সৌমিত্র দস্তিদার
প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০২:২৩ পিএম
বাংলা ভাষাটা নিতান্তই গেঁয়ো প্রবন্ধের প্রচ্ছদ।
কখনো কখনো কলকাতায় বসে মনে হয় যে আমি অন্য কোনো হিন্দিভাষী প্রদেশের বাসিন্দা। দিল্লি, মুম্বাই বা অন্য কোনো জায়গা থেকে কলকাতায় পা দেওয়া মাত্র, টের পাবেন আপনার মাতৃভাষা এখানে কতটা কোণঠাসা।
হাওড়া বা শিয়ালদহ স্টেশন কিংবা এয়ারপোর্টে নামা মাত্রই যে ট্যাক্সিচালক আপনার দিকে শিকার ধরেছি, শিকার পেয়েছি মুখ করে এগিয়ে আসছে, সে ভুলেও কখনো বাংলা বলবে না। সে ধরেই নিয়েছে যে ট্যাক্সি যখন খুঁজছেন তখন নিশ্চিত অবাঙালি। বাঙালির ট্যাঁকের অত জোর নেই যে যখন তখন চার চাকায় উঠবে। এ মনগড়া ধারণাও কিন্তু বাঙালি সম্পর্কে এক ধরনের হীনমন্যতা।
বাস্তবে কলকাতায় এখন কিছু বাঙালি যথেষ্ট পয়সা করেছে। তা কোটি টাকার ফ্ল্যাট বা অত্যাধুনিক গাড়ির মডেল দেখলেই বোঝা যায়। তবু ওই ট্যাক্সি চালকটি নিজে বাঙালি হয়েও বাংলা বলবে না কিছুটা হীনমন্যতা, আর কিছুটা নিশ্চিত হিন্দি আধিপত্যের যে দাপট, তার কাছে অজান্তেই আত্মসমর্পণ করার কারণে।
পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি, বিশেষ করে রেনেসাঁ ও চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত উদ্ভূত এলিট, উচ্চবর্গীয় জনগোষ্ঠী সম্পর্কে কিছু মিথ নির্মিত হয়ে আছে দীর্ঘ সময় ধরে। সূর্য সেন, প্রীতিলতা, সুভাষচন্দ্র বসু বা যতীন দাসের মতো বীর বিপ্লবীদের উদাহরণ দিয়ে একটা জাতিকে বিপ্লবী করে তোলার চেষ্টা হোক না কেন, বঙ্গসন্তানদের বড় অংশ যে ব্রিটিশ সরকারের দালাল ছিল এটা ভুলে গেলে চলবে না।
আমাদের চেনা ইতিহাসে কতজন রায়বাহাদুর হয়েছেন এ নিয়ে আলোচনা নেই। অথচ কলকাতার ঐতিহ্যশালী পরিবার ও তাদের বসত নিয়ে আদেখলেপনা সাংঘাতিক। কিন্তু কে না জানে এই পরিবারগুলো অধিকাংশই ব্রিটিশের খয়ের খাঁ। পলাশী যুদ্ধে ক্লাইভকে নানাভাবে ঘুষ দিয়ে লুঠের টাকায় ‘বনেদী’ সেজেছে। কলকাতা নগরায়ণের পিছনে রয়েছে মুৎসুদ্দি পুঁজির রংঢং। তার আগের কলকাতা তো ছিল নগণ্য তিন গ্রাম, সুতানুটি, গোবিন্দপুর ও কলকাতা। আরও আশ্চর্য লাগে কলকাতার বনেদি পরিবারের উল্লেখ থাকে যেখানে, সেখানে একবারও বলা হয় না, এ শহরের বিস্তৃত জায়গা ছিল ওয়াকফ সম্পত্তি।
আজ যে কোনো কোনো মহলে বাংলা ভাষা সাহিত্যের অন্তর্জল যাত্রা দেখে মায়া কান্না কাঁদছেন, তাদের মনে করিয়ে দেই কোনো কৃষ্টিই মিথ্যার ওপর দাঁড়িয়ে বেঁচে থাকতে পারে না। আজকের কলকাতায় বাঙালির পতনের সূচনা যদি হয় পলাশীর যুদ্ধ, তাহলে তার এখনকার পরিণতি নিশ্চিত ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট, যেদিন আবুল হাশেম, সোহরাওয়ার্দী, শরৎচন্দ্র বসুদের অখণ্ড বাংলার স্বপ্নকে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে চরম দক্ষিণ, উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর চাপে অগ্রাহ্য করে এই জনপদকে হিন্দি পুঁজির কাছে ভেট দেওয়া হলো।
দেশভাগ নিয়ে মহা মহা মুরব্বিরা এখানে সেখানে কত কথা বলে বেড়ান, অধিকাংশ বলেন না যে, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় যে যেনতেনভাবে বাংলাকে ভাগ করতে চাইছিলেন তার পেছনে ছিল মুৎসুদ্দি পুঁজির ইন্ধন। দেশভাগের ভারতীয় আখ্যানে একমাত্র খলনায়ক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে করার অর্থ হচ্ছে জিন্নাহ বা মুসলিম লীগের অনেক আগে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগের দাবি তুলেছিল সাভারকর, বিড়লা গোষ্ঠী-সেই সত্যকে আড়াল করা।
বাংলা অখণ্ড থাকলে এই ভূখণ্ডকে দিল্লির উপনিবেশ করা সম্ভব নয়, তা নিশ্চিত জানতেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় লবি। ফলে ভবিষ্যতে মহারাষ্ট্র, গুজরাটের কাঁচামাল সস্তায় মিলবে, ভারী শিল্প গড়ে তুলে দ্বিগুণ মুনাফা করা এই স্বার্থ চিন্তাই জনসংঘ, হিন্দু মহাসভাকে বাংলা ভাগে প্ররোচিত করেছিল। আমাদের প্রগতিশীল ইতিহাসবিদরা বলেন না যে ওই সময়, ১৯৪৬-৪৭-এ হিন্দু মহাসভার কর্মকর্তা কারা ছিলেন। সব গো বলয়ের ব্যবসায়ী। আরএসএসের রাজ্য দপ্তর ছিল বিড়লাদের ভাড়া বাড়িতে।
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে নোয়াখালী, বরিশালের অনেক হিন্দু মহাসভার কর্মী, নেতারাও চিঠি লিখে সতর্ক করেছিলেন যে ভাগ হলে আমাদের সর্বনাশ হয়ে যাবে। কিন্তু নিখাদ পশ্চিমবঙ্গীয় শ্যামাপ্রসাদ সে কথা কানে তোলার প্রয়োজন মনে করেননি।
পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখলে এটা স্পষ্ট যে হিন্দু-মুসলমান দুই কেন্দ্রীয় শক্তিই বাণিজ্যের কারণে বাংলাকে ভাগ করতে আগ্রহী ছিলেন। মুসলিম লীগের ইস্পাহানী, আদমজী লবি জানতেন যে ভুখণ্ড ভাগ না হলে টাটা, বিড়লাদের মতো শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় তারা টিকতে পারবেন না। ফলে তারা ভাগ চেয়েছেন। অন্যদিকে ভারতীয় পুঁজি একচেটিয়া মুনাফার লোভে বঙ্গভঙ্গ চেয়েছেন। কালনেমির লঙ্কা ভাগের কারণে বাংলা বিভক্ত হয়ে অন্তত পশ্চিমবঙ্গে বাঙালির জীবনে নিঃসন্দেহে অন্ধকার নামতে থাকে ওই ১৯৪৭-এর বৃষ্টিভেজা আগস্ট থেকেই। তখন থেকেই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ভ্রান্ত নীতির জন্য পশ্চিমবঙ্গ সবদিক দিয়েই পিছু হটতে থাকে।
স্বাধীনতার দুই বছরের মধ্যেই শরৎচন্দ্র বসু বুঝতে পেরেছিলেন যে কেন্দ্রীয় নীতি আগামীদিনের এ রাজ্যকে কোন পথে নিয়ে চলেছে। তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে কঠোর ভাষায় সতর্ক করে দিয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের অস্তিত্ব আজ বিপন্ন। আর্থিক সঙ্কট ইতিমধ্যেই ভয়াবহ চেহারা নিয়েছে। মনে রাখবেন এ সতর্কবার্তা আজ থেকে বাহাত্তর, তিয়াত্তর বছর আগে করেছিলেন। আর্থিক কাঠামোয় যদি ঘুণ ধরে তবে উপরিকাঠামোতে তো জং ধরবেই।
১৯৪৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের মাথাপিছু আয় ছিল অন্য সব রাজ্যের চেয়ে বেশি। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রেও এ রাজ্যে ছিল সবার আগে। কলকাতা ছিল ব্যস্ত শহর। মুম্বাইয়ের চেয়ে অনেক বেশি মাল চলাচল করত কলকাতা বন্দর দিয়ে। কৃষিতেও পশ্চিমবঙ্গের জায়গা ছিল মহারাষ্ট্রের চেয়ে পঁচিশ গুণ বেশি।
কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্যমূলক নীতি ক্রমে এ রাজ্যকে অন্ধকারে ঠেলে দিতে লাগল। বৈষম্যের ছোট একটা উদাহরণ দেই। স্বাধীনতার রাতেই কেন্দ্রীয় সরকার পাটজাত পণ্যের রপ্তানি শুল্ক থেকে পশ্চিমবঙ্গের প্রাপ্য ছেঁটে ফেলে। একইভাবে আয়কর থেকে এ রাজ্যের পাওনা কুড়ি শতাংশ কমিয়ে বোম্বেকে বাড়তি অর্থ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। এভাবে বাস্তবে পশ্চিমবঙ্গ ধীরে ধীরে হয়ে উঠতে লাগল কেন্দ্রের উপনিবেশ।
ঠিক একইভাবে পাকিস্তান সরকারের নীতিতেও পূর্ববঙ্গকে উপনিবেশ গড়ার চেষ্টা লক্ষ করা গেল। ফারাক হচ্ছে পূর্ব বাংলায় মওলানা ভাসানী ও অন্য নেতারা পাকিস্তানের স্বৈরতান্ত্রিক নীতি মানতে না পেরে গণ-আন্দোলন গড়ে তুলতে লাগলেন। আর পশ্চিমবঙ্গের নেতাদের ও উচ্চবর্গের জনসাধারণের বড় অংশ হিন্দি বলয়ের কাছে সেই যে আত্মসমর্পণ করলেন, পরে কখনোই আর তা থেকে এ রাজ্য বের হতে পারল না। পশ্চিমবঙ্গের আরও এক বৈশিষ্ট্য বিরাট সংখ্যক বাঙালি মুসলমানকে শিল্প-সাহিত্যের অঙ্গনে কৌশলে ও বামুনবাদী অহমিকায় দূরে রাখা।
বাংলাভাগের কথা বলি বটে, নিশ্চিত এ খানিকটা অর্জন তা অস্বীকার করা যায় না। পাকিস্তান ভেঙে যদি বাংলাদেশের উদ্ভব না হতো ওপারের বাঙালি যেটুকু মাথা উঁচু করে পথ হাঁটছে, তা কোনোভাবেই সম্ভব হতো না বাংলা ভাগ না হলে। মুসলমান বাঙালির ক্ষমতায়ন মেনে নেওয়ার মতো ঔদার্য পশ্চিমবঙ্গের এলিটদের নেই। তারা হিন্দি আধিপত্যবাদী সংস্কৃতি মেনে নেবে; কিন্তু মুসলমান নৈব নৈব চ। আসলে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির বড় অংশ কর্তাভজা। আগে কর্তাব্রিটিশ ছিল। তার শ্রীচরণে মাথা নুইয়ে সে নিশ্চিন্ত ছিল। এখন গো বলয়ের পাণ্ডাদের কাছে সমর্পণ করেই সে ডগমগ।
সংখ্যার দিক দিয়ে বাঙালি সংখ্যালঘু। শিল্প-সাহিত্যের প্রত্যেক বিভাগেই সে কোণঠাসা। লেকটাউন, বাঙ্গুর, শ্রীভূমি, সল্টলেক নিউটাউন-সর্বত্রই বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি আজ পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে। বাংলা স্কুল উঠে যাচ্ছে। তার জায়গায় জন্ম নিচ্ছে দোআঁশলা ভাষাভাষী স্কুল। বাঙালি অভিভাবক ছেলেমেয়ের স্কুলে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দি বেছে নিচ্ছেন। বাংলা নিয়ে অনেকেই বেশ লজ্জিত। কেউ কেউ তো বেশ গর্ব করে বলেন, ‘আমার ছেলের আবার বাংলাটা ঠিক আসে না।’
বাংলা নিয়ে এপারের বাঙালি দুদিন মাতে। একুশে ফেব্রুয়ারি আর পয়লা বৈশাখ। দুদিন একটু বাংলায় আমরা মাতি, গান গাই আর কাঁদো কাঁদো গলায় একুশের ভাষাশহীদদের আমরা স্মরণ করি। ওই একদিন মুসলমান বাঙালি হয়। না হলে সারা বছর তাদের শুনতে হয়, আপনি বাঙালি! আমি শুনেছিলাম মুসলমান। অথচ এ রাজ্যে এ নো যেটুকু যা বাংলা টিকে রয়েছে, তার মূল কৃতিত্ব মুসলিম ও নিম্নবর্গের হিন্দু। পশ্চিমবঙ্গ ভারতের একমাত্র রাজ্য, যেখানে মুসলমানদের শহরে আপনি খুঁজে পাবেন না। দেশভাগের পর জনবিন্যাস বদলে গিয়ে তাদের গ্রামে চলে যেতে হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে বাধ্য করাও হয়েছে।
অমন যে ভাষা শহীদদের নিয়ে আমরা আকুল নির্দিষ্ট দিনে, তাদের একজন আইএ পড়তে ভর্তি হয়েছিলেন হাওড়ার নরসিংহ দত্ত কলেজে। মুর্শিদাবাদের সালারের ভূমিপুত্র বরকতকে দাঙ্গার কারণে হাওড়া থেকে ঢাকা চলে যেতে হয়েছিল। সেখানেই ৫২’র ভাষা আন্দোলনে তিনি শহীদ হন। গ্রাম এখনো মোটের ওপর বাংলা ভাষা নির্ভর। সেখানে মুসলিম ও নিম্নবর্গের হিন্দুর বাস। ফলে ভদ্রলোক বাঙালি শহরে বসে বড় বড় কথা বাংলা ভাষা নিয়ে বললেও তাদের অধিকাংশই নিজের মাতৃভাষাকে শ্রদ্ধা করে না। বাংলা হয়ে পড়ছে অন্যান্য অনেক আঞ্চলিক ভাষার মতো নিতান্তই গুরুত্বহীন একটি সাদামাটা ভাষা।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম বা জীবনানন্দ দাশ নিয়ে চর্চা যেটুকু, তা ওপর ওপর, তাও মুষ্টিমেয় লোকজনের মধ্যে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কয়েক হাজার গান লিখেছেন এতো কমবেশি সবাই জানেন। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখুন, আমাদের বিশিষ্ট গায়কেরা জন মনোরঞ্জন করতে ঘুরে ফিরে ২৫-৩০টার বেশি গান করেন না। হয় তারা জানেন না, অথবা ইচ্ছে করে করেন না। আর নজরুল ইসলামের কথা বাদ দেওয়া ভালো। কটা নজরুল রচনাবলী সারা বছর কলকাতায় বিক্রি হয় তা নিয়েই গবেষণা হতে পারে।
কলকাতার দোকানে অধিকাংশ সাইনবোর্ডে হিন্দি লেখা। বাংলা থাকলেও ছোট হরফে। এমনকি আবাসনে দুর্গাপুজোর ফ্লেক্স তাও হিন্দিতে লেখা। ইদানিং বিভিন্ন হিন্দু বাঙালি বাড়িতে, বিশেষ করে বিয়েতে অদ্ভুতভাবে উত্তর ভারতের নানা সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যা কখনো আগে দেখা যায়নি। এই যে হালে গণেশ পুজো, রামনবমীর বাড়বাড়ন্ত তা পুরোই হিন্দি সংস্কৃতি ও কৃষ্টির অনুকরণ। কলকাতা শহরে হালে নিরামিষ খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। আপনি বলবেন, খাওয়া যার যার পছন্দমতো হতেই পারে। ঠিকই তো। কিন্তু এর মধ্যে দিয়ে বাঙালির চিরকালীন মাছ-ভাতের সংস্কৃতিকে কিন্তু মুছে ফেলা হচ্ছে। শুধু খাওয়ার বিষয়ে নয়। সামগ্রিকভাবে বাঙালির যাবতীয় ঐতিহ্য ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হবার পথে।
গর্ব করার মতো যে সব প্রতিষ্ঠান তার ওপরেও আঘাত আসছে। রবীন্দ্রনাথের সাধের শান্তিনিকেতনের পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক। পাঁচিল তুলে প্রায় জেলখানা করে তোলা হয়েছে শান্তিনিকেতনের উন্মুক্ত পরিবেশকে। নতুন নতুন যেসব এলিট আবাসন গড়ে উঠছে, সেখানে বাংলা বলাটা আউট অব ফ্যাশন। বাঙালিরাও কখনো কখনো দেখা হলে নিজেদের মধ্যে পারলে হিন্দি বলেন। ভাবটা, বাংলা ভাষাটা নিতান্তই গেঁয়ো। আজকের ‘আধুনিক’ দুনিয়ায় অচল।
তবুও যখন শান্তিনিকেতনে গিয়ে মার্টিন কেম্পশনের মতো নিবেদিতপ্রাণ রবীন্দ্রনাথ অনুসারীকে খুঁজে পাই, যিনি জার্মান হয়েও এদেশে থেকে গেলেন বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও রবীন্দ্রনাথের টানে, যখন এখনো দেখি সদ্য কলেজ পড়ুয়া কেউ কেউ বিনয় মজুমদার কিংবা শক্তি চট্টপাধ্যায়ের পরম ভক্ত, লিটল ম্যাগাজিন মেলায় অজস্র নতুন অক্ষরের জন্ম হচ্ছে, তখন মনে হয় সব কিছু এখনো শেষ হয়ে যায়নি, যাবে না। হিন্দি আধিপত্যের বিরুদ্ধে বাংলা কখনো পুরোপুরি হার মানবে না। হিন্দু-মুসলমানের মিলিত শক্তিই পারে বাংলা ভাষা, সাহিত্যকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখাতে।