এক ভিন্ন রকম পাহাড়ি শহর দুর্দান্ত ডালহৌসি

সজল জাহিদ

প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:১৭ এএম

ডালহৌসির পাহাড় ঘেরা জনপদ।

ডালহৌসির পাহাড় ঘেরা জনপদ।

পুরো ভারতের প্রায় সকল পাহাড়ি অঞ্চলেই যাওয়ার এবং দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। বাড়ির কাছের দার্জিলিং, একটু দূরের সিকিম, অন্যপাশের মেঘালয়, দুর্গম নাগাল্যান্ড, দূরের উত্তরাখণ্ড, অপূর্ব কাশ্মীর, দুর্লভ লাদাখ, দক্ষিণের পশ্চিমঘাট পর্বতমালা, সব সময়ের প্রিয় হিমাচল প্রদেশের শিমলা ও মানালি। 

প্রকৃতি দিয়ে মুড়ে থাকা এবং পরিচ্ছন্ন, সেই সঙ্গে দারুণ জৌলুসে ভরা পাহাড়ি শহরের দেখা আগে পাইনি যেটা এবারের ডালহৌসির পাহাড় ঘেরা জনপদে পেয়েছি।

সত্যি বলতে কী, একই সঙ্গে এতটা ন্যাচারাল, এতটা বুনো অরণ্যে ঘেরা, এত সবুজের মাঝেও যে এত চমৎকার সব আবাসিক হোটেল থাকতে পারে সেটা ভাবনাতেও ছিল না। দুই-একটা উদাহরণ দিলেই সেটা বোঝা যাবে। ধরুন দার্জিলিংপাহাড়, অরণ্য দুটোই আছে, কিন্তু ওই এত মানুষের ভিড় আর বেশ ঘিঞ্জি হয়ে গেছে আজকাল। উত্তরাখ-সবই আছে কিন্তু খাবারদাবার নিয়ে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়! লাদাখ প্রকৃতিগত সৌন্দর্যের দিক দিয়ে সেরা নিঃসন্দেহে, কিন্তু নানা রকম অনিশ্চয়তা আর নাগরিক সুযোগ সুবিধার অভাব তো আছেই, তার ওপর আবহাওয়াগত অসুবিধাও আছে। 

কাশ্মীর যদি হয় স্বর্গীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, কিন্তু নিরাপত্তা, খরচ আর নানা রকম বিধিনিষেধ মনের মতো করে যেখানে সেখানে যেতে দেয় না। আর শিমলা-মানালি যদি হয়, সবকিছুই চমৎকার। কিন্তু আজকাল এই দুই হট টুরিস্ট স্পটের খরচটা এতটাই বেড়ে গেছে যে আমার মতো মানুষের খরচ কুলিয়ে ওঠা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তো এমন নানা রকম ছোটখাটো অসঙ্গতি সব জায়গাতেই আছে, থাকবে সেটাই স্বাভাবিক।

কিন্তু একই সঙ্গে এমন চমৎকার পাহাড়ি শহর, সেই পাহাড়ি শহরের পুরোটাই একদম আদিম অরণ্য দিয়ে ঘেরা, শত বছরের পুরনো পাইন আর ওক গাছের আচ্ছাদনে ঘেরা, ঘন জঙ্গলের মাঝে অসাধারণ আর আধুনিক সকল আয়োজনের সব হোটেল, রিসোর্ট; যা বাইরে থেকে দেখলে একদমই বোঝা যায় না। অথচ দামটা একদম সাধ্যের নাগালেই, এতটা পরিছন্ন, ভিড় বা মানুষের কোনোরকম কোলাহল নেই। একই সঙ্গে এবং একই দিনে পাহাড়ের এত এত রূপ অবলোকন করার এমন অভূতপূর্ব জায়গা পেয়ে আমি যারপরনাই পুলকিত! 

এখানে একই দিনে, একই জায়গায় বসে আমি পাহাড়ের চার রকমের রূপের দেখা পেয়েছি। ভোরে বজ্রসহ তুমুল ঝড়বৃষ্টি! বিছানায় আধো ঘুমে থেকে ভাবলাম, যা বাবা আজকের দিনটাই বুঝি মাটি হয়ে গেল! আজ তো আর কোথাও বের হওয়ার কোনো উপায় থাকবে না! এই ভাবনা ভেবে বিছানা ছেড়ে কফি বানিয়ে জানালায় দাঁড়াতেই দেখি মুহূর্তেই বৃষ্টি উধাও! একটু আগেই যে ঝড় হয়েছে তাও বজ্রসহ সেটা আকাশ বা পাহাড় দেখে বোঝার কোনো উপায়ই নেই! 

কারণ জানালার বাইরের পাহাড়ে তখন ঝকঝকে রোদ! দূরের পাহাড়ে ধৌলাধারের বরফ মোড়ানো শুভ্র চূড়ার সারি! আর জানালা খুলে কান পাতলেই পাহাড়ি অরণ্যে হাজার পাখির চিৎকার! বুনো হনুমানের গাছে ডালে ডালে লাফিয়ে বেড়ানোর দৃশ্য! সেই একই পাহাড়ের বারান্দায় একটু পরে বাথরুম শেষে ফ্রেশ হয়ে এসে আর দাঁড়ানোর উপায় রইল না, টিপ টিপ বৃষ্টির জন্য! 

কিন্তু আবারও যখন মনটা খারাপ করে রুমে থাকা ব্রেড আর বাটারের স্বাদ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি তখনই বৃষ্টি শেষে একদম ঝলমলে রোদের আনন্দ, দূরের পাহাড়ের মেঘেদের দলের ওড়াউড়ি... অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকার মতো মুগ্ধতা!

ঝটপট রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলাম সারাদিনের মতো এবং সত্যি বলতে কী চমৎকার রৌদ্র ঝলমলে সারাদিন উপভোগ করেছি পাহাড়ের ভ্যালিতে, ঘন পাইনের অরণ্যে, পাহাড়ি ঝরনাধারায় অবগাহনে, চমৎকার আর বনেদি সব পাহাড়ি স্থাপনা দর্শনে, পাহাড়ের চূড়ায় বরফের শুভ্রতায়!

মোট কথা, পাহাড়ের কাছ থেকে যা যা সুখস্মৃতি জমিয়ে নেওয়া যায় তার সবকিছুই পাওয়া গেছে, পাওয়া যায়, পাওয়া যাবে শুধু ডালহৌসি থেকেই। বিশেষ আর উপরি পাওনা হিসেবে পাওয়া যাবে সাধ্যের মধ্যেই চমৎকার সব আবাসনের ব্যবস্থা, এমনকি চাইলে সেই আবাসের কাচের জানালায় বা রুমের বারান্দায় অথবা উš§ুক্ত ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে বা বসে থেকেই উপভোগ করা যাবে উপরে বর্ণিত সকল পাহাড়ি সুখই! 

আমার ভীষণ ভালো লেগে যাওয়ার আর একটা নতুন পাহাড়ি গন্তব্য ডালহৌসিতে যাওয়াটাও খুব কঠিন বা ঝামেলার নয় তেমন। কলকাতা থেকে পাঠানকোট ট্রেনে; এরপর বাস, কার বা জিপে ডালহৌসি ৮৫ কিলোমিটার।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh