মো. শহিদুজ্জামান বেল্টুু
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:৪৫ এএম | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:৪৬ এএম
ভাষাসৈনিক জাহিদ হোসেন মুসা মিয়া। ফাইল ছবি
জাহিদ হোসেন মুসা মিয়া ঝিনাইদহের জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতা লতিফ মিয়া ও মাতা জবেদা খাতুন। পিতা-মাতার একমাত্র আদরের পুত্রসন্তান ছিলেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই জাহিদ হোসেন মুসা মিয়া নম্র-ভদ্র স্বভাবের মানুষ হিসেবে সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। আত্মীয়তার সূত্রে তিনি ছিলেন আমার পিতার মামাতো ভাই। তার ঝিনেদার বাড়িতে আমি জীবনের আঠারো বছর কাটিয়েছি। আমার বৌ-ভাত অনুষ্ঠানও চাচার বাড়িতে হয়েছিল। যতদিন বেঁচে ছিলেন তার স্নেহের ছায়াতলে আমার জীবন কেটেছে। তার ইন্তেকালে আমি আমার সব থেকে নির্ভরযোগ্য অভিভাবককে হারিয়েছি।
জাহিদ হোসেন মুসা মিয়া ঝিনাইদহ মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে ম্যাট্রিক পাস করেছিলেন। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য তিনি জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন, সেখান থেকে পরবর্তী সময় এমএম কলেজে চলে আসেন।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি যে সকল দেশপ্রেমিক ছাত্র জনতা নিজের জীবন বিপন্ন রেখে মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে রাজপথে শামিল হয়েছিলেন তাদের একজন ঝিনাইদহ জেলার কৃতী সন্তান ভাষাসৈনিক জাহিদ হোসেন মুসা মিয়া।
ছাত্র রাজনীতি শেষ করে তিনি প্রথমে আওয়ামী মুসলিম লীগ, পরে মওলানা ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগদান করেছিলেন এবং দীর্ঘদিন ঝিনাইদহ জেলার ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রধান দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৭৩ সালে মওলানা ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির পক্ষ থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
তিনি অত্যন্ত সৎভাবে জীবন-যাপন করেছিলেন ও একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক ও সমাজসেবক ছিলেন। জাহিদ হোসেন মুসা মিয়া ঝিনাইদহ শহরে শিল্পী সংঘ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। তিনি একদিকে যেমন ধর্মভীরু ছিলেন অন্যদিকে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি তার সহধর্মিণীসহ পবিত্র মক্কা শরিফে হজ পালন করেছিলেন।
ভাষাসৈনিক জাহিদ হোসেন মুসা মিয়া সবাইকে কাঁদিয়ে তার সহধর্মিণী ও নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুলসহ (চেয়ারম্যান, রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস) ৭ সন্তান ও তার অনুসারীদের রেখে ১৭ নভেম্বর ২০২০ তারিখে এভার কেয়ারে (সাবেক এ্যাপোলো হাসপাতাল) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে গোটা ঝিনাইদহ জেলাতে। ঝিনাইদহবাসী হারাল তার শ্রেষ্ঠ বীর সন্তানকে।
জাহিদ হোসেন মুসা মিয়া মরেও অমর হয়ে থাকবেন শতকোটি বাঙালির হৃদয়ে। আল্লাহপাক তাকে বেহেস্তের শ্রেষ্ঠ মোকাম দান করুন, আমিন।