মিয়ানমারে জান্তা সরকার ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের সংঘাতে ২০ লাখ বাস্তুচ্যুত: জাতিসংঘ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৩, ১২:৫৯ পিএম

লোইকাও ইউনিভার্সিটির একটি ক্লাসরুমের ভিতরে জাতিগত কারেনি যোদ্ধারা। ছবি: সংগৃহীত

লোইকাও ইউনিভার্সিটির একটি ক্লাসরুমের ভিতরে জাতিগত কারেনি যোদ্ধারা। ছবি: সংগৃহীত

রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর গণহত্যা ও নির্যাতন চালিয়ে দেশ থেকে বিতাড়িতের পরে এবারে মিয়য়ানমারের জান্তা সরকার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিগত বিদ্রোহী দলগুলোকে দমন করতে শুরু করেছে অকথ্য নির্যাতন-নিপীড়ন। আর এমন চলমান লড়াইয়ের ফলে এরইমধ্যে মিয়ানমারের ২০ লাখ জনগণ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী মিয়ানমার জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে জাতিগত বিদ্রোহী দলগুলোর জোটের হামলার জেরে দুই পক্ষের লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে এসব মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। 

আর দেশটিতে বাড়তে থাকা এই লড়াই-সংঘাত নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এদিকে রাখাইনের পাকতাও শহরে বিদ্রোহীদের ওপর সেনাবাহিনী হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফান দুজারিক বলেন, তিনি সকল পক্ষকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টার আহ্বান জানান। 

দুজারিক বলেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশন ২৬৬৯ অনুযায়ী, সহিংসতা বন্ধে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান) এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ রয়েছেন গুতেরেস। 

চলমান সংঘাতে ২০ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুতের বিষয়টি উল্লেখ করে দুজারিক সংস্তাহটির মহাসচিবের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের আওতায় বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করতে এবং এই আইন লঙ্ঘনকারীদের অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।

এদিকে শান রাজ্যে সেনা এবং পুলিশকে চীন সীমান্ত বরাবর বৃহত্তর এলাকা থেকে হটাতে তিনটি জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর জোটের হামলায় সাফল্য দেখার পর মিয়ানমারের অন্যান্য বিদ্রোহী বাহিনীকে অনুপ্রাণিত করেছে।

 শান রাজ্যের দক্ষিণে থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী কায়াহ রাজ্যে জাতিগত কারেনি বিদ্রোহীরা এরই মধ্যে দেশটির বেশির ভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণের পর প্রধান শহর লোইকাও আক্রমণ করেছে। এরই মধ্যে শহরের উপকণ্ঠে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের দখলে নিয়েছে। 

এদিকে স্বেচ্ছাসেবী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফএস) শান রাজ্যে সামরিক বাহিনীর পরাজয়ের সুযোগ নিতে তাদের নিজস্ব হামলার মধ্যদিয়ে শাসনক্ষমতায় থাকা সামরিক জান্তার ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। যদিওবা জাতিগত সশস্ত্র বাহিনীগুলোর তুলনায় পিডিএফএস কম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং অস্ত্রশস্ত্রেও আধুনিক নয়। 

তবে এই সেনারা কয়েক দশক ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে আসছে। এদিকে জান্তা সরকার ভারতের সঙ্গেও তাদের সীমান্তের বেশির ভাগ অংশের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। আর জাতিগত চীন বিদ্রোহীরা তাদের নিজ রাজ্যে আধিপত্যের পাশপাশি সম্প্রতি রিখাওদার সীমান্ত শহর দখল করে নিয়েছে।

অন্যদিকে দেশটির দক্ষিণে আরাকান আর্মি তাদের যুদ্ধবিরতি শেষ করে সেনা ও পুলিশ ফাঁড়িগুলোতে আক্রমণ শুরু করেছে। ওদিকে, মিয়ানমারের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আরেক জাতিগত বাহিনী কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নও থাই সীমান্তে সেনা ফাঁড়ির ওপর হামলা জোরদার করছে। আর সর্বদক্ষিণের রাজ্য তানিনথারিতেও সেনাদের ওপর এখন নিয়মিত বিদ্রোহী হামলা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এদিকে রাখাইন রাজ্যে বঙ্গোপসাগরের একটি বন্দর নগর পাকতাও বিদ্রোহীদের হাত থেকে পুনরুদ্ধারে আকাশ ও সমুদ্রপথে আক্রমণ করেছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। শুক্রবার মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতী স্থানীয় এক বাসিন্দার উদ্ধৃত দিয়ে জানিয়েছে, রাখাইন জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মি শহরটি দখল করেছিল। তাদের কাছ থেকে এটি পুনরুদ্ধারে আক্রমণ শুরু করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। 

এর আগে হস্পতিবার পশ্চিম মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে লড়াইয়ের কথা জানিয়ে জান্তাবিরোধী বিদ্রোহীদের থ্রি ব্রাদারহুড জোট এক টেলিগ্রাম বার্তায়  জানায়, নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে হেলিকপটার ও কামানের মাধ্যমে পাকতাও শহর আক্রমণ করেছে সামরিক বাহিনী। এ বিষয়ে বিদ্রোহী জোটের ভাষ্য, বিকালের দিকে জান্তা বাহিনী শহরের ভেতরে ঢুকে গুলি চালায় এবং বেসামরিক মানুষদেরকে হত্যা করে। 

তবে জান্তা সরকারের মুখপাত্রের নিকট এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি তিনটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী সমন্বিতভাবে জান্তাবিরোধী ‘অপারেশন ১০২৭’ শুরু করেছে। এর আগে ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর এই অভিযান দেশটির সামরিক সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। 

সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স



সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh