নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২২, ০৬:৪৯ পিএম
ফাইল ছবি
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এতে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্যসহ ৭ জন বেকসুর খালাস পেয়েছেন।
সোমবার (৩১ জানুয়ারি) কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
খালাসপ্রাপ্তরা হলেন বরখাস্ত সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, বরখাস্ত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এপিবিএনের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, বরখাস্ত কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ।
এই রায়ে টেকনাফ থানার বরখাস্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ এবং বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আর ৬ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়েছে। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন নন্দদুলাল, সাগর, রুবেল, নিজাম, আয়াজ ও নুরল আমিন।
বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডকে 'পূর্ব পরিকল্পিত' বলে মন্তব্য করেন। দুপুর আড়াইটার দিকে ৩০০ পৃষ্ঠার রায়ের সারসংক্ষেপ পড়া শুরু করেন তিনি। এর আগে ২টার দিকে গ্রেপ্তার ১৫ অভিযুক্তকে আদালতের কাঠগড়ায় তোলা হয়।
রায় ঘোষণা উপলক্ষে সকাল থেকেই আদালতে কঠোর নিরাপত্তা ছিল। হত্যাকাণ্ডের দেড় বছর পর আলোচিত এই মামলার রায় হলো। বিচারের রায় জানতে সকাল থেকে কক্সবাজার আদালত চত্বরে অসংখ্য মানুষ ভিড় করেন।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কের তল্লাশি চৌকিতে মেজর সিনহা পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এই ঘটনায় টেকনাফ মডেল থানার সাবেক ওসি প্রদীপ এবং বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকতসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
এই ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে। ওই সময় পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত কক্সবাজার জেলা পুলিশের প্রায় দেড় হাজার জনকে বদলি করা হয়।
হত্যা মামলাটি করেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস। তবে এই ঘটনায় প্রথমে পুলিশ টেকনাফ থানায় দুটি এবং রামু থানায় একটি মামলা করে। সেগুলোতে নিহত মেজর সিনহার সঙ্গী সাইদুল ইসলাম এবং শিপ্রা দেবনাথকে অভিযুক্ত করা হয়।
পুলিশের এসব মামলা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। মেজর সিনহার পরিবারের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়। একপর্যায়ে ২০২০ সালের ৫ আগস্ট মেজর সিনহার বোন শারমিন হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এই হত্যা মামলায় বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকত এবং টেকনাফ থানা তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপসহ নয়জনকে অভিযুক্ত করা হয়। হত্যা মামলা এবং পুলিশের মামলাগুলোরও তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব।
চার মাস তদন্তের পর লিয়াকত ও প্রদীপসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেন তদন্ত কর্মকর্তা র্যাবের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম।একইদিনে পুলিশের মামলাগুলোরও চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় র্যাব।
আদালত পুলিশের তিনটি মামলার ব্যাপারে চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে মেজর সিনহার সঙ্গী সাইদুল ও শিপ্রাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়।
২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালত হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র গ্রহণ করে। ২০২১ সালের জুলাই মাসে হত্যা মামলাযর বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। অভিযোগপত্রে সাক্ষী ছিলেন ৮৩ জন। তাদের মধ্যে ৬৫ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।