আল-মনিটর: বাস্তুচ্যুত গাজাবাসীদের সঙ্গী ধুলো, ভয় ও ক্ষুধা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৩, ১২:৩৪ পিএম

বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি শিশুরা খান ইউনিসে খাবারের জন্য অপেক্ষা করছে। ছবি আল-মনিটর

বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি শিশুরা খান ইউনিসে খাবারের জন্য অপেক্ষা করছে। ছবি আল-মনিটর

ইউসুল মেহনা প্রথমে খুব করে ভেবেছিলেন শিগগিরই বধহয় যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে। অথচ ভাবনার মিল খুঁজে পাননি কারণ তার বাড়ি ইসরায়েলি হামলায় ধুলিস্যাত হয়ে যায় আর অন্যদিকে তিনি আহত হন। এরপরের ২৫দিন একেবারে নি:স্ব অবস্থায় কোনরকমের প্রয়োজনীয় উপাদান ও পণ্যসামগ্রী ছাড়াই বাধ্যহয়েই বেঁচে থাকতে হচ্ছে তাকে। 

ঠিক একইরকম অবস্থা গাজার উত্তরাঞ্চলের লাখ লাখ ফিলিস্তিনিদের ভাগ্যেও জুটেছে। অবশেষে মেহনা উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চলে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন। ইসরায়েলি সেনাদের হামলা থেকে বাঁচতে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি কখনো ট্রাকে চড়ে, আবার কখনো টানা গাড়ি কিংবা গাধা চালিত গাড়িযোগে বা আবার কখনো পায়ে হেটে তারা সেখানে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন অবিরাম। গাজা হল ইসরায়েল মিসর ও ভূমধ্যসাগরের মাঝে ছোট একটি উপত্যাকা। 

খান ইউনুসের বনি সুহেইলা মোড়ে এসে মিশেছে বিশাল সালাহ আল-দীন সড়ক। গাজার এপাশ থেকে ওপাশ পর্যন্ত চলে গেছে সড়কটি। গাজা সিটি থেকে যেসব লোকজন পালিয়ে যাচ্ছেন তারা খান ইউনুস হয়ে আরও দক্ষিণে রাফাহ শহরে পৌঁছার আশায় সেদিকে অগ্রসরমান রয়েছেন। প্রতিদিন তাদের পালিয়ে যাওয়ার এ মিছিল বেড়েই চলেছে। রাফাহ ক্রসিংয়ের পরে রয়েছে প্রতিবেশি দেশ মিসর। 

ভোর সাতটায় মেহনা গাজা সিটির উত্তরে অবস্থিত জাবালিয়া শরণার্থী শিবির ত্যাগ করেন। কারণ তার চোখেও রয়েছে রাফাহ শহরে পৌঁছার স্বপ্ন। কিন্তু খান ইউনুসে এসেই তার এ যাত্রা শেষ হয়। আট ঘন্টায় তিনি কেবল ২৫ কিলোমিটার পথ আতিক্রম করতে সমর্থ হন।

বিমর্ষ কন্ঠে মেহনা বলেন, এ পথটুকু পাড়ি দিতে আমাকে ৫০০ শেকেল (১৩০ ডলার) ব্যয় করতে হয়েছে। রাফাহ পর্যন্তু যাওয়ার মতো আর কোন অর্থ আমার হাতে নেই। এমনকি সাথে একটুকরা রুটিও নেই। 

এ সময় দেখা যায় তার সফরসঙ্গী হিসেবে সাথে ছিল তার ৬ সন্তান। মেহনার স্ত্রী অসুস্থ, তাই হাটতে অক্ষম। হুইলচেয়ারে বসিয়ে তাকে আনা হয়েছে ভাড়া করা ট্রাক ও গাধার গাড়িতে চড়িয়ে।

শিশুরা ধুলামলিন মেঝেতে ঘুমাচ্ছে আর তাদের বাবা-মা কিভাবে তারা এমন তীব্র কষ্টের পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকবেন তা নিয়ে নিদারুণ দুশ্চিন্তায় দিন পাড়ি দিচ্ছেন।

গাজার ২৩ লাখ মানুষের মধ্যে ১৫ লাখই বাস্তচ্যূত হয়েছেন। জাতিসংঘের হিসেব মতে গাজার প্রতি দুইটি বাড়ির মধ্যে  একটি ধ্বংস করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। 

৭ অক্টোবরের ইসরায়েলি হামলার আগে থেকেও গাজার ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ দারিদ্রতার মধ্যে জীবন যাপন করতেন। আর এ অঞ্চলটির দুই তৃতীয়াংশ মানুষ আন্তর্জাতিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh