হিন্দি ছবি মুক্তি না দিলে হল বন্ধের হুমকি

বিনোদন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৩, ০৫:৫১ পিএম

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত

দেশে ভারতের সিনেমা মুক্তি না দিলে হল বন্ধের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি। একইসঙ্গে ভারতের সিনেমা আমদানির সব ব্যবস্থা গ্রহণের পরও অনুমতি না মেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে হল মালিকরা।

হল মালিকরা বলছেন, দেশীয় সিনেমায় হল চালানো যাচ্ছে না। ভারতীয় সিনেমা দিয়ে হলের অবস্থা ফেরাতে চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু এ বিষয়ে সরকারের কোন পদক্ষেপ নেই। উপায় না দেখে হল বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেবেন তারা।

আজ শনিবার (৪ মার্চ) মগবাজারে একটি রেস্তোরাঁয় ‘সিনেমা হল বাঁচলে, চলচ্চিত্র বাঁচবে’ এই শিরোনামে সংবাদ সম্মেলন করে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি।

চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও লায়নস সিনমার মালিক মির্জা আব্দুল খালেক বলেন, ‘বাংলা সিনেমা টিকিয়ে রাখতে বর্তমানে সিনেমা আমদানির বিকল্প নেই। কারণ সামনে ঈদ, ঈদে বড় ছবি আসছে, ভালো ছবি আসছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য, একটা ছবিও পুঁজি তুলে আনতে পারবে না। পুঁজি তুলে আনার মতো জায়গা নাই।

সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, ‘সিনেমাহল চালু রাখার আর কোনো বাস্তব যুক্তি আমরা খুঁজে পাচ্ছি না। তাই সিনেমা হল বন্ধ করে দেয়াই শ্রেয় বলে মনে করি। সিনেমা হল মালিকরা এই হতাশাজনক পরিস্থিতিতে যে কোনো দিন সিনেমা হল বন্ধ করে দিতে পারেন। কারণ দেশীয় সিনেমায় হল চলছে না। ভারতীয় সিনেমা আমদানির সব ব্যবস্থা গ্রহণের পরও অনুমতি মিলছে না।’

সিনেমা হলগুলোর মালিকরা দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় সিনেমা দেখানোর দাবি জানিয়ে আসছেন। তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদও সম্প্রতি বলেছেন, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো সম্মত হলে সরকারের আপত্তি নেই।

সুদীপ্ত দাস বলেন, ‘এর আগে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আমাদের প্রতিনিধিদের সচিবালয় ডেকে বলেছিলেন, পরিচালক ও শিল্পী সমিতির অনাপত্তি থাকলে সরকার বছরে অন্তত ১০টি উপমহাদেশীয় চলচ্চিত্র আমদানির অনুমতি দেবে। চিত্রনায়ক আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদের ব্যানারে প্রযোজক, পরিচালক এবং শিল্পী সমিতির নেতৃবৃন্দ বছরে ১০টি ভারতীয় হিন্দি ছবি আমদানির ক্ষেত্রে অনাপত্তি জানিয়ে লিখিত প্রস্তাবনা তথ্যমন্ত্রীর কাছে জমা দেন। সকল বাধা অপসারিত হওয়ার পরও আমদানির অনুমতি দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতা ‘না’ সূচক মনোভাবের পরিচায়ক।’

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির বর্তমান নেতৃত্ব শর্ত সাপেক্ষে হিন্দি সিনেমা আমদানিতে রাজি হলেও প্রকাশ্যে জানিয়েছেন আপত্তি জানিয়েছেন সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। হিন্দি সিনেমা আমদানির কঠোর বিরোধিতায় নেমেছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টুও।

সুদীপ্ত দাস ‘সাফটা’ চুক্তির আওতায় শাহরুখ খানের সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘পাঠান’ বাংলাদেশে মুক্তির ঘোষণা দেন। তবে এখনও তথ্য মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত সায় পায়নি।

লায়নস সিনেমা হলের মালিক আব্দুল খালেক দশ মাসের একটা পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ‘আমি নতুন করে হল চালু করি দশ মাস হল। আমার হলে আমি বাংলা ছবি চালাই ৪০ টি। ৪০টি ছবির দর্শক সংখ্যা হয়েছিলো ৫২ হাজার ৬৮৭ জন। এরমধ্যে ‘পরাণ’ ও ‘হাওয়া’ ছবির দর্শক হয়েছে ৩৬ হাজার। অর্থাৎ ১৭ হাজার দর্শক বাকি ৩৮ টি ছবি দেখেছে। এমনও হয়েছে একটি ছবির জন্য সারা সপ্তাহে আটটি টিকিট বিক্রি হয়েছে। এখন আমি প্রশ্ন করি, আমার হলটা আমি কীভাবে টিকিয়ে রাখব? বিদেশি ছবি দিয়ে আমরা একটা আলো দেখতে চেয়েছিলাম। আমাদের সেই দাবিগুলো নিয়ে আমরা হতাশ।’

সংবাদ সম্মেলনে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন বলেন, শাহরুখ খান অভিনীত ‘পাঠান’ ছবি বিশ্বজুড়ে অনেক ব্যবসা করেছে। আমরাও সেই উদ্যোগ নিয়েছিলাম, আমদানির বিষয়ে সকল জটিলতা নিরসনের আবেদন করি। মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠাই। ছবিটার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় সরকার। আমাদের পাঠানো চিঠির কোনো ব্যাখ্যাও দেয়া হচ্ছে না। এতে আমরা সার্বিক ভাবে চরম হতাশ। চার বছর আগে চালু সিনেমাহলের সংখ্যা ছিল ২৪০টি, এখন এই সংখ্যা মাত্র ৪০ এ দাঁড়িয়েছে। তাও বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত আমাদের নিতে হবে।

সরকার দাবি মেনে না নিলে সিনেমা হল কবে নাগাদ বন্ধ হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঈদের আগে আমরা এজিএম ডেকে সারাদেশের হল মালিকরা একসঙ্গে বসে একটা কঠোর সিদ্ধান্তে যাব।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মিয়া আলাউদ্দিন, সহসাধারণ সম্পাদক মো. খুরশিদ আলম, সংস্কৃতি, সমাজ কল্যাণ ও আইন বিষয়ক সম্পাদক আর এম ইউনুস রুবেল, সহ সাধারণ সম্পাদক শরফুদ্দিন এলাহী সম্রাট।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh