সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে ৪০০ ঘর ক্ষতিগ্রস্ত

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৩, ০৮:১৯ পিএম | আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৩, ০৮:৩৭ পিএম

বিস্ফোরণের পর সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সিলিন্ডার। ছবি: চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

বিস্ফোরণের পর সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সিলিন্ডার। ছবি: চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

কারো বাড়ির সীমানাপ্রাচীর ফেটে গেছে, কারো ঘরের চাল উড়ে গেছে আবার কারোবা ভেঙেছে জানালার কাঁচ। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ভাঙা কাঁচ, ছোট ছোট লোহার টুকরো। দেখে মনে হবে এ যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত কোন এলাকা।

গতকাল শনিবার (৪ মার্চ) চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় অক্সিজেন প্লান্টে বিস্ফোরণের পর আশপাশে তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এমন ক্ষয়ক্ষতিই যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার চেয়ে কোন অংশে কম নয়।

এক বিস্ফোরণের কম্পনেই ছিন্নভিন্ন গোটা এলাকা। কেড়ে নিয়েছে ছয়জনের প্রাণ। হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে আরো ২৪ জন। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৪০০ ঘর আর অর্ধকোটি টাকার মালামাল। তবে কী কারণে এমন ভয়াবহ বিস্ফোরণ তা এখনো রয়ে গেছে আড়ালে।

বিএম ডিপোর ঘটনার ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই নয় মাসের মাথায় সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেড নামের একটি প্ল্যান্টে ঘটে গেল আরেকটি ভয়াবহ বিস্ফোরণ।


এর আগে গতবছরের ৪ জুন সীতাকুণ্ডে বিএম ডিপোতে ঘটেছে ভয়াবহ এক বিস্ফোরণ। ওই বিস্ফোরণেই প্রাণ গেছে ৫১ জনের। ওই ঘটনায়ও কেঁপে উঠে আশপাশের কয়েক কিলামিটার এলাকা।

স্থানীয় বাসিন্দা ও এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেড নামের ওই প্ল্যান্টটির ভেতরে একটি বড় সিলিন্ডার রয়েছে। সেখানে জমে থাকা অক্সিজেন পাইপের মাধ্যমে ছোট আকারের সিলিন্ডারগুলোতে অক্সিজেন রিফিল করা হয়। গতকাল বিকেলে হঠাৎ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠে আশপাশের এলাকা। এসময় প্ল্যান্টের ওপরের ছাউনি উড়ে যায়। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার। প্ল্যান্টের আশেপাশে অন্তত এক কিলোমিটার দূর পর্যন্ত অনেক ভবনের দরজা, জানালা, দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটার দূরে উড়ে গেছে লোহার টুকরো। সে টুকরোর আঘাতে এক বৃদ্ধও মারা যান। কি পরিমাণ শক্তিতে বিস্ফোরণ হলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে তা নিয়ে আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা। 

স্থানীয় বাসিন্দা ইকবাল হোসেন সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, সীতাকুণ্ডে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। যেহেতু একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেই। এখান থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো অপরিকল্পিত ও যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা না করেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে করে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকের পাশাপাশি আশপাশের ভবনের বাসিন্দাদের জীবনও হুমকির মুখে রয়েছে।

সীতাকুণ্ডে গড়ে উঠা বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে অনিয়মের কথা জানিয়ে খোদ জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, সীতাকুণ্ড হচ্ছে একটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়া। সেখানে অনেক ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে। গত দুইমাসে আমরা সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে নয়টি অভিযান পরিচালনা করেছি। সেখানে দেখা গেছে, অধিকাংশ কারখানাতেই অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। আমরা প্রশাসন বা পুলিশ চেষ্টা করলেই হবে না। কারখানার মালিক-শ্রমিক সবাইকে সচেতন হতে হবে। কারণ সীতাকুণ্ডে হাজার হাজার কারখানা অনিয়ন্ত্রিতভাবে গড়ে উঠেছে। 


চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ সাম্প্রতিক দেশকালকে এ বিষয়ে বলেন, বিএম ডিপোর ঘটনার মামলাটি এখনো তদন্তাধীন। তবে তদন্তের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। গতকাল বিস্ফোরণের ঘটনায় আমরা যথাযথভাবে সুরতহাল সংগ্রহ করেছি। লাশগুলো ময়নাতদন্ত করে স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘটনার কারণ উদঘাটনের বিষয়টি ফায়ার সার্ভিস দেখবে। তবে এ ঘটনায় কোন ক্রিমিনাল অফেন্স আছে কিনা ত আমরা খতিয়ে দেখবো।

এদিকে গতকাল বিকাল ৪টায় ঘটে যাওয়া ঘটনার ১৯ ঘণ্টা পর আজ সকাল ১১টায় ঘটনাস্থলে আসেন সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেডের ব্যবস্থাপক আবদুল আলীম।

তিনি বলেন, আমি অসুস্থ তাই ঘটনার সাথে সাথে আসতে পারিনি। আমাদের কাছে ফায়ার সার্ভিস, বিস্ফোরক পরিদপ্তরসহ সব সংস্থার ছাড়পত্র আছে। তবে কীভাবে এ ঘটনা ঘটেছে তা আমি নিজেও বুঝতে পারছি না। বিস্ফোরণে আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দেবো। আর যেসব ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা সংস্কার করে দেওয়া হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh