ভূমি জটিলতায় ভোগান্তিতে জ‌মির মা‌লিকরা

জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর

প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৩, ০৩:৪৪ পিএম

গাজীপুর জেলার মানচিত্র। ফাইল ছবি

গাজীপুর জেলার মানচিত্র। ফাইল ছবি

গাজীপুরে ভূমি মালিকদের ভূমি জটিলতা নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই। ভূমি জটিলতা নিরসনে বছরের পর বছর জ‌মির মা‌লিক ও ওয়ারিশদের ঘুরতে হয় সরকারি অফিস, আদালতে। তবু শেষ হচ্ছে না এ সংকট।

মোট কথা ভোগান্তির শিকলে বন্দি এসব জ‌মির মা‌লিকরা। গাজীপুরে এ সংকট বহুদিনের। এলাকাবাসীসহ ভুক্তভোগীরা জানান, হাজার হাজার মানুষ ভূমি (জমি) জটিলতা নিয়ে সংশ্লিষ্ট অফিস ও বিভিন্ন সরকারি অফিস আদালতে ঘোরেন। কারও ভোগান্তি মিস কেস, নামজারি-সীমানা নির্ধারণ নিয়ে। কেউ কেউ দলিলের নকল ও পর্চা সার্টিফাই কপি পেতেও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ভূমি মালিকরা রেকর্ড অফিস থেকে পর্চা সার্টিফাই কপি তুলতে গেলে অনেকের পর্চা ভলিউম ছেঁড়া থাকে। ওই পর্চা দিয়ে কোনো কাজ হয় না। এতে বিড়ম্বনা ও ভোগান্তিতে পড়েন ভূমি মালিকরা।

দলিলের সার্টিফাই কপি সংগ্রহ করতেও ভোগান্তির শেষ নেই। কখনো কখনো ভলিউম খুঁজে পাওয়া যায় না, কখনো থাকে ছেঁড়া। নানা সমস্যার কারণে একটি দলিলের সার্টিফাই কপি সংগ্রহ করতে গেলেও মাসের পর মাস ঘুরতে হয় ভূমি মালিকদের।

মিস কেস ও সীমানা নির্ধারণ আবেদন করা মানেই ভোগান্তি মাথায় নেওয়া। একজন ভূমি মালিক বাদী হয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে মিস কেস করেন। পরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) স্থানীয় ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দিতে বলেন। সেই মিস কেসের বাদী ও বিবাদীকে নোটিশ করে ভূমি অফিসে শুনানি করেন। সেখানেও বেশ কিছুদিন সময় কেটে যায়। ভূমি অফিস থেকে আবার সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর প্রতিবেদন পাঠানো হয়। সেখানে শুনানি চলতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই বিবাদী পক্ষ তাদের জমির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না দিয়ে শুনানির সময় বাড়ানোর আবেদন করেন বারবার। এভাবেই মিস কেস চলতে থাকে বছরের পর বছর; ভোগান্তিও বাড়ে সেই সঙ্গে।

অন্যদিকে সরকার ভূমির গেজেট প্রকাশ করে। গেজেটে ‘ক’ তফসিল ভুক্ত ভূমি (জমি) নিয়ে মানুষের হয়রানি আর ভোগান্তি আদালত পর্যন্ত। কোনো ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করে সীমানা নির্ধারণ; আবার কোনো ক্ষেত্রে আদালতে মামলা দায়ের করতে হয় ভূমি মালিকদের। ‘ক’ তফসিলভুক্ত ভূমি (জমি) সরকার নিজ উদ্যোগে সীমানা নির্ধারণের মাধ্যমে চিহ্নিত করে নিলে হাজার হাজার মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হতো না। আর এসব জমি নিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করলেও কয়েক বছর সময় লেগে যায়। ভূমির এসব জটিলতা নিয়ে বছরের পর বছর ভোগান্তির শিকলে বন্দি থাকে হাজার হাজার মানুষ। ভূমি মালিকদের দাবি, স্থানীয় ভূমি অফিস থেকে খসড়া পর্চা সংগ্রহ করে রেকর্ড অফিসের ভলিউম ছেঁড়া পর্চাগুলো সংশোধন করলে তারা ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেত। এছাড়া ‘ক’ গেজেট ভুক্ত জমি সরকার নিজ উদ্যোগে সীমানা নির্ধারণের মাধ্যমে চিহ্নিত করে নিলে মানুষের ভোগান্তি হতো না। পরে ওই জমি লিজ দিয়ে সরকার রাজস্ব পেত। এছাড়া অল্প সময়ের মধ্যে শুনানির মাধ্যমে মিস কেস শেষ করলে মানুষ ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ভূমির বিভিন্ন জটিলতা অল্প সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করার দাবি গাজীপুরবাসীর।

এ ব্যাপারে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এস.এম সাইফুর রহমান বলেন, নতুন করে জমি লিজ দেওয়ার সুযোগ নেই। ভিপি সম্পত্তি নিয়ে সরকারের বিধিমালা তৈরি করছে। এই সম্পত্তিগুলো খাসে আনবে নাকি কোনোভাবে এগুলোর ব্যবস্থাপনা করবে, সেটার একটা নীতিমালা প্রস্তুত করছে। ‘ক’ তফসিলভুক্ত যত সম্পত্তি আছে সরকারের পক্ষে ডিক্রি আসছে। অথবা কেউ মামলা করেনি এমন সম্পত্তি আমাদের দখলে নিয়ে নিষ্পত্তি করা হবে। সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে সরকারের যতটুকু সম্পত্তি তা দখলে আছে। ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যক্তির সীমানা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। আমাদের সীমানা নির্ধারণ করার প্রয়োজন নেই।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh