শুভ জন্মদিন ববিতা

অভিমান করে চলচ্চিত্র থেকে দূরে সরে আসছি

মাহমুদ সালেহীন খান

প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২১, ০২:৪৩ পিএম | আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২১, ০২:৪৫ পিএম

অভিনেত্রী ফরিদা আক্তার ববিতা

অভিনেত্রী ফরিদা আক্তার ববিতা

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী অভিনেত্রী ববিতা। যিনি চলচ্চিত্রের রুপালি পর্দায় মুগ্ধ এক কবিতা হয়ে আছেন। যার অভিনয়ের আলোয় উদ্ভাসিত ঢাকাই সিনেমা। ববিতার পুরো নাম ফরিদা আক্তার। ১৯৫৩ সালের ৩০ জুলাই  বাগেরহাট জেলায় জন্ম নেন তিনি। ‘সংসার’ ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু। মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ‘শেষ পর্যন্ত’। এ পর্যন্ত ৪০০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন। কিংবদন্তি এই নায়িকা স্বাধীন বাংলাদেশে সর্বপ্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর স্বীকৃতি লাভ করার গৌরব অর্জন করেন। আজ তার জন্মদিন। জন্মদিন উপলক্ষে তার সাথে হোয়াটসআপে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহমুদ সালেহীন খান।

শুভ জন্মদিন নায়িকা

শুভেচ্ছা তোমাকেও। 

কেমন আছেন এবং করোনাকাল কেমন কাটছে?

এখন পর্যন্ত সুস্থ আছি। বিষন্ন আর আতঙ্কে দিন কাটছে। আমি বাইরে বের হই না। এমনকি লিফটও ব্যবহার করি না। কারণ  সেখানে কাজের লোকজন যায়, তারা লিফট ব্যবহার করে। এর থেকে যতটা সাবধান থাকা যায় তাই করছি। বাড়ির ভেতরে কাজকর্ম ও ব্যায়াম করে মন ভালো রাখার চেষ্টা করছি। এছাড়া আমার বাসার ছাদবাগান পরিচর্যা করছি। নিয়মিত নামাজ পড়ছি।  চেষ্টা করছি সবসময় কোনো কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকতে। 

বোনদের সাথে নিয়মিত ভিডিও কলে কথা হচ্ছে। ছেলের সাথেও কথা হচ্ছে। এছাড়া পুরনো সিনেমা দেখে সময় কাটছে। সত্যজিৎ রায়সহ ভালো ভালো কিছু চলচ্চিত্রকারের ক্ল্যাসিক সিনেমাও দেখা হয়েছে। অবসর পেলে ফ্লোরে হাঁটাহাঁটি করি। এসব রুটিনই হয়ে গেছে। 


জন্মদিন কেমন কাটছে?

জন্মদিন নিয়ে আমার কখনো তেমন আগ্রহ ছিলো না। আমার মনটা খারাপ বছরে দুইবার ছেলের কাছে যেতাম। এখন তাও পারছি না। আমার পরিবারের অনেক কাছের মানুষকে করোনা কেড়ে নিয়েছে। চোখের সামনে তাদের মুখ যখন ভেসে ওঠে, তখন বুকের ভেতরটা হু হু করে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে জন্মদিনের আলাদা অনুভূতি কীভাবে কাজ করবে।

করোনা চেনা পৃথিবীর কতটা বদল ঘটিয়েছে? 

অনেক বদলে গেছে। যতই বলি ঠিক হয়ে যাবে, সেই আগের পৃথিবী ফিরে আসতে অনেক সময় লাগবে। নতুনভাবে সব কিছু রিসেট করতে হবে। অর্থনীতি থেকে শুরু করে প্রকৃতি। বেশি সমস্যা হবে পরের প্রজন্মের। আগের জীবনটা মনে হবে স্বপ্নের মতো। 

আমাদের দেশ কী ঘুরে দাঁড়াতে পারবে?  

হয়তো ঘুরে দাঁড়াতে পারব। সবাই মিলে চেষ্টা করতে হবে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য।

বহুদিন চলচ্চিত্র থেকে দূরে আছেন। যদিও এখনো বহু দর্শক আপনাকে পর্দায় দেখতে চায়। কিন্তু ববিতা কি আবারো ফিরবেন চলচ্চিত্রে?

আমি একটু অভিমান করে চলচ্চিত্র থেকে দূরে সরে আসছি। 


অভিমান কেন?

কারণ আমরা যেসমস্ত কাজ করে আসছি এতো বছর ধরে তাতো এখনো এই বয়সে করা সম্ভব না। আর যেনতেনও চরিত্রে যদি অভিনয় করতে বলা হয়, তাহলে ববিতা কী তাই করবে! বা আমরা যারা সিনিয়র শিল্পীরা আছি তাদেরকে যে চরিত্রে বলবে তাই করতে পারি? বরং তার চাইতে আমি মনে করি, দূরে সরে থাকাই ভালো। গল্পের নায়িকা মানেই  যে শুধু নাচ গান করবে, তরুণী হতে হবে তা কিন্তু না। অমিতাভ বচ্চন, রেখা তারা যে এখনো নিয়মিত অভিনয় করে যাচ্ছেন তারা কি যেনতেনও চরিত্রে অভিনয় করছেন? চরিত্র প্রধান গল্প থাকতে হবে। না থাকলে সেটা তৈরি করতে হবে। এরকম না হলেতো আমাদের আশা করে কোনো লাভ নেই। আর আমাদের প্রাধান্য দিয়ে এরকম চরিত্র তৈরি করলে অবশ্যই অভিনয়ে ফিরবো।

কতগুলো ছবিতে অভিনয় করেছেন এ পর্যন্ত?

৪০০ হবে। ছবির সংখ্যা আরো বাড়ত পারত। আমার ছেলে অসুখে পড়ায় অনেক ছবি করতে পারিনি। মা হওয়ার পর ওর লেখাপড়া, স্কুলে যাওয়া, পরীক্ষা দিতে গেলে স্কুলের সামনে গাড়িতে বসে থাকতাম। তখন ভুলে যেতাম আমি নায়িকা ববিতা, তখন আমি মা। ও পড়ালেখায় খুব ভালো ছিলো।

আপনার চোখে সেরা ১০ ছবি কী কী?

‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, ‘আলোর মিছিল’, ‘গোলাপি এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, ‘নয়নমণি’, ‘কসাই’, ‘লাঠিয়াল’, ‘বাঁদি  থেকে  বেগম’, ‘দহন’, ‘স্বরলিপি’।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh