মো. খালেদ মাহমুদ
প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৩, ০২:২৫ পিএম
বাংলাদেশ ব্যাংক। ছবি: সংগৃহীত
বর্তমান সময়ে শিক্ষিত বেকার সমাজের সবচেয়ে ভরসার স্থল হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সমন্বিত ব্যাংকের নিয়োগ।
প্রতিবছর সালভিত্তিক প্রায় ৫-৭ হাজার জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক। এবং অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে নিয়মিত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চেষ্টা থাকে উভয় জায়গা থেকেই। বলা যায়, হাজারো বেকারের স্বপ্নপূরণের জন্য দারুণ এক প্রক্রিয়া। সবচেয়ে চমৎকার বিষয় হচ্ছে প্যানেল সংরক্ষণ। যত দিন পর্যন্ত প্রকাশিত শূন্যপদ পূরণ হচ্ছে না তত দিন প্যানেল থেকে নিয়োগ প্রদান করা হয়। যার ফলে ভাইভা অংশগ্রহণ করলে চাকরি পাওয়ার মোটামুটি আশায় থাকা যায়।
তবে ভাইভা দেওয়ার পর চাতকের মতো অপেক্ষার প্রহর বাড়তেই থাকে, বাড়তেই থাকে। চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের পর নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা ব্যাংকগুলোর নিজস্ব কার্যক্রমের মধ্যে পড়ে। অনেক ব্যাংক খুব দ্রুত নিয়োগ দেয় আবার অনেক ব্যাংক লম্বা সময় নেয়। যার কারণে প্যানেলপ্রত্যাশীরা ভোগান্তিতে পড়েন।
যেমন ২০১৮ সাল ভিত্তিক সাত ব্যাংকের সমন্বিত সিনিয়র অফিসার পদের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয় ৩ আগস্ট ২০২২। ফলাফলের পর প্রায় ৭ মাস অতিবাহিত হচ্ছে। এখনো ১ম প্যানেল প্রকাশিত হয়নি। যার কারণ হিসেবে জানা যায়,৭টি ব্যাংকের মধ্যে রুপালী ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এখনো নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেনি। অথচ জনতা, সোনালী ব্যাংক ফলাফল প্রকাশের পর দ্রুত নিয়োগ প্রদান করেছে। বাকি ৩টা ব্যাংকেও নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে আরো দুই তিন মাস আগেই। কিন্তু দুইটা ব্যাংকের নিয়োগ প্রদানে বিলম্বের কারণে ২০১৮ সাল ভিত্তিক সমন্বিত সাত ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদের ১ম প্যানেল বিলম্বিত হচ্ছে। কখন ২য় কখন ৩য় কখন ৪র্থ.... . প্যানেল আসবে সেটা এখন চিন্তার বাইরে
একই সাথে ফলাফল পাওয়ার পর কেউ ৫ মাস ধরে চাকরি করছে, নিয়মিত বেতনও পাচ্ছে আর কেউ এখনো নিয়োগই পায়নি। কেউ পরিবার পরিজন নিয়ে স্বপ্ন সাজাচ্ছে আর কেউ চাকরি পেয়েও বেকারত্ব কাঁধে নিয়ে ঘুরছে। কেউ ২ মাস পর ঈদ বোনাস, বৈশাখী ভাতা পাবে, ৪ মাস পরে একটা ইনক্রিমেন্ট পাবে আর কেউ যোগদান নিয়ে হতাশায় ভুগছে। এটা চরম বৈষম্য।
আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে কয়েকটা ব্যাংক ২০১৯ সাল ভিত্তিক সমন্বিত ৮ ব্যাংকের সিনিয়র অফিসারদের নিয়োগ প্রদান করে ফেলেছে। যেটার ফলাফল প্রকাশের প্রায় ৬ মাস অতিবাহিত হচ্ছে।
২০১৮ ভিত্তিক অফিসার জেনারেলের ফলাফল প্রকাশের প্রায় দেড়মাস হতে চলছে। এর মধ্যেই বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক নিয়োগ প্রদান করে ফেলেছে, জনতা ব্যাংক নিয়োগ পত্র ছেড়ে দিয়েছে, এ সপ্তাহে অনেকেই যোগদান করে ফেলবে হয়তো।
২০১৮ ভিত্তিক সিনিয়র অফিসার প্যানেল আসতে আরো প্রায় ৫-৬ মাস। ২০১৯ সিনিয়র অফিসারের প্যানেল আসতে কত দেরি হবে সেটা ভাবতেই কষ্ট লাগে।
এরপর অফিসার জেনারেল, অফিসার ক্যাশ...২০১৮, ২০১৯...। ২০১৮, ২০১৯ সালের সার্কুলারের নিয়োগ শেষ হতে যদি আরও কয়েক বছর লেগে যায় তাতেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
চাকরি পেয়েও পারিবারিক চাপ, ব্যক্তিজীবনের হতাশায় বিপর্যস্ত অসংখ্য তরুণের। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হওয়া এ যন্ত্রণাময় অপেক্ষার শেষ কখন হবে?
বেকারত্ব একটা অভিশাপ, আর চাকরি পেয়ে নিয়োগ দেরিতে হওয়া আরেকটা অভিশাপ। চাকরি পাওয়ার খবরে আশপাশের সবাই যেমন খুশি হয়, অভিনন্দন জানায়। কিন্তু নিয়োগ পেতে দেরি হলে তারাই আবার অবিশ্বাস করতে শুরু করে। কেউ কেউ তো বলেই ফেলে চাকরি পাওয়ার মিথ্যা খবর ছড়িয়েছে।
আশা করি ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি ও বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়োগ প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা ঠিক করে দিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের ভোগান্তি আরো কমিয়ে আনবেন।
মো. খালেদ মাহমুদ
সাবেক শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
সমন্বিত ব্যাংক নিয়োগে চাকরিপ্রার্থী।