নতুন কারিকুলাম জাতির প্রতি আমাদের কমিটমেন্ট: অধ্যাপক মশিউজ্জামান

আহমেদ সেলিম

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১৩ পিএম | আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১৮ পিএম

অধ্যাপক মশিউজ্জামান। ফাইল ছবি

অধ্যাপক মশিউজ্জামান। ফাইল ছবি

আসছে শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচি ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতে আসছে ব্যাপক পরিবর্তন। নতুন শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণির আগের সব পাবলিক পরীক্ষা তুলে দেওয়া হয়েছে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পদ্ধতিতেও আনা হয়েছে পরিবর্তন। এছাড়া থাকছে না নবম শ্রেণিতে বিভাগ পছন্দের সুযোগ। এর বদলে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা পছন্দমতো বিভাগে পড়তে পারবেন। নতুন কারিকুলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাম্প্রতিক দেশকালের মুখোমুখি হন এনসিটিবির সদস্য (কারিকুলাম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আহমেদ সেলিম।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে। যা নিয়ে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। বলা হচ্ছে এগুলো শিক্ষাক্রমের সঙ্গে জড়িত। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
ভাইরাল হওয়া সব ভিডিওগুলো মিথ্যা। আমরা বলেছি কারিকুলামে কোনো ত্রুটি থাকলে আমাদের জানাতে। আমরা অবশ্যই তা সংশোধন করব। কিন্তু তা না করে একটি মহল কিছু মিথ্যা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। সাইকেল চালানো কিংবা ব্যাঙের লাফের ভিডিওর পাশাপাশি ইতোমধ্যে ছড়ানো হয়েছে আমরা নাকি নবীর ছবি আঁকার কথা বলেছি। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এই স্পর্শকাতর বিষয় ছড়িয়ে তারা সাম্প্রদায়িক উসকানির চেষ্টা চালিয়েছিল। বিষয়টি জেনে আমরা মামলা করেছি। চারজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে এত সমালোচনা কেন?
আমরা প্রতিনিয়ত এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছি। যারা এসব বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে তারা হাতেগোনা কিছু সংখ্যক মানুষ। আপনারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলুন তারা শিখছে কি না। যারা মনে করছে শহুরে মধ্যবিত্তের গণ্ডিতে শিক্ষাকে আটকে রাখা, তারা চায় না সকলের জন্য শিক্ষা নিশ্চিত হোক।

বলা হচ্ছে শিক্ষায় বেসিক বিষয় থেকে কালচারাল বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তা কতটুকু সঠিক?
এটা একদম মিথ্যা। বিজ্ঞান ও গণিতে কোনো কালচারাল বিষয় নেই। কালচারাল বিষয়গুলো এসেছে শিল্প ও সংস্কৃতি কিংবা বাংলা বইয়ে। গণিত কিংবা বিজ্ঞানের বিষয়গুলো যা পড়ানো হচ্ছে তা হলো অ্যাক্টিভ লার্নিং। আমরা আগে যা পড়তাম তা পুরোটা ছিল থিউরিক্যাল, এখন পড়ানো হচ্ছে এক্সপেরিমেন্টাল। পার্থক্যটা হচ্ছে এই।

শিক্ষাক্রমে রান্নাবান্না শেখার বিষয়টি কেন?
রান্নাবান্না শেখানোর বিষয়টি রেখেছি লাইফস্কিল শেখানোর জন্য। আমরা বলছি ২০৪১ সালে আমরা উন্নত বাংলাদেশ হব। যদি আশা করি তখন কাজের বুয়া আমাদের রান্না করে দেবে আর আমরা খাব তাহলে কি সেটা সম্ভব? ইউরোপ-আমেরিকার মতো উন্নত দেশগুলোতে কাউকে কি কেউ রান্না করে দেয়? আবার রান্না কি শুধু নারীদের জন্য? ঢাকা শহরের রেস্তোরাঁগুলোতে কে রান্না করে? আমরা বলছি সকল পেশাকে সম্মান করার জন্য।

অনেকে বলছে আমাদের কারিকুলাম ভারতের প্রেসক্রিপশন; তা কতটুকু সত্য?
কিছু লোক তো আছে সব সময় ভারতের জুজুর ভয় দেখিয়ে এদেশে রাজনীতি করে। আমরা ২০১৭ সাল থেকে এই কারিকুলাম নিয়ে কাজ করেছি। বিভিন্ন দেশের কারিকুলাম নিয়ে গবেষণা করেছি। এই কারিকুলামটা আমাদের দেশের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তৈরি। এটা কোনো দেশের ডোনারে হচ্ছে না। এনসিটিবির নিজস্ব অর্থায়নে কারিকুলমাটি হচ্ছে।

অনেকে বলছেন মুখস্থ বিদ্যা ভালো ছিল, বাচ্চা অনেক কিছু শিখত। বিষয়টি নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?
মুখস্থ করা তো শিক্ষা না। শিক্ষা ও মুখস্থ করার মধ্যে পার্থক্যটা যদি আমরা বুঝতে না পারি তাহলে মুশকিল। আমরা মুখস্থ করি কিন্তু অনুধাবন করি না বা বুঝতে পারি না। জ্ঞান এবং শিক্ষার মধ্যেও পার্থক্য আছে। যেমন- আপনি জানেন বড়দের দেখলে শ্রদ্ধা করতে হয় কিন্তু আপনি সেটা করেননি। তার মানে আপনার জ্ঞানটা আছে শিক্ষাটা নেই।

কারিকুলাম পরিবর্তন হবে কি?
পরিবর্তন সব সময় হতে পারে। পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো সঙ্কীর্ণতা নেই; যা কিছু কল্যাণকর তা গ্রহণ করতে আমাদের বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই। কেউ যদি কোনো ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেয় তাহলে আমরা তা সংশোধন করব। কিন্তু যারা শিক্ষাক্রম বাতিল হয়ে যাবে বা স্থগিত হয়ে যাবে ভাবছেন তারা ভুল ভাবছেন। নতুন কারিকুলাম জাতির প্রতি আমাদের কমিটমেন্ট।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh