নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৩, ০৭:৫৭ পিএম
বর্ষবরণে মঙ্গল শোভাযাত্রা। ছবি: সংগৃহীত
নতুন বছরের মঙ্গল কামনার মাধ্যমে সারাদেশে উদযাপিত হয়েছে বাংলা নববর্ষ। ১৪৩০ বঙ্গাব্দ শুরুর দিনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছিল মঙ্গল শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বৈশাখী মেলাসহ নানা আয়োজন। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় একাধিক অনুষ্ঠানের। এসব কর্মসূচিতে বাহারি রঙের পাঞ্জাবি ও শাড়ি পরে যোগ দেয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
সবার আগে দিনটি উদযাপনে সাংস্কৃতিক কর্মসূচি পালন করে ছায়ানট। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর রমনার বটমূলে গান, কবিতা ও নানা আয়োজনে নববর্ষকে বরণ করে নেয় তারা। গান-কবিতায় মুখর হয়ে ওঠে পুরো বটমূল প্রাঙ্গণ। এবারের আয়োজন সাজানো হয় স্নিগ্ধ আলোয় স্নাত প্রকৃতির গান, মানবপ্রেম, দেশপ্রেম, আত্মবোধন আর জাগরণের সুরবাণী দিয়ে। এ সময় তাদের পোশাকে ছিল বৈশাখী উৎসবের রং। এছাড়া দেশের প্রতিটি জেলায় নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হয়।
কক্সবাজার: বাঙালির শেকড়ের প্রস্ফুটিত উৎসব পহেলা বৈশাখ বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যে পর্যটন শহর কক্সবাজারে উদযাপিত হয়েছে। ১৮২৯ বঙ্গাব্দকে বিদায় ও ১৪৩০ বঙ্গাব্দকে জেলাব্যাপী ছিল নানা আয়োজন। আজ শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কক্সবাজার শহরের পাবলিক লাইব্রেরি ঐতিহ্যবাহী দৌলত ময়দানের বটতলে গানে-গানে শুরু হয় বৈশাখ উদযাপনের অনুষ্ঠান। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, কক্সবাজার শাখার আয়োজনে অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন তাদের পরিবেশনা করতে থাকে। সকাল ৮ টায় ওখান থেকে বের করা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। বিশ্বব্যাপী শান্তির আহবানে আয়োজিত শোভাযাত্রাটি কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। একই সময় বের করা হয় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মঙ্গল শোভা যাত্রাও। যেখানে জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, কক্সবাজার শাখার সত্যপ্রিয় চৌধুরী দোলন, সাধারণ সম্পাদক মো. নজিবুল ইসলাম সহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। শোভাযাত্রা শেষে দৌলত ময়দানের বটতলে আবারও শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। যেখানে গান, নৃত্য, কবিতায় বরণ করে নেয়া হয় বাংলা নববর্ষ। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য কানিজ ফাতেমা আহমেদ। দুপুর পর্যন্ত চলে এ অনুষ্ঠান। এছাড়া টেকনাফ, উখিয়া, রামু, ঈদগাঁও, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া ও মহেশখালী উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৈশাখের নানা আয়োজন ছিল।
বাগেরহাট: বাগেরহাটে নাচ-গান, শোভাযাত্রা ও দেশবাসীর মঙ্গল কামনার মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষ-১৪৩০ উদযাপিত হয়েছে। দিনটি উপলক্ষে শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) সকালে বাগেরহাটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে হাজার-হাজার মানুষ জড় হয়। প্রথমেই জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে নববর্ষের অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে বৈশাখী গান ও আলোচনা সভা শেষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা বের করা হয়। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিককর্মীরা বাউল, জেলে, ঢুলি, পুলিশসহ নানা সাজে সেজে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শোভাযাত্রাটি জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে এসে শেষ হয়। সেখানে ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে সাতদিন ব্যাপী বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান। পরে মেলায় আগত বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন অতিথিরা। এসময়, বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী ঝুমুর বালা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. হাফিজ আল আসাদ, বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ভূঁইয়া হেমায়েত উদ্দিন, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল, বাগেরহাট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান বাচ্চুসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।
মাদারীপুর: নতুন আলোর সন্ধানে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সারেঙ্গি বাদনের মধ্য দিয়ে মাদারীপুরে বর্ষবরণ ১৪৩০ অনুষ্ঠান। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে মাদারীপুর জেলার ৫টি উপজেলায় পৃথকভাবে মঙ্গল শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনে থেকে বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু করে স্বাধীনতা অঙ্গনে এসে শেষ হয়। এরপর স্বাধীনতা অঙ্গনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও চারদিন ব্যাপী বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করেন মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ মারুফুর রশিদ খান। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- মাদারীপুর পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলমসহ সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, শিল্পকলা একাডেমীর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী, মাদারীপুর পৌরসভা কর্মকর্তাসহ সাধারণ জনগণ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে পহেলা বৈশাখ পালিত হয়েছে। বাঙালি সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ বর্ষবরণ উদযাপনে আজ শুক্রবার সকালে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শহরের লোকনাথ টেংকের পাড় থেকে একটি বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। ঢাক আর ঢোলের তালে তালে লাঠিখেলা প্রদর্শনের মাধ্যমে শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্থানীয় ফারুকী পার্ক চত্বরে গিয়ে সমবেত হয়। সেখানে জাতীয় সঙ্গীত শেষে স্থানীয় শিল্পীবৃন্দের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক ও আবৃত্তি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এসময় স্থানীয় সংসদ সদস্য র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আল মামুন সরকার, পুলিশ সুপার মো. শাখাওয়াত হোসেন, পৌর মেয়র মিসেস নায়ার কবিরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
ময়মনসিংহ: নানা আয়োজনে ময়মনসিংহে নববর্ষ ১৪৩০ বরণ করা হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৯টায় নগরীর মহারাজা রোড মুকুল নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে একটি বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। শোভাযাত্রাটি নগরীর প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জয়নুল আবেদীন পার্ক বৈশাখী মঞ্চে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে আলোচনা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন, রেঞ্জ ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য, জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজার রহমান ও পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা। এছাড়াও প্রশাসনিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন শোভাযাত্রায়। জেলা প্রশাসন ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে আয়োজিত শোভাযাত্রায় আবহমান বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের প্রতীকী সাজ উপস্থাপন করা হয়েছে। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে অপরদিকে নগরীর সার্কিট হাউস মাঠসহ বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলা বসেছে। মেলায় দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
গাইবান্ধা: বাংলা ও বাঙালির চিরায়িত ঐতিহ্যের প্রতীক প্রাণের পহেলা বৈশাখ ও বর্ষবরণ উৎসব ১৪৩০ উদযাপন উপলক্ষে গাইবান্ধায় মঙ্গল শোভাযাত্রা, লাঠি খেলা, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়েছে। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে নতুন প্রাণের স্পন্দনে নানান দেশজ আয়োজনে বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা বর্ষবরণ ১৪৩০ উদযাপনে সকালে শহরের স্বাধীনতা প্রাঙ্গণ থেকে ব্যান্ড পার্টি ও ক্ষুদে বাচ্চাদের বউ স্বামী সাজিয়ে কুলায় বাংলা বর্ষবরণ লেখা সাজিয়ে এক বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার স্বাধীনতা প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়।
মানিকগঞ্জ: বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে আজ যুক্ত হয়েছে নতুন বাংলা বর্ষ ১৪৩০। ‘বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নানা আয়োজনে বাঙালির নববর্ষ উদযাপিত হয়েছে মানিকগঞ্জে। শুক্রবার দিনব্যাপী মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির পরিবেশনায় এবং সরকারি বেসরকারি সংগঠনের অংশগ্রহণে মানিকগঞ্জ বিজয় মেলা মাঠে শান্তির পায়রা উড়িয়ে নতুন বছরের উদ্বোধন ও মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বিভিন্ন সংগঠনের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনী পর্ব ও আলোচনা সভায় জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফের সভাপতিত্বে এবং প্রফেসর বাসুদেব সাহা ও রোমেজা আক্তার খান মাহিন এর যৌথ সঞ্চালনায় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও আলোচনা অনুষ্ঠানে বাঙালির বৈশাখের তাৎপর্য নিয়ে ধারণাপত্র পাঠসহ কর্মসূচির নির্দেশনা করেন জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার সেলিনা সাঈয়েদা সুলতানা আক্তার। এসময় উপস্থিত ছিলেন মানিকগঞ্জ জেলা জজ কোর্টের পিপি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, পৌর মেয়র মো. রমজান আলী, পুলিশ সুপার মো. গোলাম আজাদ খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সানোয়ারুল হক, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মমিন উদ্দিন খান, সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. রেজাউল করিম, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জাকির হোসেন, জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জোয়ার্দার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মো. শাহিন আহমেদ, আবৃত্তি প্রশিক্ষক অধ্যাপক রুহুল জামান সুজন, আফরোজা রমজান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক কাশিনাথ সরকার, বারসিক প্রকল্প কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম প্রমুখ।