মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল
প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৩:২০ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
তিন বছর পর শুটিংয়ে আবারো বিদেশি কোচ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নতুন রাইফেল কোচ হিসেবে ইরানের মোহাম্মদ জায়ের-রেজাইকে প্রধান কোচের দায়িত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্টস ফেডারেশন। ২০২৩ সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমস ও ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিক গেমসকে সামনে রেখে ৩৯ বছর বয়সী এই কোচকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
মূলত নিজ দেশ ইরানের কোচ হিসেবে সাফল্যের কারণেই দীর্ঘমেয়াদের জন্য রেজাইকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাঁর অধীনে ইরান ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে ২০১৪ কোরিয়ার ইনচন এশিয়ান গেমসে এবং ২০১৬ জার্মানির মিউনিখ বিশ্বকাপ আসরে স্বর্ণ জয় করেছে। এরই মধ্যে গত ১ জানুয়ারি ঢাকায় পা রাখেন এই ইরানি কোচ। এরপর দুই দিনের কোয়ারেন্টিন শেষে ৩ জানুয়ারি সোমবার গুলশানের শুটিং রেঞ্জে আসেন তিনি। সেখানে শুরুতে ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পর গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময়ে নিজের লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন এই কোচ। এসএ গেমস ও অলিম্পিক গেমসের জন্য দায়িত্ব নিলেও এসএ গেমস নিয়েই মনোযোগটা রাখতে চান তিনি।
শুটিং ফেডারেশন কি লক্ষ্য আর উদ্দেশ্য নিয়ে তাকে দায়িত্ব দিয়েছে সেটা ভালো করেই জানেন এই ইরানি।
নিজের লক্ষ্যের কথা বলতে গিয়ে রেজাই বলেন, ‘বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিতে পেরে আমি খুশি হয়েছি। আমার মূল লক্ষ্য আসলে এসএ গেমস নিয়ে। আগেই অলিম্পিক নিয়ে চিন্তা করতে চাপ বাড়াতে চাই না। এসএ গেমসে ভালো করতে অলিম্পিক নিয়ে লক্ষ্যটা স্থির করা যাবে। আর অলিম্পিক গেমস পর্যন্ত আমি থাকব কি না কিংবা আমাকে রাখা হবে কিনা সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। এসএ গেমসে যদি ভালো ফলাফল করতে পারি তার পরই চুক্তি বাড়ানোর চিন্তা করব, তার আগে নয়।’
বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের সম্পর্কে কতটা ধারণা রাখেন জানতে চাইলে এই ইরানি বলেন, ‘শুটিংয়ে বাংলাদেশের দারুণ একটা অতীত রয়েছে। পাশাপাশি এখানে অনেক মেধাবী খেলোয়াড় আছে। তাদের মধ্যে আমি দারুণ সম্ভাবনা দেখি। চেষ্টা করব ভালো কিছু করতে।’
২০২৩ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে আগামী এসএ গেমস। এরপর ২০২৪ সালে প্যারিসে পরবর্তী অলিম্পিক গেমসের ভেন্যু। সর্বশেষ টোকিও অলিম্পিকসের শুটিংয়ে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের আব্দুল্লাহ হেল বাকির পারফরমেন্স আশানুরূপ ছিল না। ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের বাছাইপর্বে ৬১৯.৮ স্কোর গড়ে ৪৭ জন প্রতিযোগীর মধ্যে ৪১তম হয়েছিলেন। এর আগে ২০১৬ সালে ব্রাজিলের রিওতে ৬২১.২ স্কোর গড়ে বাছাইয়ে ২৫তম হয়েছিলেন কমনওয়েথ গেমসে দুটি রৌপ্য পদক জয় করা এই শুটার।
কোচ হিসেবে জায়ের রেজাইয়ের প্রথম এসাইনমেন্ট সেপ্টেম্বরের এশিয়ান গেমসে। তার প্রথম পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে এই আসরকে।
ফেডারেশন সুত্রে জানা গেছে, এরপর কেবল তার সঙ্গে চুক্তি নবায়নের বিষয় আলোচনা শুরু হবে। সে কারণেই কোচ অলিম্পিক নিয়ে ভাবতে চাইছেন না। একটা একটা করে টুর্নামেন্ট ধরে এগোতে চাইছেন তিনি। মাসে সাড়ে ছয় হাজার ইউরো বেতনে বাংলাদেশে কাজ শুরু করেছেন রেজাই। তার কাছে সামনের দিনগুলোতে আন্তর্জাতিক গেমসগুলোতে ভালো করার আশা করছেন ফেডারেশন মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ অপু, পিস্তল কোচের পর আমরা একজন মানসম্পন্ন রাইফেল কোচ খুঁজছিলাম। সাম্প্রতিক সময়ে যার কোচিংয়ে এশিয়ান গেমস কিংবা অলিম্পিকে সাফল্য আছে এমন কাউকে। আমার তেমনই একজন হিসেবে রেজাইকে পেয়ে যাই। আমাদের পরিকল্পনার সঙ্গে তার কাজের ধরন মিলে যাওয়ায় কাজ করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে দু’পক্ষ। যদিও আমরা চেয়েছিল ইরানেরই আরেক কোচ এলাম হাশেমীকে আনতে।
তার সঙ্গে সাত হাজার ইউরোতে কথা পাকাও হয়েছিল; কিন্তু সিঙ্গাপুর জাতীয় দলের জন্য তাকে ১০ হাজার ইউরোতে নিয়ে যায়। তাই শেষ পর্যন্ত হাশেমীর আশা ছেড়ে দিয়ে তারই সহকারী রেজাইকে নিয়ে আসা হয়। এ দু’জন মিলে ইরানের শুটিংকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। ২০১২ সালের লন্ডন, ২০১৬ এর রিও এবং ২০২০ টোকিও অলিম্পিকে রেজাই এর অধীনে শুটাররা ফাইনাল রাউন্ড কিংবা শেষ আটে উঠেছিল।