বরিশাল খাদ্য বিভাগে পে-অর্ডার জালিয়াতির ঘটনায় মামলা

বরিশাল প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৬:৫২ পিএম

জাল পে-অর্ডার খাদ্য বিভাগে জমা। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি

জাল পে-অর্ডার খাদ্য বিভাগে জমা। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি

ব্যাংকের সহযোগিতায় খাদ্য সামগ্রীতে পুষ্টিগুণ বাড়ানোর কাজে জামানত হিসেবে ২ কোটি ৬৮ লাখ ৩৬ হাজার ৫০৪ টাকার জাল পে-অর্ডার খাদ্য বিভাগে জমা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক আওয়ামী লীগ নেতা ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।

অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে জনপ্রতিনিধি এবং ব্যাংক কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

রবিবার রাতে বরিশাল জেলা খাদ্য বিভাগের পরিদর্শক মো. দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় বিশ্বাস ভঙ্গ ও প্রতারণার মাধ্যমে ২ কোটি ৬৮ লাখ ৩৬ হাজার ৫০৪ টাকার ১১টি পে-অর্ডার জালিয়াতির অভিযোগ করা হয়েছে।

তবে ঘটনাটি রহস্যজনক বলে মনে করছে পুলিশ। পাঁচ বছর পূর্বের জালিয়াতির ঘটনা এতদিন পরে হঠাৎ করে আলোচনায় আসার নেপথ্যে অন্য কিছু থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম।

মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- বরিশালের গৌরনদী উপজেলার এলাহী এগ্রো লিমিটেডের (পুষ্টি মিশ্রণ মিল) সত্ত্বাধিকারী মো. ফরহাদ হোসেন এবং অগ্রণী ব্যাংকের গৌরনদী শাখার ব্যবস্থাপক মো. আলী রেজা।

মিলের সত্ত্বাধিকারী হিসেবে কাগজপত্রে ফরহাদ হোসেন লেখা থাকলেও এর প্রকৃত নাম নুরুজ্জামান ফরহাদ মুন্সি। যিনি গৌরনদী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, এলাহী এগ্রো লিমিটেড খাদ্য বিভাগের খাদ্যে পুষ্টিগুণ বাড়ানোর তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান। এই কাজে ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ১৫ জুন পর্যন্ত মোট ১১টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ২ কোটি ৬৮ লাখ ৩৬ হাজার ৫০৪ টাকার জামানত দেয় এলাহী এগ্রো লিমিটেড। যা যাচাইয়ে ভুয়া প্রমাণিত হয়।

এছাড়া খাদ্য বিভাগের হিসেবে জমা হওয়া ২ কোটি ৬৮ লাখ ২৯ হাজার টাকার পে-অর্ডারের প্রকৃত মূল্য মাত্র ৭ হাজার ২০০ টাকা। ১০০ টাকার একটি পে-অর্ডার জালিয়াতি করে ১ কোটি ৯ লাখ ৩৯ হাজার ৫০৪ টাকা দেখানো হয়েছে। ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৪০০ টাকার একটি পে-অর্ডার যাচাই করে পাওয়া গেছে ২০০ টাকা।

তাছাড়া অন্য ৯টি পে-অর্ডারও অনুরূপ জালিয়াতি করে খাদ্য বিভাগে জমা দেয় এলাহী এগ্রো। এছাড়াও ফরহাদ হোসেনের আরো দুটি প্রতিষ্ঠান খাদ্য বিভাগের তালিকাভুক্ত বলে জানিয়েছেন জেলা খাদ্য বিভাগের পরিদর্শক মো. দেলোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, জালিয়াতির প্রমাণ হওয়ায় রবিবার রাতে এই ঘটনায় ফরহাদ হোসেন এবং অগ্রণী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মো. আলী রেজাকে অভিযুক্ত করে কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা করা হয়েছে। পাশাপাশি ফরহাদ হোসেনের সাথে সম্পাদিত চুক্তি বাতিল এবং তার মালিকানাধীন ৩টি মিল কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মিল মালিক ও গৌরনদী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান ফরহাদ মুন্সি। তিনি বলেন, পে-অর্ডার জালিয়াতির ঘটনা সঠিক নয়। আমরা বৈধভাবেই ব্যাংক থেকে পে-অর্ডার এনেছি। সেখানে কোন ত্রুটি থাকলে সেটার দায়ভার তো ব্যাংকের নিতে হবে।

এদিকে ২০১৮ সাল থেকে চলে আসা জালিয়াতির ঘটনা পাঁচ বছর পরে হঠাৎ করে খাদ্য বিভাগের নজরে আসার ঘটনাটি রহস্যজনক বলে মনে করছে পুলিশ। এর সাথে খাদ্য বিভাগ বা অন্য কেউ জড়িত কিনা সেটাও তদন্ত করে দেখা হবে। যারাই জড়িত থাকবেন তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh