দুই যুগ নিজেকে লুকিয়ে রাখা রোমা বেগমের গল্প

নাসিম আনসারী, ঝিনাইদহ

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:১০ এএম | আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:১৭ এএম

রোমা বেগম। ছবি: ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

রোমা বেগম। ছবি: ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

মুখে লম্বা দাড়ি। কোনটা কাঁচা আবার কোনটা পাকা। গত প্রায় ২৫ বছর ধরে মুখে দাড়ি নিয়েই বসবাস করছেন ঝিনাইদহের এই নারী। পরিবার পরিজন বলতে বোন ও বোনের সন্তানরা ছাড়া কেউই নেই তার। মুখে দাড়ির কারণে ২৫ বছর অন্যদের থেকে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের রোমা খাতুন। প্রয়োজন ছাড়া বের হন না বাড়ি থেকে। যদিও বের হন মুখ ঢেকে।

রোমা বেগম জানান, বহু বছর আগে দিনটি ঠিক খেয়াল নেই তার গভীর রাতে স্বপ্নে দেখেন এক বিরাট দরবেশ এসে বলেন, কাল থেকে তোমার মুখে পুরুষের মতো দাড়ি গজাবে। তুমি কিন্তু কথনই সে দাড়ি কাটবে না। স্বপ্নের মধ্যেই তিনি না না বলতে থাকেন। একপর্যায়ে তার ঘুম ভেঙে যায়। তিনি ভয়ের মধ্যেই দৈনন্দিন কাজ করতে থাকেন। কয়েকদিনের মধ্যেই তার মুখে দাড়ি গজাতে থাকে। এভাবেই নিজের সেই লোমহর্ষক ঘটনার বিবরণ দেন ৭০ বছরের রোমা খাতুন। তিনি সত্যিই সেই দাড়ি আর কাটেননি। এভাবে চলে গেছে দুই যুগ তার জীবন থেকে। তিনি কথনই বাড়ির বাইরে যাননি বরং বিশেষ প্রয়োজনে গেলেও সবসময় মুখ ঢেকেই বেড়াতেন। হঠাৎ তার এই ব্যতিক্রম মুখাবয়ব বরে হয়ে পড়ে সবার সামনে। গ্রামের মানুষের প্রিয় নানী এখন সবার সমনেই নিজের সেই লোমহর্ষক রাতের গল্প বলেন।


তিনি আরো বলেন, বাবা মারা গেছে ছোট বেলায়। বড় হয়েছেন মামা বাড়িতে। ১২ বছর বয়সে বিয়ে হওয়ার পর একটি সন্তান হলে আতুর ঘরেই মারা যায়। কয়েক বছর পর মারা যায় স্বামী। দ্বিতীয় বিয়ের পর সেই স্বামীও মারা যায় ডায়রিয়ায়। জীবনে সব কিছু হারিয়ে শেষ বয়সে এক আত্মীয়র আশ্রয়ে রয়েছেন ঝিনাইদহের পবহাটি গ্রামে।

তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বলেন, অবসর সময়ে কাঁথা সেলাই, এলাকার নারীদের কোরআন শিক্ষা দিয়ে সময় কাটে তার। কয়েক বছর আগে স্ট্রোক করার পর এখন আর মুখ বেধে থাকতে পারেন না। তাই এখন মুখে দাড়ি নিয়েই বের হতে হয় তার। এক সময় প্রচুর কান্না করলেও এখন মেনে নিয়েছেন তিনি। তারপরও বাড়ি থেকে প্রয়োজন ছাড়া বের হন না।

আত্মীয় ও দেখভাল করা মাছুম কামাল বলেন, অসহায় রোমা খাতুন নারীদের কোরআনসহ নামাজ শিক্ষা দেন। নারীদের নানা প্রয়োজনে যতটুকু পারেন সহযোগিতাও করেন তিনি।


প্রতিবেশী আসমা খাতুন, লাভলী ইয়াসমীন জানান, তিনি সবার প্রিয় নানাী। তার কাছে যাই কারণ তিনি ভালো পরামর্শদাতা। তিনি সবাইকে সমান চোখে দেখেন। প্রথম প্রথম একটু ভিন্নরকম লাগলেও এখন আর লাগে না। বিভিন্ন বাড়িতে ভালোমন্দ রান্না হলে সবাই নানীর সাথে ভাগাভাগি করে খাই। আমাদের পেটে ব্যথা, মাথা ব্যথা, বুকে ব্যথাসহ বিভিন্ন সমস্যায় তার কাছে গেলে তিনি গা ঝেড়ে দেন বা পানি পড়ে দেন। আমরা তা খেয়ে ভালো হই। এর জন্য কোন পয়সা দিতে হয় না।

রোমা খাতুন আরো বলেন, আমার জীবন সত্যিই আলাদা। না হয়েছে স্বামী সন্তান। না হয়েছে সংসার। অনেকে বুকে ব্যথা, পেটে ব্যথা নিয়ে আমার কাছে আসে। ১৯৭১ সালে ১২ বছর বয়সে সদর উপজেলার ঘোড়ামারা গ্রামে বিয়ে হয়। ১০ বছর পর মারা যান স্বামী। তার কয়েক বছর পর মাগুরায় বিয়ে হলে সেই স্বামীও ডায়রিয়ার মারা যান। পরিবার থেকে আবারো বিয়ে দিয়ে সতীনের সংসারে টিকতে না পেরে সেখান থেকেও বিতাড়িত হতে হয়।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh