লোহিত সাগরে জাহাজে হুতিদের হামলা, হুমকির মুখে বিশ্ববাণিজ্য

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:৪৫ পিএম

হুতিদের হামলার মুখে পড়া একটি জাহাজ (গ্যালাক্সি লিডার)। ছবি- সংগৃহীত

হুতিদের হামলার মুখে পড়া একটি জাহাজ (গ্যালাক্সি লিডার)। ছবি- সংগৃহীত

ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা সম্প্রতি লোহিত সাগর ও বাব-এল-মান্দেব প্রণালীতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন বেশ কয়েকটি জাহাজে হামলা করেছে। এর জেরে ১৫ ডিসেম্বরের পর বিশ্বের পাঁচটি বড় কনটেইনারবাহী জাহাজের মধ্যে চারটিই লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। সুয়েজ খাল থেকে যে জাহাজগুলো আসে, সেগুলোকে এই পথেই চলতে হয়। 

লোহিত সাগর পথে নতুন এই সংকটের কারণে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ নতুন মোড় নেওয়ার পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। 

দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হুতিরা আধুনিক সমরাস্ত্র নিয়ে হামলা চালাচ্ছে। এ হামলায় বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই বাণিজ্যপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগীরা মধ্যপ্রাচ্যে নৌ তৎপরতা বৃদ্ধি করছে। এমনকি বাণিজ্যপথ বিপদমুক্ত করতে তারা হুতি বিদ্রোহীদের ওপর হামলাও করতে পারে।

আফ্রিকা ও আরব উপদ্বীপের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা বাব-এল-মান্দেব প্রণালিতে বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রায় ১২ শতাংশ ও কনটেইনার ট্রাফিকের ৩০ শতাংশ পরিবাহিত হয়। কিন্তু সম্প্রতি বিদ্রোহীদের আক্রমণের কারণে এই পথ বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। দৃশ্যত গাজার সমর্থনে হুতি বিদ্রোহীরা এই আক্রমণ চালাচ্ছে, সম্প্রতি যা অনেকটাই বেড়েছে।

১৫ ডিসেম্বর হুতি বিদ্রোহীরা একটি জাহাজে হামলা করার হুমকি দেয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা অন্য একটি জাহাজে হামলা চালায়। শুধু তা-ই নয়, তারা এমভি প্যালাটিয়াম-৩ নামের একটি জাহাজে দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এই প্রথম তারা জাহাজে ব্যালিস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করল।

এর প্রতিক্রিয়ায় গতকাল ১৬ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর জাহাজ ইউএসএস কারনি লোহিত সাগরে ১৪টি ড্রোন গুলি করে নামিয়েছে। ব্রিটিশ জাহাজ এইচএমএস ডায়মন্ড নামিয়েছে আরেকটি ড্রোন। অর্থাৎ বাব-এল-মান্দেবের মতো এমন কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে।

এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের বড় বড় জাহাজ কোম্পানিগুলো বাব-এল-মান্দেব পথে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছে। ১৫ ডিসেম্বর জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয় মায়ার্সক; এরপর তাদের পথ অনুসরণ করে সিএমএ, সিজিএম ও এমএসসি। হুতিদের হামলার লক্ষ্যবস্তু প্যালাটিয়াম ৩-এর মালিকানা প্রতিষ্ঠান এমএসসি নিরাপত্তার কারণে তাদের জাহাজ চলাচলের পথ সুয়েজ খাল থেকে সরিয়ে নিয়েছে। এখন তারা আফ্রিকা ঘুরে উত্তমাশা অন্তরীপ দিয়ে জাহাজ চালাচ্ছে।

বস্তুত, বৈশ্বিক কনটেইনার জাহাজ পরিবহনের ৫৩ শতাংশ এ চারটি কোম্পানির হাতে। এখন তারা যদি এই সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে ছোট ছোট জাহাজ কোম্পানিগুলো ভয়ে তাদের পথ অনুসরণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হচ্ছে, সুয়েজ খাল দিয়ে জাহাজ পরিবহন বন্ধ হয়ে গেলে জাহাজ পরিবহনের সময় ও খরচ দুটিই বাড়বে; সেই সঙ্গে পণ্য সরবরাহে সংকট তৈরি হবে। ২০২১ সালে তাইওয়ান পরিচালিত এভারগিভেন জাহাজ সুয়েজ খালে ছয় দিন আটকে থাকায় বৈশ্বিক সরবরাহ সংকট ঘনীভূত হয়েছিল। এরপর লোহিত সাগরের সংকট কাছের আরব সাগরে সঞ্চালিত হলে আরেক বিপদ। বিশ্বের সয়াবিন তেলের এক-তৃতীয়াংশ এই পথ দিয়ে পরিবাহিত হয়।

এ ছাড়া মিসরের রাজস্ব আয়ের বড় উৎস হচ্ছে সুয়েজ খাল। তারা এমনিতেই অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে, এখন সুয়েজ খাল দিয়ে জাহাজ পরিবহন দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকলে তারা বড় সংকটে পড়বে।

সূত্র- দ্য ইকোনমিস্ট, রয়টার্স

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh