুভব হচ্ছিল। একে তো বড়লোকের মেয়ে, তার উপর ভীষণ রকম সুন্দরী। শুধু আমি না, আমার মতো অনেকেই ওর চালচলন এবং পরিচয় যারা জানে তারা কেউ ওর আশেপাশে যাওয়ার সাহস পায় না।

আমার ডানহাত ধরে টেনে ওর পাশের সিটে বসালো। ড্রাইভারকে মধ্য শহরের একটি কফি-শপের দিকে যেতে বললো দীঘা।

-কি? এর মধ্যে কারো ফাঁদে-টাদে পা দাওনি তো?

ওর প্রশ্ন শুনে আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। আতঙ্ক তখনো কাটেনি আমার। কী উত্তর দেওয়া উচিত বুঝতে না পারলেও মুখে বললাম: না দীঘা।

-উফ্! তোমার কণ্ঠে আমার নামটা শুনতে শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে। বহুদিন পরিকল্পনা করেও সাহস পাইনি তোমাকে এভাবে ছিনতাই করতে।

দীঘা কথাগুলো বলেই হাসতে লাগলো। কারের মিউজিক সিস্টেমে তখন খুব আস্তে একটা সুন্দর গান বেজে চলেছে- ‘আমার পরান যাহা চায় তুমি তাই’।

আমার ধাতস্থ হতে একটু সময় লাগলো। ততক্ষণে গাড়ি এসে থামলো মৌটুসি নামের অন্য একটি কফি-শপে। দুজনে ভেতরে ঢুকলাম। দীঘা কফির অর্ডার করে এক কোণের একটা টেবিলে আমাকে নিয়ে গেল। মোটামুটি অধিকাংশ টেবিলেই জোড়ায় জোড়ায় কাপলরা বসে আছে।

-শাওন। আজ তোমাকে ছিনতাই করার একটা কারণ আছে। শুনতে চাও সেই কারণ?

আমি গলা পরিষ্কার করে বললাম: হ্যাঁ দীঘা। বলে ফেলো।

-শাওন, আমি তোমাকে বহুদিন থেকেই পছন্দ করি। ইদানীং মনে হচ্ছে আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি।

-ঠাট্টা করছো দীঘা?

-না শাওন। মনের কথা বলছি।

-বিশ্বাস করতে বলছো?

-এটা তোমার ব্যাপার। আমার ভেতর থেকেই কিছুদিন একটা প্রেসার অনুভব করছিলাম যে আমি তোমাকে ভালোবাসি এটা তোমাকে সামনাসামনি জানানো উচিত। অনেক সাহস সঞ্চয় করে আজ প্রেশার মুক্ত হলাম। বাকিটা তোমার উপর।

কফি চলে এসেছে। আমি আর কোনো উত্তর ওকে দিলাম না। কফিতে দুজনেই চুমুক দিতে দিতে একে অপরকে নীরবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম। একসময় কফি শেষ হয়ে গেল।

-আরেক মগ কফি হলে কেমন হয় শাওন? 

-হুম ভালোই হয়। আরো কিছুক্ষণ দুজন দুজনকে নীরবে দেখতে পারবো।

আমাকে হাসতে দেখে দীঘাও মৃদু হাসতে লাগলো।

-শাওন?

-বলো।

-আমাকে ফিরিয়ে দেবে?

-তোমাকে যে ফিরিয়ে দেবে সে পৃথিবীর সব থেকে বড় গাধা।

দুজনেই হাসতে হাসতে কারে এসে বসলাম। আমার বাসার কাছাকাছি এসে দীঘা আমাকে নামিয়ে দিয়ে বললো: আমার ফোন নম্বর নেবে না?

আমি হেসে ওকে বিদায় জানানো ভঙ্গি করে বললাম: পছন্দের মানুষের ফোন নম্বর সংগ্রহ করাই থাকে। তোমার ফোন নম্বর আমার মুখস্থ। 

দীঘা সম্ভবত কেঁদে ফেলেছে। চোখ মুছতে মুছতে বললো: আসি, কাল সকাল ১১টায় মৌটুসিতে অপেক্ষা করবো।

দীঘা চলে যাচ্ছে। যাকে আমি দীর্ঘদিন ভালোবাসার কথা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু আজ ও নিজেই সেই প্রিয় কথাটিই বলে গেল।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh